শ্রীলঙ্কা–বাংলাদেশ: মাঝের ওভারগুলোয় লিটন–হৃদয়কে সূর্যকুমার হতে হবে
Published: 20th, September 2025 GMT
‘মিডল অর্ডারে তাদের একজন বলপ্রয়োগকারী লাগবে। খেয়াল করে দেখবেন, সূর্যকুমার ভারতের হয়ে এ কাজটা করে। মাঝের ওভারগুলোয় সে দারুণ স্ট্রাইক রেট এনে দেয়। আমার মনে হয় তারা মাঝের ওভারগুলোয় ভুগছে। মিডল অর্ডারে তাদের কাউকে প্রয়োজন, সেটা হতে পারেন লিটন কিংবা তাওহিদ হৃদয়।’
বাংলাদেশ দল নিয়ে কথাগুলো ভারতের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার ও বিশ্লেষক হার্শা ভোগলের। ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট খবরের পোর্টাল ‘ক্রিকবাজ’–এ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ম্যাচপূর্ব বিশ্লেষণে কথাগুলো বলেন হার্শা। এশিয়া কাপে সুপার ফোরে আজ দুবাইয়ে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
সবার আগে ভোগলের কথাগুলো একটু ভেঙে নেওয়া যাক। টি–টোয়েন্টিতে পাওয়ারপ্লের প্রথম ছয় ওভার এবং শেষ পাঁচ ওভারে এমনিতেই যেকোনো দল মারমুখী ব্যাটিং করে। ঝামেলা হয়ে যায় মাঝের ওভারগুলোয়। কারণ, তখন ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে সীমানায় পাঁচজন ফিল্ডার থাকতে পারেন। যে কারণে পাওয়ারপ্লেতে মাত্র দুজন ফিল্ডার সীমানায় থাকায় তখন হাত খুলে খেলা গেলেও মাঝের ওভারে সেটা সম্ভব হয় না যদি দলের মিডল অর্ডারে ‘ক্লিন হিটার’ এবং পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান না থাকেন।
হার্শা ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের উদাহরণ টেনেছেন। তাঁর যুক্তির পক্ষে সাক্ষ্য দেয় পরিসংখ্যান। গত দুই বছরে ভারতের মিডল অর্ডারে (৩ থেকে ৭ নম্বর) নেমে সূর্যর স্ট্রাইক রেট ১৫৩.                
      
				
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মনের অ্যালার্ম
সময়মতো ঘড়ির অ্যালার্ম বাজল। তবু কীভাবে যেন গভীর ঘুমে জড়িয়ে গেলাম। যেন শরীর নয়, পুরো পৃথিবী ঘুমাচ্ছে। আমি সেই ঘুমের ভারে চাপা পড়ে আছি।
বাইরে দমকা হাওয়া, ঝুমবৃষ্টি। জানালার কাচে শব্দ। ঘুমের মধ্যে মনে হলো, দূরের কোনো শহরে তুমুল ঝড়। সেখান থেকে ভেসে আসছে মৃদু ঝাপটা।
হঠাৎ শরীরে ঝাঁকুনি। চমকে উঠি। আতঙ্ক নিয়ে চোখ খুলে দেখি, ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাড়ে আটটা। হতবিহ্বলতার মধ্যে ঘড়ির কাঁটা যেন উপহাস করছে। বলছে, অফিসে পৌঁছানোর সময় কিন্তু সকাল নয়টা।
আধঘণ্টা! এত কম সময়ে কীভাবে সম্ভব? প্রতিদিন সময়মতো অফিসে ঢুকব, নিজের কাছে এ আমার প্রতিজ্ঞা। অথচ আজ বুঝি তা ভাঙতে চলেছে।
এমন সব দুর্ভাবনার মধ্যে একমুহূর্তে মনে হলো, কোনো অদৃশ্য আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে বিলম্বই অপরাধ আর শাস্তি দিতে হয় নিজেকেই। দিনভর অপরাধবোধই আমার দণ্ড।
তবু মন বলল, যা-ই ঘটুক, আগে অফিসে তো যাই। একঝটকায় উঠে পড়ি। কিন্তু আজ ঘড়ির কাঁটা যেন খুব দ্রুত ঘুরছে, আর আমি ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছি। নিজেকে প্রস্তুত করতে আজ বেশি সময় লাগছে।
বিছানার পাশে রাখা দুটো কৃত্রিম পা। এগুলোকে আবার প্রতিদিন নতুন করে শেখাতে হয় নিরাপদে হাঁটার নানা কৌশল। আজ ওরাও যেন আমার বিলম্বে লজ্জিত।
বছর দশেক আগের কথা। থাকি ঢাকার মোহাম্মদপুরে। অফিসে যাওয়া-আসা
সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। জানতাম, বৃষ্টির সকালে অটোরিকশা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তবু সেদিন এক অদ্ভুত বিশ্বাসে বেরিয়ে পড়ি।
বাসার সামনের রাস্তার পাশে দাঁড়াই। রাস্তায় জমা বৃষ্টির পানি ছিটিয়ে ছুটে যাচ্ছে যাত্রীভর্তি অটোরিকশা। মনে হলো, জগৎ আজ তাড়াহুড়ায় মত্ত। আর আমি সময়ের বাইরের কোনো পৃথিবীতে।
কয়েকজন চালক থামলেন। কিন্তু গন্তব্য শুনে একঝটকায় মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এই শহরে আমি যেন কোনো ভুল ঠিকানায় দাঁড়িয়ে। এখানে আমার অটোরিকশায় ওঠার অনুমতি নেই।
হঠাৎ এক রিকশাওয়ালা এলেন। ক্লান্ত চোখ, নির্লিপ্ত মুখ। বললাম, ‘মেইন রোড পর্যন্ত নিয়ে যাবেন?’
রিকশাচালক মুখে কিছু না বলে ইশারায় উঠতে বললেন। রিকশা চলতে লাগল। আমার মনে তাড়া। কিন্তু রিকশার চাকা ঘোরে ধীরে, কেমন বিশ্রী শব্দ করে।
কিছু দূর যেতেই রিকশার পেছনে প্রচণ্ড এক ধাক্কা। আমি ছিটকে পড়ি বৃষ্টিভেজা রাস্তায়। মুহূর্তের জন্য পৃথিবী থেমে গেল। চোখ খুলে দেখি, আকাশ ঘুরছে। আমার ক্রাচ দুটি দূরে পড়ে আছে; যেন আমার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন হয়েছে।
ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটা শুরু করি। প্রতিটি পা ফেলতে ফেলতে মনে হচ্ছে, কোনো প্রাচীর ভেদ করছি। মানুষজন সরে দাঁড়াচ্ছে। কেউ কেউ তাকাচ্ছে বিস্ময়ে। তাদের চোখে আমি কি মানুষ, নাকি যন্ত্র, জানি না। তবে জানি, আমি পথে আছি, লড়াইয়ে আছি। এখানে থামা মানেই পরাজয়।চারপাশে লোকজন ভিড় করেছে। কৌতূহল, করুণা, সহানুভূতি মিশে আছে তাঁদের চোখে। কেউ হাত বাড়াচ্ছেন, কেউ টেনে তুলছেন। তাঁদের টানাটানিতে ভারসাম্য হারিয়ে আবার পড়ে যাচ্ছি। মনে হলো, শরীরের ভেতরে কেউ হাসছে। অদৃশ্য, উপহাসমিশ্রিত হাসি।
ঠিক তখনই আমার সহযাত্রী সহকারী নিজেকে সামলে চলে এল। সে-ই কেবল জানে, কীভাবে, কোন কৌশলে আমাকে তুলতে হয়। ধীরে ধীরে উঠলাম। আশ্চর্য, শরীরের কোথাও ব্যথা নেই। এত জোরে ছিটকে পড়লাম, অথচ কিছুই হয়নি। ব্যথা না থাকাটাই যেন আরেক রকম ব্যথা।
সহকারী বলল, ‘চলুন, আজ আর অফিসে না যাই।’ আমি চুপ করে তাঁর মুখের দিকে তাকাই। পরাজিত সৈনিকের মতো সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হটতে চাইছে।
মনে হলো, এই বৃষ্টি, এই ধাক্কা—সবই যেন এক অদৃশ্য শক্তি। তারা জোট বেঁধেছে। আমাকে থামাতে চাইছে। কিন্তু আমি যদি থেমে যাই, তবে হেরে যাব। ভেতরে জেদ চেপে বসল। না, আমাকে যেতেই হবে।
ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটা শুরু করি। প্রতিটি পা ফেলতে ফেলতে মনে হচ্ছে, কোনো প্রাচীর ভেদ করছি। মানুষজন সরে দাঁড়াচ্ছে। কেউ কেউ তাকাচ্ছে বিস্ময়ে। তাদের চোখে আমি কি মানুষ, নাকি যন্ত্র, জানি না। তবে জানি, আমি পথে আছি, লড়াইয়ে আছি। এখানে থামা মানেই পরাজয়।
দিন শেষে বাসায় ফিরি। এবার শরীরজুড়ে ব্যথা টের পাই। কাঁধে, পিঠে, পাঁজরে, কোমরে, পায়ের অবশিষ্ট অংশে। হাতের আঙুল দিয়ে চেপে চেপে বুঝতে পারি, ব্যথাটা বাস্তব। কিন্তু সেই ব্যথার মধ্যেও অদ্ভুত এক প্রশান্তি। অফিস তো করতে পেরেছি। অদৃশ্য শক্তি ঠেকাতে পারেনি।কিছুটা দূরে, সেই রিকশাচালক নীরবে অপেক্ষা করছেন। তিনি এমনভাবে তাকিয়ে রইলেন, যেন আগেই জানতেন, আমি ফিরব।
আমি উঠলাম। রিকশা আবার চলতে লাগল। মনে হলো, সময় তার গতি ফিরে পেয়েছে। কিন্তু তা আমার সঙ্গে চলছে, নাকি বিপরীতে, বোঝা গেল না।
মূল রাস্তায় এসে অটোরিকশা নিলাম। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পথটা আজ খুবই অচেনা লাগছে। যেন কোনো নিরুদ্দেশ পথে অন্তহীন চলছি।
বৃষ্টির শব্দ মিলিয়ে গেল শহরের গর্জনে। কেবল ঘড়ির টিকটিক শব্দ বাজতে থাকল নিরবচ্ছিন্ন। তাকিয়ে দেখি, নয়টা পেরিয়ে গেছে। ইশ্, আজ আর বিলম্ব এড়ানো গেল না।
ঝড়ে পাখা ভাঙা পাখি হয়ে, ঝঞ্ঝার পথ পেরিয়ে অফিসে ঢুকি। সহকর্মীদের কেউ কেউ বলল, ‘গুড মর্নিং’। আমি স্মিত হেসে জবাব দিই। ডেস্কে বসে কম্পিউটার খুলে কাজ শুরু করি। কি-বোর্ডে আঙুল পড়ার শব্দ যেন বলতে থাকে, সব ঠিক আছে, কিছুই হয়নি। অল ইজ ওয়েল।
দিন শেষে বাসায় ফিরি। এবার শরীরজুড়ে ব্যথা টের পাই। কাঁধে, পিঠে, পাঁজরে, কোমরে, পায়ের অবশিষ্ট অংশে। হাতের আঙুল দিয়ে চেপে চেপে বুঝতে পারি, ব্যথাটা বাস্তব। কিন্তু সেই ব্যথার মধ্যেও অদ্ভুত এক প্রশান্তি। অফিস তো করতে পেরেছি। অদৃশ্য শক্তি ঠেকাতে পারেনি।
পরদিন সকালে আবার অ্যালার্ম বাজল। কিন্তু এবার শব্দটা ভিন্ন। যান্ত্রিক নয়, যেন দূর থেকে কেউ মোলায়েম কণ্ঠে ডেকে ডেকে বলছে, ‘ওঠো ওঠো, অফিসে যেতে হবে।’
জামাকাপড় পরে কৃত্রিম পা বেঁধে নিই। ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে শুরু করি। ঠক…ঠক…ঠক…শব্দে ভরে ওঠে ঘর। এই শব্দও একধরনের অ্যালার্ম। মনের মধ্যে এমন অ্যালার্ম সারাক্ষণ বাজে। পাঠককে খবর জানানোর তাড়না হয়ে।
সাইফুল ইসলাম: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমন্বিত বার্তা বিভাগ, প্রথম আলো