সরকারি আরও ৩ প্রতিষ্ঠান থেকে বাদ গেল শেখ পরিবারের নাম
Published: 6th, February 2025 GMT
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামে থাকা তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেগুলো হলো- রংপুরের শেখ রাসেল পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি এবং জামালপুরে শেখ হাসিনা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি।
আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতাধীন অন্যান্য সমধর্মী প্রতিষ্ঠান, যেমন- পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়া; বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)-এর নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নামকরণের উদ্দেশে ‘শেখ রাসেল পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, রংপুর’- এর নাম পরিবর্তন করে ‘পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, রংপুর’ করার লক্ষ্যে ‘শেখ রাসেল পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, রংপুর (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতাধীন অন্যান্য সমধর্মী প্রতিষ্ঠান, যেমন- পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়া; বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)-এর নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নামকরণের উদ্দেশ্যে ‘বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড), গোপালগঞ্জ’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, গোপালগঞ্জ’ করার লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতাধীন অন্যান্য সমধর্মী প্রতিষ্ঠান, যেমন- পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়া; বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)-এর নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নামকরণের উদ্দেশ্যে ‘শেখ হাসিনা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, জামালপুর’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, জামালপুর’ করার লক্ষ্যে ‘শেখ হাসিনা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, জামালপুর (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
এছাড়া আজকের বৈঠকে (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭৩ সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে উক্ত আইনের অধিকতর সংশোধনের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম (ট্রাইব্যুনাল) (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে খসড়া অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
পাশাপাশি সম্পূরক বিষয় হিসেবে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাথে আলোচনাপূর্বক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ পরিমার্জন করে উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে উপস্থাপন করবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট উপদ ষ ট এর ন ম
এছাড়াও পড়ুন:
‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।
উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’
গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’
প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।
আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)
সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।
আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।
কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।
আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫