জনমত জরিপে প্রায় ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, ইসলামি আইন প্রবর্তন করলে এর ফল ভালো হবে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সমাজে এমন মনোভঙ্গি তৈরি হয়েছে যে ইসলামি আইনে মুক্তি নিহিত। এ জনমানসের পরিবর্তন একক কারণে ঘটেনি। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো গণতন্ত্রহীনতা, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসনের অভাব। বিদ্যমান রাজনীতির ভেতর মানুষ শুভ বা কল্যাণের ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছে না, যা মানুষের ভেতর আশাহীনতা তৈরি করে। মানুষ জাগতিক ব্যবস্থার চেয়ে পারলৌকিক ব্যবস্থায় মুক্তি খুঁজতে চাইছে। মোদ্দাকথা, দুর্বল রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা ইসলামি আইনের প্রয়োজনীয়তা সামনে আনছে। বিন্নি ধান লাগিয়ে আতপ চাল আশা করা যায় না। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র বিগত বছরগুলোতে সেই পরিক্ষেত্র তৈরি করেছে।

রাষ্ট্র একটি জাগতিক প্রতিষ্ঠান। এর পরিচালনা ব্যবস্থা ও আইনি পরিকাঠামোর বিশ্বজনীন মান দাঁড়িয়ে গেছে। আর তা হলো গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্রেই মুক্তি। গণতন্ত্রের চিন্তা ও চর্চা এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সব ধর্ম, মত, জেন্ডার, বর্ণ ও সংস্কৃতিকে মাথায় রেখে আইন প্রণয়ন করা হয়, যাতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠিত হয়।

বর্তমান পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান সুদৃঢ় হচ্ছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতি জনগণের সমর্থন বাড়ছে। এ জরিপে দেখা গেছে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী প্রায় ৭৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রভাব বেড়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার কারণে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী–সমর্থক জেল ও জুলুমের শিকার হয়েছেন। শেখ হাসিনার নিপীড়নমূলক শাসনের প্রতিক্রিয়ায় ধর্মীয় বোধ ও ধর্মসংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সংযুক্তি বেড়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা এবং সমাজে ধর্মীয় কার্যক্রমের পরিধি বেড়েছে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্বাসের নেটওয়ার্ক ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা, জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক তৎপরতা অবারিত না হওয়া এবং ১৪–দলীয় জোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ সুযোগ পাচ্ছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অপশাসন ও ব্যর্থতা মানুষের ভেতর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বিষয়ে সম্মতি উৎপাদন করছে।

খান মো.

রবিউল আলম, যোগাযোগ-পেশাজীবী; শিক্ষক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণতন ত র র জন ত ক ব যবস থ ইসল ম দলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনা দেশে বাকশাল কায়েম করেছিলেন: সালাহউদ্দিন আহমদ

গণতন্ত্রের মুখোশের শেখ হাসিনা এই দেশে বাকশাল কায়েম করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, নামমাত্র বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা চালু থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সবাই জানেন, গণতন্ত্রের মুখোশে শেখ হাসিনা এই দেশে বাকশাল কায়েম করেছিলেন। একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে সেই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে।

আজ শনিবার দুপুরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলামনগরে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত এক নারী সমাবেশে এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি নির্বাসিত জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছি প্রায় ১০ বছর। আপনারা জানেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুম করেছিলেন। আপনারা নামাজ পড়ে, রোজা রেখে দোয়া করেছিলেন বলেই আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আজ জাতীয় রাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছি। আশা করি এ সপ্তাহের মধ্যেই আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে এই ঐতিহাসিক বাংলাদেশের পরিবর্তনের সূচনাকারী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যাঁরা এখনো আওয়ামী লীগের সমর্থন করেন, তাঁদের কী যুক্তি আছে সমর্থন করার, আমি জানি না। যে আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং তাঁদের মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরা রক্ষা পাওয়ার জন্য সহায়–সম্পদ নিয়ে, জীবন নিয়ে পালিয়ে গেছেন, সে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা কি উচিত? আমি চাই, তাঁরা গণতন্ত্রের পথে ফেরত আসুন।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করব। একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করব। এ দেশের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের প্রত্যাশা, এ দেশের জনমানুষের প্রত্যাশা বাংলাদেশে সত্যিকারভাবে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সরকার প্রতিষ্ঠা হোক।’

বেহেশতের লোভ দেখিয়ে যাঁরা ভোটের কথা বলেন, তাঁদের কাছ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আজ ধর্মের দোহাই দিয়ে সরলমনা মা-বোনদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অমুক মার্কায় ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া যাবে।’

কয়েক দিনের মধ্যে আগামী নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী দিনে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার হবে এ দেশের মানুষের মুক্তির সনদ, গণতন্ত্রের মুক্তির সনদ, বাংলাদেশের অধিকার বাস্তবায়নের সনদ।

আজ শনিবার সালাহউদ্দিন আহমদ চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল, কাকারা ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি অন্তত আটটি পথসভায় বক্তব্য দেন। এসব পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমদ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা, চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক এম মোবারক আলী। বিকেল চারটার দিকে তিনি ২০১৩ সালে নিহত ছাত্রদল কর্মী মোহাম্মদ মিজানের কবর জিয়ারত করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তাদের দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে: তারেক রহমান 
  • রাজনৈতিক চাহিদা থাকলে আইন দিয়ে অবৈধ আয় বন্ধ হবে না: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
  • গণতন্ত্রের স্বার্থে জাপাকে নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে: জি এম কাদের
  • বেগম জিয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিলেন:টুকু
  • শেখ হাসিনা দেশে বাকশাল কায়েম করেছিলেন: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • সবকিছু প্রস্তুত করা হচ্ছে, তারেক রহমান সহসাই ফিরবেন: আমীর খসরু
  • আগামী ৩ মাসের জন্য গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হক
  • গণতন্ত্রবিরোধী পরাজিত শক্তির যেন আর পুনরুত্থান না ঘটে: তারেক রহমান
  • সেরে উঠুন বাংলাদেশ এই প্রার্থনা করি : মান্নান