বিমোহিত করছে শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের শাপলা
Published: 8th, December 2025 GMT
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। এই উপজেলার হাইল হাওরের পশ্চিম প্রান্তে গোপালা নদীর আশপাশের জলাশয়ে ফুটেছে অগণিত গোলাপী শাপলা। এই ফুলের মায়াবি হাতছানিতে বিমোহিত পর্যটক। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিল ও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগে শীতের এই মৌসুমে ছুটে আসছেন তারা।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মির্জাপুর ইউনিয়নের পূর্ব পাশে হাইল হাওরের অবস্থান। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রতিবছরই শাপলা ফোটে। বর্ষা থেকে শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত বিলটিতে শাপলা থাকে। প্রচার-প্রচারণার অভাবে এর সৌন্দর্য সাধারণের দৃষ্টিগোচর হয়নি এতদিন। এবার কয়েকজন ব্লগার ছবিসহ তথ্য প্রকাশ করলে মুহূর্তেই জনপ্রিয়তা পায় স্থানটি।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ জারি
বালিখলা বাজারে মাছের সংকট, বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে
এলাকাবাসী জানান, হাইল হাওরের হাজার গোলাপী শাপলা ভোরের প্রথম আলোয় যখন একসঙ্গে ফোটে তখন পুরো এলাকাজুড়ে নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এসময় ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন সবাই। দুপুরের দিকে ফুল কিছুটা নিস্তেজ হলেও বিকেলে আবার জলাভূমিতে মনোরম মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয় শাপলা। সেই দৃশ্যই দেখতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের পদচারণায় মুখর থাকছে হাওর ও হাওর পাড়ের গ্রামীণ সড়ক।
সিলেট শহর থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা মো.
এলাকার বাসিন্দা মিছলু আহমদ চৌধুরী বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাপলা বিলের ছবি ভাইরাল হওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা গত কয়েকদিনে দ্রুত বেড়েছে। আগে এখানে কেউ আসত না, এখন প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীরা আমাদের এলাকায় আসছেন এবং নৌকায় ঘুরে শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। আমাদের প্রত্যান্ত এলাকায় এতো মানুষের আগমন ভালোই লাগে। প্রতি বছরই বর্ষার শেষে এভাবেই বিস্তীর্ণ এলাকায় শাপলা ফোটে। সেটি শুষ্ক মৌসুমেও থাকে।”
তিনি বলেন, “মির্জাপুর বাজার থেকে হাওড় পাড়ের গ্রামীন সড়কটি যদি উন্নত করা যায়, তাহলে এই জায়গাটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসেবে প্রকাশ পাবে। এখানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস।”
শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে শাপলা তুলে ফেসবুকে অনেকেই পোস্ট করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতিপ্রেমী ও সৌখিন ফটোগ্রাফার তারিক হাসান। তিনি নিজের ফেসবুকের টাইমলাইনে একটি পোস্ট করে বলেন, ‘আচ্ছা রে, তোমরা যে শাপলা বিলে গিয়ে ইচ্ছা মতো ফুল তুলে আনো, এইগুলা এনে কাকে দাও? এটা কোন কালচার তোমাদের যে যেখানেই যাও সব উজাড় করে দাও পঙ্গপালের মতো? তোমাদের হাতে কাশফুল নিরাপদ না, শাপলাফুল নিরাপদ না কোন কিছুই নিরাপদ না!”
মির্জপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য লুৎফুর রহমান বলেন, “প্রচার না থাকায় আগে এখানে তেমন মানুষ আসত না। এখন দূর-দূরান্ত থেকে শাপলার সৌন্দর্য দেখতে মানুষ আসেন। বিনোদনের জন্য দারুণ একটি স্থান তৈরি হয়েছে। অনেকেই পরিবার নিয়ে গোলাপি শাপলা দেখতে আসছেন দেখে ভালো লাগছে।”
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, “মির্জাপুরের গোলাপী শাপলার বিল এখন দেশ-বিদেশের পর্যটকের আকর্ষণ। প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। এখানে পর্যটনের সম্ভাবনা অনেক। প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।”
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ওর শ পল ফ ল পর যটন পর যটক
এছাড়াও পড়ুন:
কিশোরগঞ্জ-১: বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত চার নেতা এক মঞ্চে, একসঙ্গে বিক্ষোভ
কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত চার নেতা এক মঞ্চে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যার দিকে প্রথমে পৃথক স্থানে সমাবেশ করেন তাঁরা। পরে একত্র হয়ে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন ওই চার নেতা।
গত বৃহস্পতিবার এ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দেয় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামকে। প্রথম দফায় মনোনয়ন ঘোষণার সময় আসনটি ফাঁকা রেখেছিল বিএনপি। এ আসনে অন্তত আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সবার প্রত্যাশা ভঙ্গ করে মাজহারুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতার বাড়িতে গিয়ে সহযোগিতা চান। তবে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি। অন্যদিকে তাঁর মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে আসছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা।
গতকাল সন্ধ্যায় শহরের স্টেশন রোডে নিজ কার্যালয়ে সমাবেশ করেন মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রেজাউল করিম খান (চুন্নু)। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম। একই সময়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে সমাবেশ করেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ (ভিপি সোহেল)। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রুহুল হোসাইন।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামকে ‘অযোগ্য’ আখ্যায়িত করেন বক্তারা। একই সঙ্গে তাঁর মনোনয়নের জন্য জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমকে দায়ী করেন। তাঁকে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ বলেও উল্লেখ করা হয়। অবিলম্বে মনোনয়ন বাতিল করে ‘যোগ্য ও ত্যাগী’ নেতাকে মনোনীত করার দাবি তোলেন তাঁরা। সমাবেশে রেজাউল করিম খান বলেন, ‘এটা আমার শেষ নির্বাচন। কাজেই এই নির্বাচনে অবশ্যই অংশ নেব।’
এ আসনে অন্তত আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন মাজহারুল ইসলাম।সমাবেশ শেষে রেজাউল করিম খান, রুহুল হোসাইন, শরিফুল ইসলাম ও খালেদ সাইফুল্লাহ—এই চার নেতা এক রিকশায় চড়ে শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। মিছিলে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম ও মনোনীত প্রার্থী মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়া হয়। পরে স্টেশন রোড এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বড় দলে অনেক প্রার্থী থাকাটাই স্বাভাবিক। সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। আমার প্রতি দলের আস্থা আছে বলেই মনোনয়ন দিয়েছে। রাজনীতির শিষ্টাচার ও শালীনতা বজায় রাখা উচিত।’
জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেন, ‘আমি মনে করি, দল যোগ্য লোককেই মনোনয়ন দিয়েছে। সবাইকে শান্ত থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর জন্য কাজ করা উচিত। এমন কিছু করা ঠিক নয়, যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, দেশনেত্রী এখন অসুস্থ। আন্দোলন-সংগ্রাম রেখে তাঁর জন্য দোয়া করা উচিত।’