বরিশাল বিভাগে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আবার বেড়েছে, কেন্দ্রে বরগুনা
Published: 18th, September 2025 GMT
বরিশাল বিভাগে আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও সেপ্টেম্বরে এসে আবার বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুহার। সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে বিভাগে ১ হাজার ৭১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে এসেছেন। একই সময়ে মারা গেছেন চারজন।
মারা যাওয়া চারজনই বরগুনা জেলার বাসিন্দা। সর্বশেষ গতকাল বুধবার সকাল আটটা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে বরগুনার আমতলী উপজেলার আসমা বেগম (৪০) নামের এক নারী মারা গেছেন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছর বিভাগের ছয় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ১৫২ জন রোগী। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বরগুনার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৭৬১ রোগী, যা মোট রোগীর ৬০ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে মারা যাওয়া ২৩ জনের মধ্যে বরগুনার হাসপাতালে মারা গেছেন ৯ জন। বাকি ১৪ জনের ১৩ জন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন পটুয়াখালী হাসপাতালে মারা গেছেন।
তবে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে কিংবা অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে বরগুনা জেলার আরও ছয়জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে, যা সরকারি নথিপত্রে নেই। সেই হিসাবে বরগুনায়ই ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বরিশাল বিভাগে, বিশেষ করে বরগুনা জেলায় এবার শুরু থেকেই ডেঙ্গুর উচ্চ সংক্রমণের হার বিরাজ করছে। আগস্টে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হলেও সেপ্টেম্বরে আবার বেড়েছে। এতে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ। জুলাই-আগস্টে বিভাগে ধারাবাহিক ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে কমলেও থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নিতে পারে বলে আগেই আশঙ্কা করেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ধারাবাহিক ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হলেও অল্প সময়ে নেমে যাওয়ায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা টিকে থাকার জন্য সহায়ক নয়। কিন্তু থেমে থেমে অল্প বৃষ্টি হলে বিভিন্ন ছোট পাত্রে, নিচু জায়গায় কিংবা বাড়ির আশপাশে পানি জমে থাকে। এটি এডিস মশার লার্ভার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ দিনে বিভাগে ১ হাজার ৭১১ জন রোগী এসেছেন হাসপাতালে, যা মোট রোগীর প্রায় ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে ৭৭৩ জনই এসেছেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ১৫১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বরগুনা জেলারই ৫৬ জন। বর্তমানে বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ৩৮১ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে বরগুনার জেনারেল হাসপাতালে ১৩০ জন রোগী চিকিৎসাধীন।
বরগুনায় আগে কখনো ডেঙ্গুর এমন ধারাবাহিক ও উচ্চ সংক্রমণ দেখা যায়নি। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জুনের মাঝামাঝি সময়ে বরগুনায় এডিস মশার লার্ভা জরিপ কার্যক্রম চালায়। গত ২৬ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআর জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে জানায়, বরগুনা পৌরসভার ৩১ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭৬ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। জরিপ দল বরগুনার ১৮৪টি ঘর থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ১৩৮টি বরগুনা পৌরসভার এবং ৪৬টি সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের। এর মধ্যে পৌর এলাকার ৪৩টি বাড়িতে এবং গ্রামের ৩৫টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়।
এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)। যদি বিআই ২০ বা এর বেশি হয়, তবে সেখানে এডিসের লার্ভার উচ্চ উপস্থিতি আছে বলে ধরা হয়। বরগুনা পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিআই যথাক্রমে ১৫৩ ও ১৩৩। আর গ্রামাঞ্চলে বিআই হলো ১৬৩। আইইডিসিআরের মেডিকেল সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রত্না দাশের নেতৃত্বে এ জরিপ চালানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, বিভাগের অন্য জেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও বরগুনায় সংক্রমণ আবার ভয়াবহ হচ্ছে। জুলাই-আগস্টে ধারাবাহিকভাবে ভারী বৃষ্টি হলেও সেপ্টেম্বরে থেমে থেমে কম বৃষ্টি হওয়ায় সংক্রমণ বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা হাসপাতালগুলোতে নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গুবাহিত মশার বিস্তার যেভাবে ঘটছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সচেতনতার বিকল্প নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর শ ল ব ভ গ স প ট ম বর বরগ ন য় স ক রমণ বরগ ন র জন র গ সরক র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশাল বিভাগে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আবার বেড়েছে, কেন্দ্রে বরগুনা
বরিশাল বিভাগে আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও সেপ্টেম্বরে এসে আবার বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুহার। সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে বিভাগে ১ হাজার ৭১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে এসেছেন। একই সময়ে মারা গেছেন চারজন।
মারা যাওয়া চারজনই বরগুনা জেলার বাসিন্দা। সর্বশেষ গতকাল বুধবার সকাল আটটা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে বরগুনার আমতলী উপজেলার আসমা বেগম (৪০) নামের এক নারী মারা গেছেন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছর বিভাগের ছয় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ১৫২ জন রোগী। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বরগুনার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৭৬১ রোগী, যা মোট রোগীর ৬০ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে মারা যাওয়া ২৩ জনের মধ্যে বরগুনার হাসপাতালে মারা গেছেন ৯ জন। বাকি ১৪ জনের ১৩ জন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন পটুয়াখালী হাসপাতালে মারা গেছেন।
তবে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে কিংবা অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে বরগুনা জেলার আরও ছয়জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে, যা সরকারি নথিপত্রে নেই। সেই হিসাবে বরগুনায়ই ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বরিশাল বিভাগে, বিশেষ করে বরগুনা জেলায় এবার শুরু থেকেই ডেঙ্গুর উচ্চ সংক্রমণের হার বিরাজ করছে। আগস্টে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হলেও সেপ্টেম্বরে আবার বেড়েছে। এতে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ। জুলাই-আগস্টে বিভাগে ধারাবাহিক ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে কমলেও থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নিতে পারে বলে আগেই আশঙ্কা করেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ধারাবাহিক ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হলেও অল্প সময়ে নেমে যাওয়ায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা টিকে থাকার জন্য সহায়ক নয়। কিন্তু থেমে থেমে অল্প বৃষ্টি হলে বিভিন্ন ছোট পাত্রে, নিচু জায়গায় কিংবা বাড়ির আশপাশে পানি জমে থাকে। এটি এডিস মশার লার্ভার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ দিনে বিভাগে ১ হাজার ৭১১ জন রোগী এসেছেন হাসপাতালে, যা মোট রোগীর প্রায় ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে ৭৭৩ জনই এসেছেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ১৫১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বরগুনা জেলারই ৫৬ জন। বর্তমানে বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ৩৮১ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে বরগুনার জেনারেল হাসপাতালে ১৩০ জন রোগী চিকিৎসাধীন।
বরগুনায় আগে কখনো ডেঙ্গুর এমন ধারাবাহিক ও উচ্চ সংক্রমণ দেখা যায়নি। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জুনের মাঝামাঝি সময়ে বরগুনায় এডিস মশার লার্ভা জরিপ কার্যক্রম চালায়। গত ২৬ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআর জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে জানায়, বরগুনা পৌরসভার ৩১ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭৬ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। জরিপ দল বরগুনার ১৮৪টি ঘর থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ১৩৮টি বরগুনা পৌরসভার এবং ৪৬টি সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের। এর মধ্যে পৌর এলাকার ৪৩টি বাড়িতে এবং গ্রামের ৩৫টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়।
এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)। যদি বিআই ২০ বা এর বেশি হয়, তবে সেখানে এডিসের লার্ভার উচ্চ উপস্থিতি আছে বলে ধরা হয়। বরগুনা পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিআই যথাক্রমে ১৫৩ ও ১৩৩। আর গ্রামাঞ্চলে বিআই হলো ১৬৩। আইইডিসিআরের মেডিকেল সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রত্না দাশের নেতৃত্বে এ জরিপ চালানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, বিভাগের অন্য জেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও বরগুনায় সংক্রমণ আবার ভয়াবহ হচ্ছে। জুলাই-আগস্টে ধারাবাহিকভাবে ভারী বৃষ্টি হলেও সেপ্টেম্বরে থেমে থেমে কম বৃষ্টি হওয়ায় সংক্রমণ বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা হাসপাতালগুলোতে নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গুবাহিত মশার বিস্তার যেভাবে ঘটছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সচেতনতার বিকল্প নেই।