অল্প বয়সে বিয়ে, ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে ফ্রিল্যান্সার তানিয়ার মাসিক আয় লাখ টাকা
Published: 8th, December 2025 GMT
মাত্র ১৪ বছর বয়স। যে বয়সে কিশোরীরা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে দুরন্তপনায় মেতে থাকে, সে বয়সেই বাল্যবিবাহের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল তানিয়া নাসরিনকে। অল্প বয়সে সংসারের ভার, এরপর কোলজুড়ে আসে এক ছেলে ও এক মেয়ে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই সংসারে প্রবেশ করায় চাকরি করার কোনো যোগ্যতা বা সুযোগ কোনোটাই ছিল না তাঁর। এর মধ্যেই সংসারে শুরু হয় তীব্র অর্থনৈতিক টানাপোড়েন।
সাধারণ কোনো গল্প হলে এখানেই হয়তো সমাপ্তি ঘটত। কিন্তু তানিয়া নাসরিন হার মানতে নারাজ। সেই কঠিন সময় পাড়ি দিয়ে তানিয়া আজ একজন সফল ডিজিটাল ডিজাইনার। মাসে আয় করছেন হাজার ডলারের বেশি। একজন গৃহিণী থেকে শুরু করলেন, তারপর পড়াশোনা শেষ করে হলেন সফল ফ্রিল্যান্সার। তানিয়া নাসরিনের এই যাত্রাপথ কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না।
ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পতানিয়া নাসরিনের বাবা আবদুল খালেক ছিলেন একজন প্রবাসী, থাকতেন দুবাইয়ে। মা রাশেদা বেগম, গৃহিণী। ২০০১ সালে প্রবাসেই তাঁর বাবার ক্যানসার ধরা পড়ে। তখনই শুরু হয় তানিয়ার বিয়ে নিয়ে আলোচনা। সেই অল্প বয়সেই মেয়েকে বিয়ে দিতে হয়। বিয়ের দেড় মাস পর তানিয়ার বাবা মারা যান।
বাবাহারা অল্প বয়সি মেয়ের জীবনে আসে শূন্যতা। তানিয়ার স্বামীর নাম জাহিদ হাসান, পেশায় একজন ব্যাবসায়ী। জাহিদ তানিয়াকে বললেন, ‘তুমি চাইলে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারো।’ তখন ২০০২ সাল প্রথম সন্তান জেবা ফারিহা এসেছে ঘরে। সেভাবে পড়াশোনাই আর করতে পারেননি। সংসারে ব্যস্ত সময় কাটে তানিয়ার।
২০০৭ সালেই সংসারে আসে দ্বিতীয় সন্তান জুবায়ের আহম্মেদ। সে বছরেই তানিয়া আবিষ্কার করেন নিজেকে। সন্তান মানুষ করার পাশাপাশি নিজেকে কিছু করতে হবে। আর কিছু করতে গেলে পড়াশোনাটা আগে শুরু করতে হবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। যেহেতু স্বামীর বাসা ঢাকার লালবাগ, সেখানেই ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে তানিয়া ভর্তি হন। এরপর সংসার, বাচ্চা সামলানো আর পড়াশোনা।এরপর ভর্তি হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি প্রোগ্রামে। এইচএসসি পাস করে শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্টগ্র্যাজুয়েট কলেজ থেকে বিবিএ শেষ করেন। তানিয়ার গ্রামের বাড়ি ঢাকার দোহার উপজেলায়। দুই ভাই ও দুই বোন। তিনিই সবার ছোট ছোট।
সংসারের অভাব-অনটনের দিনগুলোতে তানিয়া খুঁজছিলেন এমন কোনো পথ, যা তাঁকে ঘরের বাইরে না গিয়েও আয়ের সুযোগ দেবে। একদিন এক বান্ধবীর ভাবির কাছ থেকে জানতে পারেন গ্রাফিক ডিজাইনের কথা। জানতে পারেন, এ কাজ শিখে ঘরে বসেই সম্মানজনক আয় করা সম্ভব। সেই ভাবি নিজেও তখন ঘরে বসে ভালো আয় করছিলেন। অন্যের সাফল্য দেখে নিজের মনেও সাহস সঞ্চার করেন তানিয়া। সংকল্প করেন তিনিও পারবেন।
তানিয়া নাসরিন মনে করেন, বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া নয়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ
অসাধারণ বোলিংই বদলে দিল ম্যাচের গল্প। মাত্র ৮০ রানে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলের ইনিংস গুটিয়ে দিয়ে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে তিন উইকেটের দারুণ জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। এক ওভার হাতে রেখেই লক্ষ্য স্পর্শ করে সিরিজে সমতা ফেরাল স্বাগতিক কিশোরীরা।
টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া পাকিস্তানের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। দলীয় স্কোর ৭ রানে পৌঁছাতেই ফিরতে হয় ওপেনার অতশী মজুমদারকে। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ৩১ রানের প্রতিরোধ গড়লেও স্বস্তি টেকেনি বেশিক্ষণ। জারিন তাসনিম লাবণ্যের সঠিক লাইন-লেংথে ভেঙে যায় জুটি। পরে হাবিবা ইসলাম পিংকির গতিময় ও ধারালো বোলিংয়ে আবারও চাপে পড়ে সফরকারীরা।
আরো পড়ুন:
ভালোবাসা, গর্বে মোড়ানো মুশফিকের ‘একশ’ টেস্ট
বিসিবির নারী বিভাগের প্রধান হলেন রুবাবা দৌলা
পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ২৮ রান আসে কোমাল খানের ব্যাট থেকে। জুফিশান আয়াজ ও রাভাইল ফারহান দলের সংগ্রহে যোগ করেন যথাক্রমে ১৭ ও ১৫ রান। কিন্তু একাই চার উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং ধস নামানোর মূল নায়িকায় পরিণত হন হাবিবা পিংকি।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও কিন্তু খুব একটা মসৃণ পথ পায়নি বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে মাত্র ৪ রান ওঠার আগেই প্রথম ধাক্কা। এরপর ২৭ রানের জুটি স্বস্তি ফেরালেও দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে ৩৬ রানে ৪ উইকেটের পরিস্থিতিতে চাপেই ছিল স্বাগতিকরা।
তবে এক প্রান্ত বাঁচিয়ে রাখলেন সুবর্ণা। পরিস্থিতির দাবি বুঝে শান্ত মাথায় ৩৮ বলে ৩২ রানের মূল্যবান ইনিংস খেললেন তিনি। আর ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন শেষ দিকে সাদিয়া আক্তার। টানা দুই বলে দুটো চার মেরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন এই তরুণী।
এই জয়ে দুই দলের সিরিজ এখন ১-১ সমতায়। আগামী ম্যাচে তাই দেখা যাবে রোমাঞ্চকর সিরিজ নির্ধারণী লড়াই।
ঢাকা/আমিনুল