পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনের প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস তালোন বলেছেন, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ঘটানো অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সরকার ও দেশের সশস্ত্র বাহিনী এ চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। অভ্যুত্থানচেষ্টায় দায়ী সবাইকে শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট তালোন।

গতকাল রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় দেওয়া এক ভাষণে এ কথা বলেন প্রেসিডেন্ট তালোন। বেনিনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম প্রেসিডেন্টের ভাষণ প্রচার করে।

দেশটির সবচেয়ে বড় শহর কতনোউয়ে গোলাগুলির প্রায় ১২ ঘণ্টা পর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হয়ে প্রেসিডেন্ট তালোন অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার ঘোষণা দেন। এর আগে একদল সেনা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হয়ে অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন। বলেন, তাঁরা একত্রে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্যাট্রিস তালোন আর প্রেসিডেন্ট থাকছেন না। সেনাদলটি নিজেদের মিলিটারি ‘কমিটি ফর রিফাউন্ডেশন (সিএমআর)’ হিসেবে পরিচয় দেয়।

ভাষণে প্রেসিডেন্ট তালোন বলেন, সরকারের প্রতি অনুগত বাহিনীর দ্রুত তৎপরতায় এই দুঃসাহসিকদের প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য শাস্তি পেতেই হবে।

বেনিনের সামরিক ও নিরাপত্তা সূত্রগুলোর বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি জানিয়েছে, অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টায় গতকাল সন্ধ্যায় দেশটিতে ডজনখানেক সেনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একটি সূত্র এএফপিকে জানান, গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোট ১৩ জনকে। আরেকজন জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সাবেক সেনাসদস্য। অন্যরা সেনাবাহিনীতে কর্মরত।

১০ বছর ধরে বেনিনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্যাট্রিস তালোন। আগামী এপ্রিলে তাঁর ক্ষমতা ছাড়ার কথা। ওই সময় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি।

আরও পড়ুনবেনিনে প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের দাবি একদল সেনার, সরকারের অস্বীকার১৬ ঘণ্টা আগে

এ পরিস্থিতিতে বেনিনে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা ছিল এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক শাসনের জন্য সর্বশেষ হুমকি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সামরিক বাহিনী বেনিনের প্রতিবেশী নাইজার ও বুরকিনা ফাসোর পাশাপাশি মালি ও গিনিতে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নিয়েছে। গত মাসে গিনি বিসাউয়েও সেনা–অভ্যুত্থান ঘটেছে।

আরও পড়ুনগিনি-বিসাউয়ে ক্ষমতা দখল করল সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্ট গ্রেপ্তার২৭ নভেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে প্রাণঘাতী গোলাগুলি, নিহত ৪

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অন্যতম প্রধান সীমান্ত ক্রসিংয়ে রাতভর গোলাগুলির ঘটনায় চার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তানের এক কর্মকর্তা আজ শনিবার এ তথ্য দিয়েছেন।

গত অক্টোবরে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়েছিল। এবার অস্ত্রবিরতি চলার মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।

আফগানিস্তানের দক্ষিণে স্পিন বোলডাক অঞ্চলের গভর্নর আবদুল করিম জাহাদ এএফপিকে বলেন, সংঘর্ষে আরও চারজন আহত হয়েছেন।

পাকিস্তানের সীমান্ত শহর চামানের স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, হালকা আহত হওয়া তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে চামান ও স্পিন বোলডাক সীমান্তে ‘বিনা উসকানিতে’ হামলার অভিযোগ এনেছে। অথচ অক্টোবরের সংঘর্ষের পর দুই দেশই একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছিল।

গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে আজ রাতেই কান্দাহারের স্পিন বোলডাক অঞ্চলে আফগানিস্তানের ওপর হামলা শুরু করে পাকিস্তান। এতে ইসলামিক আমিরাতের (আফগানিস্তান) বাহিনী জবাব দিতে বাধ্য হয়।’

গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে আজ রাতেই কান্দাহারের স্পিন বোলডাক অঞ্চলে আফগানিস্তানের ওপর হামলা শুরু করে পাকিস্তান। এতে ইসলামিক আমিরাতের (আফগানিস্তান) বাহিনী জবাব দিতে বাধ্য হয়।’

তবে পাকিস্তান বলছে, আফগানিস্তানই প্রথমে গুলি চালিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র মোশাররফ জায়েদি এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘অল্প কিছুক্ষণ আগে আফগান তালেবান প্রশাসন সীমান্তে বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে।’

জায়েদির দাবি, তাঁদের বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সমুচিত জবাব দিয়েছে।

সীমান্তের আফগান অংশের বাসিন্দারা এএফপিকে বলেন, রাত প্রায় ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে গোলাগুলি শুরু হয় এবং দুই ঘণ্টার মতো চলতে থাকে।

কান্দাহার প্রদেশের তথ্য বিভাগের প্রধান আলী মোহাম্মদ হাকমল বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী হালকা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালায়। কয়েকটি বেসামরিক বাড়িতে মর্টারের গোলার আঘাত লেগেছে।

২০২১ সালে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমে বাড়ছে।

আরও পড়ুনপাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল গোলাগুলি৫ ঘণ্টা আগে

বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে নিরাপত্তা ইস্যু। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে, বিশেষ করে পাকিস্তান তালেবানকে (টিটিপি) আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছে কাবুল। এ টিটিপি পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ভেতরে হামলা চালিয়ে থাকে।

তালেবান সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে।

গত অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যকার সংঘাতে ৭০ জনের বেশি নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়।

আরও পড়ুননতুন সংঘাতের পর পাকিস্তান–আফগানিস্তানের মধ্যে আলোচনায় আবারও অচলাবস্থা০৮ নভেম্বর ২০২৫

কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে লড়াই বন্ধ হয়। পরে দোহা ও ইস্তাম্বুলে একাধিক দফায় আলোচনার পরও তারা কোনো স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মধ্যকার সীমান্ত এখনো বন্ধ রয়েছে।

গত মাসে কাবুল অভিযোগ করেছিল, সীমান্ত এলাকার ওপর পাকিস্তানের বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনই শিশু। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেনিনে প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের দাবি একদল সেনার, সরকারের অস্বীকার
  • মিয়ানমারে চায়ের দোকানে বিমান হামলায় নিহত ১৮
  • নির্বাচন নিয়ে কেউ কেউ ভিন্ন সুরে কথা বলছে: জামায়াতের আমির
  • মিয়ানমারের প্রবাসী নাগরিকদের জন্য আগাম ভোট গ্রহণ শুরু
  • অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে প্রাণঘাতী গোলাগুলি, নিহত ৪