শিশুদের রক্ষায় বিল গেটসের আহ্বান
Published: 8th, December 2025 GMT
গেটস ফাউন্ডেশনের চেয়ার ও ব্রেকথ্রু এনার্জির প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বিখ্যাত প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা। তিনি লিংকডইনে ‘একটি প্রজন্মের অগ্রগতি, তাদের জন্য পছন্দ’ শীর্ষক একটি লেখা প্রকাশ করেছেন। বিল গেটস লিখেছেন, একটি শিশুর মৃত্যু সব সময়ই একটি ট্র্যাজেডি। কিন্তু যে রোগ আমরা প্রতিরোধ করতে জানি, সেই রোগে যখন কোনো শিশুর মৃত্যু হয়, তখন তা বিশেষভাবে মর্মান্তিক। কয়েক দশক ধরে বিশ্ব শিশুদের জীবন বাঁচাতে দারুণ সব অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু এখন চ্যালেঞ্জ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই অগ্রগতি বিপরীতমুখী হচ্ছে। ২০২৪ সালে ৪৬ লাখ শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনের আগেই মারা গেছে। ২০২৫ সালে সেই সংখ্যা এই শতাব্দীর মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রায় ২ লাখ থেকে তা বেড়ে আনুমানিক ৪৮ লাখে পৌঁছানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মানে হলো পাঁচ হাজারের বেশি শ্রেণিকক্ষে ভর্তি শিশু নাম লিখতে বা জুতার ফিতে বাঁধতে শেখার আগেই হারিয়ে গেল।
বিল গেটস বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। আমার মতে, পরবর্তী অধ্যায় দুটি উপায়ে ঘটতে পারে। আমরা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে উন্নত বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সুবিধা পাওয়া একটি প্রজন্ম হতে পারি। জীবনরক্ষাকারী কাজের মাধ্যমে নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করতে পারছি না আমরা। বিগত কয়েক মাস ধরে আমাদের ফাউন্ডেশন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের সঙ্গে এই ঝুঁকির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য কাজ করেছে। আমরা যা খুঁজে পেয়েছি, তা উদ্বেগজনক।’
দেখা গেছে, যদি স্বাস্থ্য খাতে তহবিল ২০ শতাংশ কমে যায়, তাহলে ২০৪৫ সালের মধ্যে আরও ১ কোটি ২০ লাখ শিশুর মৃত্যু হতে পারে। বেশ কিছু বড় দাতা দেশ বর্তমানে এমন কাজ বিবেচনা করছে। যদি এই কাটছাঁট আরও বেশি হয়ে ৩০ শতাংশ হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তখন ২০৪৫ সালের মধ্যে আরও ১ কোটি ৬০ লাখ শিশুর মৃত্যু হতে পারে। বিল গেটস লিখেছেন, ‘যদি আমরা এই পথে চলি, তবে আমরাই সেই প্রজন্ম যারা প্রতিরোধযোগ্য শিশুমৃত্যু প্রায় বন্ধ করেই ফেলেছিলাম। পোলিও প্রায় নির্মূল করেছিলাম। ম্যালেরিয়াকে প্রায় পৃথিবী থেকে মুছে দিয়েছিলাম। এইডসকে প্রায় ইতিহাসে পরিণত করেছিলাম। কিন্তু প্রায় পর্যন্ত থেমে থাকা যাবে না। আমরা জানি, শিশুরা মারা যাচ্ছে। আমরা জানি কেন। আর আমরা জানি তা কীভাবে থামাতে হবে।’
মানবতার স্বার্থে বিল গেটস ভিন্ন পথ বেছে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আরেকটি পথ আছে, যেখানে আমরা আমাদের সমস্ত জ্ঞানকে কাজে লাগাব। বিভিন্ন উদ্ভাবনকে সেই সব শিশুদের কাছে পৌঁছাতে হবে, যা তাদের জন্য প্রয়োজন। এভাবে লাখ লাখ তরুণ জীবন রক্ষা করা সম্ভব। আমি বিশ্বের শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য তহবিল বৃদ্ধির পক্ষে ও আমাদের বর্তমান ব্যবস্থার উন্নতি সাধনকারী দক্ষতার পক্ষে কথা বলতে থাকব। যেখানে লাখ লাখ জীবন ঝুঁকির মুখে, সেখানে এখন আমাদের আরও বেশি কিছু করতে হবে।’
বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিল গেটস। তিনি বলেন, এটি কোনো নতুন ধারণা নয়। তাঁদের দীর্ঘকাল ধরেই সীমিত বাজেট দিয়ে আরও বেশি কিছু করতে হয়েছে। আজ যখন অনেক দেশ স্বাস্থ্য বা শিক্ষার চেয়ে ঋণের জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করছে, তখন প্রতিটি ডলার আরও কঠোরভাবে ব্যবহার করতে হবে। সৌভাগ্যবশত, এমন কৌশল ও উদ্ভাবন রয়েছে, যা ঠিক সাহায্য করতে পারে।
শিশুদের জন্য বাজেট বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিল গেটস লিখেছেন, ‘কঠিন বাজেটের সময়েও আমরা একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারি। গত ২৫ বছরে আমরা সীমিত সম্পদ নিয়েও কীভাবে জীবন বাঁচাতে হয়, সে সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি। শুধু অর্থ দিয়ে নয়, অগ্রাধিকার, প্রতিশ্রুতি ও শিশুদের জন্য কাজকে পছন্দ করতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে কার্যকর কাজে দ্বিগুণ মনোযোগ দিতে হবে। শক্তিশালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও জীবন রক্ষাকারী টিকা দিতে হবে। এরপর আমাদের এমন উদ্ভাবনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যেখানে অর্থের সদ্ব্যবহার হয়। আমি এমন সমাধানের কথা বলছি, যা পুরোনো টিকার তুলনায় একই বা আরও ভালো সুরক্ষা দিতে কম ডোজ প্রয়োজন হয়। ডেটার স্মার্ট আর নতুন ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে নিশ্চিত হবে, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ ঠিক সেই সব স্থানে ব্যবহার করা হবে, যেখানে টিকার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
বিল গেটস তাঁর লেখায় পরবর্তী প্রজন্মের উদ্ভাবন বিকাশে সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা বলেন। শিশুদের জন্য মারাত্মক হুমকি নিয়ে চিন্তিত তিনি। শিশুরা আগামীর বিশ্বে মৌলিক পরিবর্তন ঘটাবে বলে উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে বিল গেটসের।
সূত্র: লিংকডইন
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ল গ টস দ র জন য ব যবহ র প রজন ম আম দ র সবচ য
এছাড়াও পড়ুন:
ভবনের ছাদ থেকে ৫ ঘণ্টা গুলিবর্ষণ, একটি অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি
চারতলা ভবনের ছাদে ২০-২৫ জন ব্যক্তি। তাঁদের অনেকের হাতেই আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরা একজন কিছুক্ষণ পরপর বাঁশি বাজাচ্ছেন। সেই বাঁশি বেজে উঠতেই একসঙ্গে ভবনের নিচে জড়ো হওয়া মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। মাঝেমধ্যে জিরিয়ে নিয়ে ছাদে থাকা একটি ড্রাম থেকে শরবতও পান করছিলেন সেই অস্ত্রধারীরা। এভাবে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে গুলি ছোড়া হয় ভবনটির ছাদ থেকে।
গত বছরের ৪ আগস্ট এই দৃশ্য দেখা যায় লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলায়। ওই অস্ত্রধারীদের গুলিতে চারজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের একটিও উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও আহত ব্যক্তিরা।
দিনের আলোতে গুলিবর্ষণের এ ঘটনার অনেক ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ জানায়, ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে হামলার সময় পিস্তল, শটগান ও কাটাবন্দুক ব্যবহার করতে দেখা যায় অস্ত্রধারীদের। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে অধিকাংশ অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। অস্ত্রধারীদের প্রায় সবাই যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মী। এরই মধ্যে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলেও অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান চার শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজের সাদ আল আফনান, দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজের সাব্বির হোসেন রাসেল, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের কাউছার হোসেন ও একই কলেজের ওসমান গণি।যেভাবে ঘটনার শুরুলক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা অবস্থান করেন ঝুমুর এলাকায়। সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। এ সময় শহরের উত্তর তেহমনী থেকে ঝুমুর পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী চলে এই সংঘর্ষ। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতারা পিছু হটেন। এর মধ্যে কিছু নেতা-কর্মী আশ্রয় নেন জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিনের বাসার সামনে।
দুপুর ১২টার দিকে শত শত আন্দোলনকারী এ কে এম সালাহ উদ্দিনের বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় সালাহ উদ্দিন ও তাঁর বাহিনীর লোকজন বাসার ছাদ থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। শতাধিক আন্দোলনকারীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান চারজন শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজের সাদ আল আফনান, দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজের সাব্বির হোসেন রাসেল, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের কাউছার হোসেন ও একই কলেজের ওসমান গণি । ওই দিন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা একপর্যায়ে এ কে এম সালাহ উদ্দিনের ভবনটিতে আগুন দেন। এ সময় গণপিটুনিতে নিহত হন আরও ৮ জন।
ছাত্র–জনতার কর্মসূচিতে হামলা চালান অস্ত্রধারীরা। গত বছরের ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুর সদর এলাকায়