রংপুরের তারাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায়কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে এই দম্পতির ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে অজ্ঞাতনাম আসামি করা হয়েছে।

নিহত দম্পতির বাড়ি তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামে। তাঁর বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় র‍্যাবে ও ছোট ছেলে রাজেশ খান্না চন্দ্র রায় পুলিশে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়িতে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজন থাকতেন। গতকাল রোববার সকালে নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, চায়নিজ কুড়াল দিয়ে যোগেশের মাথার পেছনে ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায়ের কপালে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

এ সম্পর্কে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় তাঁর বড় ছেলে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। তদন্তের স্বার্থে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।

মামলার বাদী শোভেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার মা–বাবা শেষ বয়সে ছিলেন, তবু তাঁদের এভাবে নৃশংসভাবে মেরে ফেলা হলো। এলাকার সবাই জানেন, কারা করেছে। এক বছর আগে গ্রামের শ্মশানকে ৮ শতক জমি দান করেন বাবা। ওই দান কিছু লোক মেনে নিতে পারেনি। এটাই কাল হয়েছে।’

পুলিশ জানায়, শনিবার রাত ৯টা ২২ মিনিটে ছোট ছেলে রাজেশের সঙ্গে কথা হয় যোগেশের। গতকাল সকালে দিনমজুর দীপক চন্দ্র রায় বাড়িতে কাজে এসে প্রধান ফটকে ডাকাডাকি করলে কেউ সাড়া দেননি। পরে প্রতিবেশীদের ডেকে মই বেয়ে প্রধান ফটকের ওপর দিয়ে ভেতরে ঢুকে খাবারঘরে যোগেশ চন্দ্রের ও রান্নাঘরে সুবর্ণা রায়ের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।

বাড়ি থেকে ভেসে আসছে কান্না

আজ সোমবার বেলা ১১টায় রহিমাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহত দুজনের মরদেহ সৎকার করার জন্য বাড়ির বাইরে কাঠখড়ি জোগাড় করা হচ্ছে। বাড়ি ভেতর থেকে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। স্বজন ও প্রতিবেশীরা জড়ো হয়েছেন। সৎকারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত আছেন।

এ সময় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আলী হোসেন বলেন, ‘নতুন ইউএনওকে রোববার ফুল দিয়ে বরণ করা জন্য আমরা উপজেলায় আসি। সেখানে যোগেশের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিনই তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। বিজয়ের মাসে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে হত্যা করা লজ্জাজনক। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে, না হলে কঠোর আন্দোলন হবে।’

ইউএনও মোনাব্বার হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্রের বাড়িতে ঘুরে এসেছি। তাঁর লাশ এখনো আসেনি। মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।’

আরও পড়ুনপরোপকারী দম্পতির এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী১৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের নতুন জাতীয় প্রতিরক্ষানীতির প্রশংসায় রাশিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলকে স্বাগত জানিয়েছে ক্রেমলিন। গতকাল রোববার ক্রেমলিন থেকে বলা হয়, এটি মূলত রাশিয়ার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

মস্কো এই প্রথম শীতল যুদ্ধ সময়ের প্রবল প্রতিপক্ষের কোনো জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলের এত প্রশংসা করল।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গিকে ‘নমনীয় বাস্তববাদ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

এ ছাড়া সেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে ১৯ শতকের ‘মনরো ডকট্রিন’ বা মনরো নীতি পুনর্জীবিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, ওই নীতিতে পশ্চিম গোলার্ধকে ওয়াশিংটনের প্রভাবক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

অর্থাৎ পশ্চিম গোলার্ধ (উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা) যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাববলয়ে থাকবে এবং ইউরোপীয় শক্তি সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইউরোপ ‘সভ্যতার উচ্ছেদ’–এর মুখে রয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান যুক্তরাষ্ট্রের ‘মূল স্বার্থের’ একটি এবং ওয়াশিংটন রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘যে সামঞ্জস্য আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা অনেকভাবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।’

মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বৈশ্বিক রাজনীতির মূল ভিত্তি সম্পর্কে এমন প্রকাশ্য ও পূর্ণাঙ্গ মতৈক্য বিরল।

তবে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র থেকে পারমাণবিক অস্ত্র রাশিয়ায় ফেরত আনার বিষয়ে এবং ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর দুদেশ ঘনিষ্ঠভাবে পরস্পরকে সহযোগিতা করেছিল।

ওয়াশিংটন ও মস্কো উভয়ের নজর চীনের দিকে

রাশিয়ার ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ এবং ২০২২ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে মস্কোকে এক আগ্রাসন বা হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা যুদ্ধের মাধ্যমে শীতল যুদ্ধ–পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

কিন্তু এবার রাশিয়াকে সরাসরি হুমকি হিসেবে বর্ণনা না করে বরং মস্কোর সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীলতা–সংক্রান্ত সহযোগিতার আহ্বান একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন পেসকভ।

ট্রাম্পের জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে ‘অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক সংঘর্ষের মূল ক্ষেত্রগুলোর একটি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নীতিতে বলা হয়েছে, তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা হবে।

আরও পড়ুনমস্কো–ওয়াশিংটনের হটলাইন এখন আর চালু নেই: ক্রেমলিন২০ নভেম্বর ২০২৪

ইউক্রেনে যুদ্ধের জেরে পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর মস্কো এশিয়া, বিশেষ করে চীনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। আর ইউরোপ রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নিজেদের নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করেছে।

গত মার্চে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি নিজে, একজন ইতিহাসের শিক্ষার্থী হিসেবে, যা কিছু দেখেছি—প্রথমেই আমাদের যা শেখানো হয়, তা হলো রাশিয়া ও চীন একত্র হোক, এটা আপনি চাইতে পারেন না।’

আরও পড়ুনট্রাম্প আসলে ইউরোপের পিঠে ছুরি মেরেছেন২৮ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ