শুরুতে দেরি হলেও পরে সঠিক গতিতেই চলেছে তাহিরপুর অঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধের সংস্কার। এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এসব প্রকল্পের ৮১ ভাগ কাজ। এখনও দ্বিতীয় কিস্তি না পেয়ে হতাশ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) কৃষকরা। সে কষ্টের খানিকটা ধুয়ে গেছে এক পশলা বৃষ্টিতে।
বাঁধের নতুন মাটি ও ঘাসে প্রচুর পানি দিতে হয় কাজ শেষে। এতে প্রচুর টাকা এবং শ্রম ব্যয় করতে হয়। তাই এ সময় বোরো চাষিদের মতো প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাও বৃষ্টি চান। শনিবার সদর মসজিদে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজের ঘোষণাও দেওয়া হয়। তার আগেই রোববার দুপুরে বৃষ্টি ঝরিয়ে বাঁধের নতুন মাটি আর ঘাসে পানি ছিটাল প্রকৃতি নিজেই।
পিআইসির সদস্যরা জানান, অনেক বছর পর কোনো চাপ ছাড়া কাজ হয়েছে। কমিটিগুলোতে স্থানীয় কৃষকদের সংখ্যাই বেশি। তাই বরাদ্দের টাকাতেই অধিকাংশ বাঁধের কাজ হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এখনও না পাওয়ায় হতাশ তারা। তবে বাঁধের ঘাসে পানি ছিটানোর কাজে স্বস্তি পেয়েছেন বৃষ্টির কারণে। এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, নয়া বাঁধে বৃষ্টির ছটা সৌভাগ্যের লক্ষণ। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিআইসিগুলো উপজেলার বিভিন্ন হাওরে রক্ষা বাঁধের কাজ ৮১ ভাগ সম্পন্ন করেছে। তবে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এখনও পরিশোধ করেনি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবরা। নির্ধারিত সময়ের পরও কাজের বিল না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তাদের কেউ কেউ।
সুনামগঞ্জ পাউবো জানায়, তাহিরপুরের ৭৪টি প্রকল্পে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ প্রায় শেষ। এ কাজের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। কাজ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত পিআইসিগুলোকে দেওয়া হয়েছে মোট টাকার ২৩ ভাগ।
প্রকল্প সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, দ্বিতীয় কিস্তির টাকা তারা পাননি। ধার করে ও সুদে টাকা এনে প্রকল্পের কাজ শেষ করেছেন।
শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুরাদ জানান, যাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি, তারা দুর্ভোগে আছেন মাটি সংকটের কারণে। এ পর্যন্ত পিআইসিগুলো ৮১ ভাগ কাজ সম্পন্ন করার বিপরীতে বিল পেয়েছে মূল টাকার ২৩ ভাগ। 
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ফসল রক্ষা বাঁধের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আগামী দু-একদিনের মধ্যেই পরিশোধ করা হবে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান, দ্বিতীয় কিস্তির টাকার চেক প্রস্তুত হচ্ছে। দ্রুতই পিআইসিগুলো তাদের নির্ধারিত টাকা পেয়ে যাবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প আইস গ ল প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও