থাপ্পড় ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহাসড়কে টর্চলাইট জ্বালিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৩০, গাড়ি চলেনি
Published: 23rd, October 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাপ্পর দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি–সমর্থিত দুই গোষ্ঠীর লোকজন টর্চলাইট জ্বালিয়ে মহাসড়কে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। গতকাল বুধবার রাতে কুমিল্লা–সিলেট মহাসড়কের সুহিলপুরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রায় তিন ঘণ্টা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার সুহিলপুর পূর্বপাড়ার আওয়ামী লীগ–সমর্থিত উকিলের গোষ্ঠী ও বিএনপি–সমর্থিত আজিজ মিয়ার গোষ্ঠীর মধ্যে আগে থেকে বিরোধ চলে আসছে। চার থেকে পাঁচ দিন আগে নিজেদের মধ্যে তর্কের জেরে উকিলের গোষ্ঠীর সাবেক ইউপি সদস্য ও জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন একই গ্রামের আজিজ মিয়ার গোষ্ঠীর আক্তার মিয়াকে থাপ্পড় দেন। এ নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা চলতে থাকে।
গতকাল সন্ধ্যায় বিষয়টি মীমাংসার জন্য উভয় পক্ষ সুহিলপুর বাজারে সালিস বসে। কিন্তু সালিসে বিষয়টির কোনো সমাধান হয়নি। সালিসে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের লোকজন রামদা, ছুরি, বল্লম ও ইটপাটকেল নিয়ে টর্চলাইট জ্বালিয়ে কুমিল্লা–সিলেট মহাসড়কে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় এলাকাজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষের কারণে রাত সোয়া ৮টা থেকে রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত কুমিল্লা–সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
আরও পড়ুনমসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে টর্চলাইট জ্বালিয়ে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক১০ জুন ২০২৫খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেও সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি পুলিশ। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে রাত সোয়া ১১টায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। তাঁরা বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আরও পড়ুনব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতে ‘টর্চলাইট জ্বালিয়ে’ দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ইউএনও-ওসিসহ আহত ৩০০১ মে ২০২৫একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়ায় সাবেক ইউপি সদস্য সাদ্দাম হোসেন ও আক্তার মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
বিজয়ের পরদিনও চলে শিরোমণির ট্যাংকযুদ্ধ
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবরে মানুষ যখন বিজয় উল্লাসে ব্যস্ত, তখনো খুলনায় যুদ্ধ চলছিল।
খুলনার জাহানাবাদ সেনানিবাস এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমর স্মৃতিস্তম্ভের শিলালিপিতে লেখা আছে, ‘যৌথ বাহিনীকে খুলনার দিকে অগ্রসরে বাধা দেওয়ার জন্য পাকিস্তান বাহিনী শিরোমণি এলাকায় শক্ত অবস্থান নেয়। ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বরের পর যৌথ বাহিনী আবার ত্রিমুখী আক্রমণ করলে পাকিস্তান সেনাদের মনোবল ভেঙে যায়। ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী শিরোমনিতে চর্তুমুখী আক্রমণের মুখে পড়ে। সকাল ১০টা-বেলা ১১টার দিকে ব্রিগেডিয়ার হায়াতের নেতৃত্বে ৩ হাজার ৭০০ সেনা যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।’ এটি ‘শিরোমনি যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান (সপ্তম খণ্ড) বইয়ে বলা হয়েছে, শিরোমণি যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর আনুমানিক ২০০ জন নিহত এবং ২০০ জন আহত হয়। যৌথ বাহিনীর ২৫০-৩০০ জন শহীদ এবং ৩০০ জন আহত হন।
শিরোমণির যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সঙ্গে ছিলেন খুলনার বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম. রেজওয়ান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একাত্তরের নভেম্বরে তাঁরা সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর নিয়মিত গেরিলা আক্রমণ চালাতেন। ডিসেম্বরের শুরুতে মিত্রবাহিনী যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে। যশোর ক্যান্টনমেন্ট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। মেজর মহেন্দ্র সিংহের নেতৃত্বে একটি দল কলারোয়া থেকে তাঁদের চারজনকে সঙ্গে নেয় পথ দেখানোর জন্য। ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় মহেন্দ্র সিংহ তাঁর প্রশিক্ষক ছিলেন।
আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত একাত্তরের বিজয়গাথা বইয়ে ‘খুলনা’ শিরোনামে মানিক সাহার লেখায় বলা হয়েছে, যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পাকিস্তানি বাহিনী খুলনায় চলে আসে। আশপাশের আরও কিছু এলাকা থেকে এসে কৌশলগত দিক বিবেচনা করে যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশে শিরোমণি এলাকায় শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তোলে তারা। আর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী তখন খুলনার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১০ ডিসেম্বর শিরোমণির অদূরে ফুলতলার ১৪ মাইল এলাকায় ঘাঁটি স্থাপন করে মিত্রবাহিনী।
১০ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর গোলাগুলি হয়। তবে প্রবল যুদ্ধ শুরু হয় ১১ ডিসেম্বর সকাল থেকে। এই তথ্য জানিয়ে খুলনার বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম. রেজওয়ান বলেন, ১৩ ডিসেম্বর বিকেল পর্যন্ত চলে লড়াই। ওই দিন বিকেলের পর সারা রাত শিরোমণি থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাগুলির আওয়াজ না পেয়ে তারা ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়েছে বলে ধরে নেয় মিত্রবাহিনী। ১৪ ডিসেম্বর সকালে খুলনার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে মিত্রবাহিনী। মিত্র বাহিনীর বহরটি শিরোমণি বাদামতলা এলাকায় আসামাত্র পাকিস্তানি বাহিনীর ট্যাংক হামলার মুখে পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম. রেজওয়ান বলেন, ওই ঘটনার পর ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর এম এ মঞ্জুর ও মিত্রবাহিনীর রাজপুত ব্যাটালিয়নের প্রধান মেজর দলবীর সিংহের নেতৃত্বে আফিল গেট থেকে শুরু করে ফুলবাড়ি গেট, বিলডাকাতিয়ার শলুয়া, রংপুর, আড়ংঘাটা এবং ভৈরব নদের ওপারে ধুলগ্রাম, সিদ্দিপাশা, বারাকপুর, লাখোহাটি পর্যন্ত চারদিক থেকে পাকিস্তানি বাহিনীকে ঘিরে ফেলা হয়। তারপর শুরু হয় আক্রমণ। পাশাপাশি আকাশপথে আক্রমণও চলে।
১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে বাইসাইকেল নিয়ে যুদ্ধের এলাকা ঘুরতে বের হয়েছিলেন আনোয়ারুল কাদির। তিনি একজন শিক্ষাবিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এত মরদেহ পড়ে ছিল, যা চোখে দেখা যায় না। পুরো এলাকা ছিল লন্ডভন্ড। রাস্তায় একটু পরপর ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন পুঁতে রাখার কারণে মিত্রবাহিনীর ট্যাংকগুলো রাস্তার পাশের নালাসদৃশ নিচু জায়গা দিয়ে অগ্রসর হয়েছিল, সেই দাগ তখনো স্পষ্ট ছিল। আত্মসমর্পণের সময় শিরোমণির দিক থেকে খুলনার দিকে আসছিলেন মিত্রবাহিনীর সদস্যরা। আর পাকিস্তানি সেনারা ওই সময় শিরোমণির দিকে যাচ্ছিল। শীতের ওই সময় এলাকাবাসী মিত্রবাহিনীর দিকে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন। আর পাকিস্তানি সেনাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন।