২০০৮ সালের নির্বাচনও ছিল সাজানো, কারা নির্বাচিত হবেন ঠিক করা ছিল: মঈন খান
Published: 16th, August 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন মোটেও নিরপেক্ষ ছিল না। ছিল পরিকল্পিতভাবে একটি সাজানো নির্বাচন। কে কোথায় নির্বাচিত হবেন, তার পূর্বনকশা নির্বাচনের আগেই নির্ধারণ করা হয়ে গিয়েছিল।
আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদ ও আহতদের অমর কীর্তিগাথা স্মরণে’ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে মঈন খান এসব কথা বলেন। ঢাকা কলেজের প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দের ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মঈন খান বলেন, এক-এগারোর সরকার বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের জন্য একটি অসৎ পরিকল্পনা করেছিল, সেই পরিকল্পনা যদিও পরবর্তী সময়ে ব্যর্থ হয়। দেশে তখন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেটা শুধু বাংলাদেশে নয়, জাতিসংঘসহ সারা বিশ্বে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন বলে প্রচার করা হয়েছিল।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘আজকে আমি বলতে বাধ্য হয়েছি যে সেই ২০০৮ সালের নির্বাচনও কিন্তু মোটেও নিরপেক্ষ ছিল না। ছিল পরিকল্পিতভাবে একটি সাজানো নির্বাচন।’ তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে যখন ভোট হয়, তার কয়েক দিন আগে সংসদের ৩০০ আসনের কে কোথায় নির্বাচিত হবেন, তার পূর্বনকশা কিন্তু নির্ধারণ করা হয়ে গিয়েছিল।
মঈন খান বলেন, পরিকল্পিতভাবে এক-এগারোর মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। পরবর্তী ১৬ বছর তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মের দিক থেকে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দীর্ঘ ১৬ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনের অবসান ঘটে। এই আন্দোলনের সময় শিশু, যুবক, শ্রমিক এবং শিক্ষার্থীরা মারধর ও হত্যার স্বীকার হয়েছিল। তবে এ ঘটনা বাংলাদেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজকে একত্র করেছে।
এ সময় ছাত্রদের উদ্দেশে মঈন খান বলেন, ছাত্রদের কিন্তু লেখাপড়া করতে হবে। কেননা ছাত্রদের ওপর গুরুদায়িত্ব রয়েছে। সে গুরুদায়িত্বটি কী? আজকের যারা ছাত্র তারাই কিন্তু ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পরিচালক হবে। আগামী দিনে দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করবে এবং সে জন্য তাদের সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে সঠিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দীর্ঘ এক বছর দেশকে গণতন্ত্রে রূপান্তরের জন্য তারা স্বাধীনভাবে কাজ করে গেছে। সর্বশেষ আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেছে। আমরা আশা করছি, পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশন শিডিউলের (তফসিলের) মাধ্যমে সেটা নির্দিষ্ট করে দেবে।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ঢাকা কলেজের প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দের পক্ষ থেকে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের হাতে উপহার তুলে দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০০৮ স ল র ব এনপ র অন ষ ঠ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা চ্যালেঞ্জের
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা সব সময় চ্যালেঞ্জের। গত এক বছরে এই চ্যালেঞ্জটা আরও বড় করে দেখা দিয়েছে। আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি, পারস্পরিক স্বার্থ আর শ্রদ্ধার ভিত্তিতে আমরা ভারতের সঙ্গে একটা ‘গুড ওয়ার্কিং রিলেশন’ (কাজের ক্ষেত্রে ভালো সম্পর্ক) চাই। আর এই সম্পর্কটা হবে ৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জনগণের প্রত্যাশাকে বিবেচনায় নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু বলেনি যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে হবে। মানুষ চায় দুই দেশের সম্পর্ক হবে পারস্পরিক স্বার্থ আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে। দেশের জনগণের একটা বড় অংশের ধারণা, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সরকার সেটা করেনি। দেশের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়নি। কাজেই দুই দেশের স্বার্থ রক্ষা করে ভালো সম্পর্কে যে গুরুত্ব দিয়েছি, এটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।
চীন নিজেও জানে এবং আমরাও তাদের বোঝাতে পেরেছি, ’৭৫ সালে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক সব সময় বজায় থেকেছে। এমনকি বাংলাদেশের ক্ষমতায় বিপরীতমুখী দল থাকলেও সম্পর্ক এগিয়ে গেছে। এই ধারাবাহিকতায় গত এক বছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।
আরও পড়ুনদ্বিধা আর সমন্বয়হীনতায় সরকারের কূটনীতি৩ মিনিট আগেপাল্টা শুল্ক নিয়ে সাময়িকভাবে অস্বস্তি তৈরি হলেও গত এক বছরে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভালো। যুক্তরাষ্ট্রকে আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাদের জন্য হুমকি বা ক্ষতিকর কিছু নয়। এটা মূলত অর্থনৈতিক সম্পর্ক। আমাদের নিজেদের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা ‘আউট অব দ্য ওয়ে’ (নিয়মের বাইরে গিয়ে) কিছু করছি না। অন্য অনেক দেশের মতোই আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। যেখানে ব্যবসা, বিনিয়োগের পাশাপাশি মানুষের চলাচল সুগম করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বৈরী সম্পর্কের প্রয়োজন নেই। অতীতে অকারণে পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। আমরা সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি। পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক করার সময় অমীমাংসিত তিন বিষয় আলোচনার টেবিলে থাকছে।
রোহিঙ্গা সংকটে জটিলতা বেড়েছে। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের অবসানের পর রাখাইনে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হবে। সে ক্ষেত্রে সেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তখন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যেতে পারে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের ঢাকা মিশনটি চালুর ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাইয়ের পর সম্মতি দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ যেভাবে প্রস্তাব দিয়েছিল, সে অনুযায়ী মিশনটি চালু হয়েছে এমনটি নয়। মানবাধিকার সুরক্ষায় আমাদের সমস্যা ছিল এবং এখনো আছে। এখানে জাতিসংঘের মিশন চালুর ফলে মানবাধিকার ইস্যুতে সরাসরি দুই পক্ষের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিদেশে কনস্যুলারকেন্দ্রিক বাংলাদেশের মিশনে জনগণের সেবা সহজলভ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার জহুরবারুতে কনস্যুলেট চালু হচ্ছে। সৌদি আরবে আরেকটি কনস্যুলেট চালু করা হবে। ওমানে লোকজনের দুর্ভোগ কমাতে ওমান পোস্টের মাধ্যমে পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে মূল চ্যালেঞ্জটা অর্থনীতির ক্ষেত্রে। বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা পছন্দ করেন না। আমাদের এই সরকার দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্বে থাকবে না। এরপরও বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে হয়েছে যে তাঁরা কোনো বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে এলে পরবর্তী সরকার এসে আটকে দেবে না। এরপরও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক নয়। ফলে অর্থনীতির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা রয়ে গেছে।
মো. তৌহিদ হোসেন, উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়