সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাটাই মূল চ্যালেঞ্জ
Published: 8th, December 2025 GMT
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ৮ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়েই দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী যাত্রায় প্রবেশ করবে। গতকাল রোববার নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে ভোট গ্রহণের সময়সীমা এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এসেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে ভোট শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল সব মহলেই। ইসির সিদ্ধান্তে সেই সংশয় অনেকখানি কাটল বলেই আমরা মনে করি।
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার পরিষ্কার করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে অনেক আগেই নির্দেশ দেন। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস, আইনবিধি সংস্কার, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনসহ গুরুত্বপূর্ণ ও বড় কাজগুলো শেষ করেছে। এ ছাড়া নির্বাচনসংক্রান্ত কেনাকাটা, পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধন শেষ করেছে। বর্তমানে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধনের কাজ চলছে।
সামগ্রিক বিবেচনায় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি সন্তোষজনক। তবে অভিজ্ঞতা বলে, নির্বাচন কমিশন কতটা প্রস্তুতি নিতে পেরেছে, তার মূল পরীক্ষাটা শুরু হবে তফসিল ঘোষণার পর। আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে আচরণবিধি লঙ্ঘন, রাজনৈতিক সহিংসতা, কালোটাকা, ক্ষমতা ও পেশিশক্তির ব্যবহার খুব সাধারণ একটি প্রবণতা। আচরণবিধি মেনে সব প্রার্থীই যাতে প্রচারণার জন্য সমান সুযোগ পান, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র শিথিলতা এলে ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠতে পারে, আবার নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
বিগত সরকারের আমলে পরপর তিনটি অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত নির্বাচনের কারণে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জন–আস্থা তলানিতে এসে নেমেছিল। ফলে বর্তমান ইসির সামনে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও নিরপেক্ষতা প্রমাণের গুরুদায়িত্ব এসে পড়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ বা আরপিও সংস্কারের মাধ্যমে ইসি আগের চেয়ে অধিকতর ক্ষমতায়িত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা আশা করি, প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগে ইসি দলমতের ঊর্ধ্বে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে।
নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নয়ন। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল, পুলিশের সক্রিয়তা এখনো আগের অবস্থানে ফিরে আসেনি। অভ্যুত্থানের সময় জেল ভেঙে ও পরবর্তীকালে জামিনে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হতে পারেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা সরকারকে শুরু থেকেই সতর্ক করে আসছিলেন। এ ছাড়া থানা, কারাগার থেকে চুরি হয়ে যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের বড় একটি অংশই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের আরও কিছু এলাকায় প্রকাশ্যে লক্ষ্যবস্তু করে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ফলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে জোরালো অভিযান পরিচালনা না করা হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকলে ভোটারদের একটা অংশ ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত হতে পারে।
শুধু সরকার ও নির্বাচন কমিশন নয়, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তফসিলের আগেই কোথাও কোথাও যেভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন, সেটা মোটেই কাম্য নয়। বাংলাদেশ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। দেশকে গণতান্ত্রিক পথে নিয়ে যেতে অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজসহ সব অংশীজনকেই যথাযথ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক র জন য সরক র তফস ল
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে নদীবন্দরের সীমানা নিয়ে উত্তেজনা, বিক্ষোভে পিছু হটল বিআইডব্লিউটিএ
কক্সবাজার শহরে নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আজ রোববার দুপুরে শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তরাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে পিছু হটেন বিআইডব্লিউটিএর (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ) কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ কস্তুরাঘাট এলাকায় নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা আসবেন—এমন খবরেই সকাল থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হতে থাকেন। সকাল ৯টা থেকে বদরমোকাম, কস্তুরাঘাট ও পেশকারপাড়ার লোকজন গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ শুরু করেন। এতে ওই এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে একই জায়গায় কয়েক শ নারী-পুরুষ এক হয়ে মানববন্ধন করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা কস্তুরাঘাট এলাকায় পৌঁছান। এরপর উত্তেজনা আরও বাড়ে। শেষ পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণের কাজ বন্ধ করেই ফিরে যায় বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর বাঁকখালী নদীর ওই অংশে উচ্ছেদ অভিযানে ৪৯৬টি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে প্রায় ৬৩ একর জমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার জমি আবার দখলের ঝুঁকি থাকায় কাঁটাতারের বেড়া ও সীমানা পিলার দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ।
যা বলছেন বিক্ষোভকারীরা
অবরোধকারীদের দাবি, উচ্ছেদ হওয়া স্থানের মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জমিও রয়েছে। পারুল আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘আমাদের খতিয়ান আছে, খাজনাও দিচ্ছি। ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বা আলোচনা না করে ঘরবাড়ি ভাঙা ও কাঁটাতার দেওয়া চলবে না।’
সাবিনা ইয়াছমিন নামের আরেক নারী বলেন, অনেক পাকা ভবন যখন তৈরি হলো, তখন কেউ থামাননি। এখন হঠাৎ উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এ জায়গায় স্থায়ী কোনো অবকাঠামো হতে দেবেন না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের এ মানববন্ধনে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। তাঁদের একজন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাসিমা আকতার। তিনি বলেন, বাঁকখালী নদীর দখল নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পৃথক তিনটি মামলা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ নিয়েও হাইকোর্টে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না করে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে জায়গাজমিতে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা অন্যায়। আলোচনার মাধ্যমে সংকটের নিরসন না করলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
কর্মসূচিতে থাকা জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক ও আইনজীবী মো. ইসমাইল বলেন, বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ করা জমিতে অসংখ্য মানুষের খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তিনিসহ ৭৭ জন মামলা করেছেন।