জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে একটি বড় অংশের মানুষ সন্তুষ্ট। আবার বড় অংশের মানুষের মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে। একাংশ বলেছে, তারা সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট—কোনোটাই নয়।

প্রথম আলোর উদ্যোগে করা ‘গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ-২০২৫’-এ এই মতামত উঠে এসেছে। প্রথম আলোর জন্য জরিপটি করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিমেকারস কনসাল্টিং লিমিডেট।

জরিপের একটি প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছিল, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?

জবাবে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা কিছুটা সন্তুষ্ট। দেখা যাচ্ছে, ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষের মধ্যে সংস্কার নিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছে। অন্যদিকে ২১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা সন্তুষ্ট নন, অসন্তুষ্টও নন। ২৫ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, কিছুটা অসন্তুষ্ট। আর ১১ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা খুবই অসন্তুষ্ট। ফলে অসন্তুষ্টি থাকা মানুষের হার ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তাঁরা সংস্কার চান।

কোন সংস্কার নিয়ে কতটা সন্তুষ্টি

জরিপের তথ্য বলছে, পুলিশ, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন ও আর্থিক খাতের সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার সফল নয় বলে মনে করেন অর্ধেকের বেশি মানুষ। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বিভিন্ন সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কতটা সফল বা ব্যর্থ বলে আপনি মনে করেন? এর জবাবে অর্ধেকের বেশি উত্তরদাতা বলেছেন, পুলিশ (৫৮ শতাংশ), বিচারব্যবস্থা (৫৬ শতাংশ), প্রশাসন (৫৬ শতাংশ) এবং আর্থিক খাত (৫২ শতাংশ) সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার সফল হয়নি। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার এগোয়নি।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ, কৃষিতে ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ, শিল্প ও বিনিয়োগে ৪৫ দশমিক ২ শতাংশ, খেলাধুলা ও সংস্কৃতিতে ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ, স্থানীয় সরকারে ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং পররাষ্ট্রনীতিতে সংস্কারে সরকার সফল বলে মনে করেন ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ। বাকিরা মনে করেন, সফল হয়নি বা বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত নন।

কার দায় বেশি

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম আরও সফল না হওয়ার পেছনে কার বা কাদের দায় বেশি বলে মনে করেন—এ প্রশ্নে প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা (৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ) সংস্কারে ব্যর্থতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকেই দায়ী করেছেন। এ ছাড়া এক-তৃতীয়াংশের বেশি মনে করেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগীরাই সংস্কারে বাধা দিয়েছে।

এ ছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২২ শতাংশ জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি), ২০ দশমিক ৭ শতাংশ বিএনপিকে ও ৭ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীকে সংস্কারে প্রতিবন্ধকতার জন্য দায়ী বলে মত দিয়েছেন।

প্রথম আলোর উদ্যোগে করা জরিপে দেশের ৫টি নগর এবং ৫টি গ্রাম বা আধা শহর অঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৫৫ বছর) ১ হাজার ৩৪২ জনের মতামত নেওয়া হয়। জরিপে অংশ নেওয়া মানুষেরা বিভিন্ন আয়, শ্রেণি ও পেশার। গত ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপকারী প্রতিষ্ঠান বলেছে, এটি একটি মতামত জরিপ। এটা দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ, তবে নির্দিষ্টভাবে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে না। জরিপের নমুনা এমন মানুষদেরই তুলে ধরেছে, যাঁরা অনলাইন অথবা ছাপা পত্রিকা পড়তে পারেন এবং আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরিপের ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতার (কনফিডেন্স লেভেল) মাত্রা ৯৯ শতাংশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অসন ত ষ ট সরক র র স সন ত ষ ট বল ছ ন দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

পঞ্চগড়ে আজও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড

উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে শীতের দাপট বাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েকদিন ধরে দেশের অন্যসব অঞ্চলের তুলনায় এখানকার তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ এই তাপমাত্রা রেকর্ড করে। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৪ শতাংশ। এর আগে, গতকাল রবিবার একই সময়ে এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আরো পড়ুন:

আজও পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ঘরে

পটুয়াখালীতে শীতের দাপট

এদিকে, রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে গ্রামীন জনপদ ও ফসলের ক্ষেত। ভোরে কাজে বের হওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ভুগছেন। অনেকেই গায়ে অতিরিক্ত কাপড় জড়িয়েও কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশু, বয়স্ক ও রোগীদের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়ছে। দরিদ্র পরিবারগুলো শীতবস্ত্রের সংকটে রয়েছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের ঘরে বিরাজ করছে। কারণ হিসেবে বলেন, তাপমাত্রার পারদ ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। ডিসেম্বরেই তাপমাত্রা আরো কমে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। 

ঢাকা/নাঈম/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ