বান্দরবানের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ দরিদ্র্যের ঘেরাটোপে বন্দী
Published: 16th, August 2025 GMT
দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার, যা মোট জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যে ভুগছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বাসিন্দারা, যেখানে এই হার ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এ তথ্য উঠে এসেছে- পরিকল্পনা কমিশনের প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল মাল্টিডাইমেনশনাল পোভার্টি ইনডেক্স ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। দেশের বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের ওপর এটিই প্রথম প্রতিবেদন।
গত ৩১ জুলাই রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৯.
প্রতিবেদনের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার বেশি। এছাড়া দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয়েছে- পানির প্রাপ্যতা, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ইন্টারনেট সংযোগসহ ১১টি সূচকের সমন্বয়ে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও স্থানীয়রা বলছেন, বান্দরবানের পর্যটন শিল্পকে পরিকল্পিত প্রসার, কৃষি ও শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণ ও শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারকে দ্রুত ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে দারিদ্র্যসীমা থেকে মুক্ত হবে পার্বত্য এই জেলার ১১টি পাহাড়ি গোষ্ঠীসহ মোট ১২ সম্প্রদায়ের জনগণ। এসব সংকট মোকাবেলায় সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে দারিদ্র্যের হার আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
মানবাধিকার কর্মী ডনাইপ্রু নেলি বলেন, “সরকার প্রতি বছর বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিলেও সেই অর্থের সঠিক ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাষ্ট্রের লক্ষ্য সব জেলার মানুষকে ভালো রাখা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন সর্বত্র সমানভাবে দেখা যায় না। বিশেষ করে বান্দরবান যেখানে বহু ভাষাভাষী ও বহু সংস্কৃতির মানুষ বাস করে, রয়েছে মনোরম পাহাড় ও প্রকৃতি। সেই জেলায় এখনো অনেক মানুষ না খেয়ে দিন কাটায়, দারিদ্র্যের কষ্টে জীবন যাপন করে। অনেকের কাছে পর্যাপ্ত কাপড়ও নেই।”
তিনি বলেন, “প্রতি বছর সরকারি বাজেটের টাকা নানা রাজনৈতিক প্রভাব ও স্বার্থের কারণে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয় না। আবার অনেক সেবামূলক সংগঠনও রাজনৈতিকীকরণের ফলে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদি এ রাজনৈতিকীকরণ দূর করা যায় এবং বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হয়, তবে বান্দরবানের দারিদ্র্য কিছুটা হলেও লাঘব হবে।”
চড়ুইভাতি রেস্টুরেন্টের সত্ত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, “বান্দরবান মূলত একটি পর্যটননির্ভর জেলা। একে পর্যটনের শহর বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে পর্যটন শহরের প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য ও অবকাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি। পর্যটন অবকাঠামো সমৃদ্ধ হলে এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি।”
তিনি বলেন, “বছরে ৯-১০ মাস পর্যটক না আসায় স্থানীয় অর্থনীতিতে স্থায়ী উন্নতি ঘটছে না। পর্যটকদের নিয়মিত উপস্থিতি না থাকায় অর্থনৈতিক প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যথাযথভাবে পৌঁছায়নি। ফলে বান্দরবানের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অন্যান্য জেলার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে।”
বান্দরবান জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অংচমং মার্মা বলেন, “বিগত সরকারের উন্নয়নের জোয়ার বলছি। সে উন্নয়নটা যদি স্বচ্ছতার সঙ্গে, জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজে লাগানো যেত। উন্নয়ন বলতে আমরা যদি অবকাঠামোগত উন্নয়নকে বুঝায়, তাহলে কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি, যেটা খুবই প্রয়োজন ছিল।”
তিনি বলেন, “অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা উন্নয়ন, স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ যদি যথাযথ কাজে লাগানো খুবই জরুরি ছিল। আগামীতে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজে লাগালো যায়, তাহলে মনে হয় এই লজ্জাজনক দারিদ্র্যের হার সেখান থেকে উত্তরণ হবে।”
বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দীন বলেন, “আন্তর্জাতিক এনজিও, স্থানীয় এনজিও, জেলা পরিষদের ৩৪টি ন্যস্ত বিভাগসহ জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা বান্দরবানে কাজ করছে। তবুও প্রান্তিক জনগণ তাদের প্রাপ্য সুবিধা ঠিকভাবে পাচ্ছে না। নইলে দারিদ্র্যের সমীক্ষায় বান্দরবান জেলা সবার নিচে অবস্থান করত না।”
তিনি প্রত্যাশা করে বলেন, “জেলা পরিষদের ন্যস্ত বিভাগ ও এনজিওর কাজের অগ্রগতি থাকলেও বাস্তবে প্রান্তিক মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। তাই জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ ও এনজিওগুলোর উচিত প্রান্তিক পর্যায়ে সঠিকভাবে কাজ করা।”
তিনি আরো বলেন, “বান্দরবান প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরপুর। ঝিরি, ঝর্ণা আর পাহাড়ে ঘেরা এই জেলা। পর্যটন খাতে যথাযথ পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং পাহাড়ের কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের মাধ্যমে কাজ করা গেলে অর্থনৈতিক দুরবস্থা কিছুটা লাঘব হবে।”
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, “বান্দরবানে এখনো অনেক মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে- সম্প্রতি এমন একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর অন্যতম কারণ হলো, পূর্ববর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে যে বরাদ্দ এসেছিল, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এ বছর জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।”
তিনি আরো বলেন, “বান্দরবানের তিনটি উপজেলায় অর্থনীতি মূলত পর্যটন ও কৃষিনির্ভর। নানা কারণে দীর্ঘদিন পর্যটন কার্যক্রম স্থবির ছিল। ফলে উন্নয়নের গতি শ্লথ হয়েছিল। তবে গত ৩ মাস ধরে পর্যটন খাত উন্মুক্ত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন প্রাণ ফিরেছে। পাশাপাশি কৃষি খাতকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে স্থানীয় অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং দারিদ্র্যও অনেকাংশে কমে আসবে।”
ঢাকা/চাই মং/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন দরব ন র অবক ঠ ম বর দ দ এনজ ও সরক র ক করণ
এছাড়াও পড়ুন:
গুগল মেসেজেসে সংবেদনশীল ছবি ব্লার করার সুবিধা সবার জন্য চালু
গুগল মেসেজেসে এখন সবার জন্য চালু হলো সংবেদনশীল আধেয় বা কনটেন্ট শনাক্ত ও সতর্কবার্তা প্রদানের সুবিধা। গত বছরের অক্টোবরে ফিচারটির ঘোষণা দিয়েছিল গুগল। চলতি বছরের এপ্রিলে মেসেজেসের পরীক্ষামূলক সংস্করণের কিছু ব্যবহারকারী প্রথম এ সুবিধা পান। অবশেষে ঘোষণার প্রায় ১০ মাস পর অ্যান্ড্রয়েডের সব ব্যবহারকারীর জন্য ফিচারটি উন্মুক্ত হলো।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ৯টু৫ গুগলের তথ্যমতে, ‘সেনসিটিভ কনটেন্ট ওয়ার্নিংস’ বা সংবেদনশীল কনটেন্ট সতর্কবার্তা চালু করলে নগ্নতা রয়েছে, এমন ছবি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঝাপসা হয়ে যাবে। চাইলে ছবিটি না খুলেই মুছে ফেলা যাবে। এ ধরনের ছবি পাঠানো প্রেরককে ব্লক করার অপশনও থাকবে। তবে ছবি দেখতে হলে ‘নেক্সট’ চাপ দিয়ে অনুমতি দিতে হবে।
গুগল জানিয়েছে, ফিচারটির সব প্রক্রিয়াই ব্যবহারকারীর যন্ত্রে সম্পন্ন হয়। ফলে কোনো সংবেদনশীল ছবি গুগলের সার্ভারে সংরক্ষিত বা আপলোড হবে না। কিশোর ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে ফিচারটি ডিফল্টভাবে চালু থাকবে। তত্ত্বাবধানে থাকা অ্যাকাউন্টে এটি বন্ধ করার সুযোগ থাকবে না। তবে অভিভাবকেরা ‘ফ্যামিলি লিংক’ অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। প্রাপ্তবয়স্ক অ্যাকাউন্টে ফিচারটি ঐচ্ছিক ও ডিফল্টভাবে বন্ধ থাকবে।
সুবিধাটি ব্যবহার করতে চাইলে গুগল মেসেজেস অ্যাপে গিয়ে প্রোফাইল ছবিতে চাপ দিয়ে ‘মেসেজেস সেটিংস’ নির্বাচন করতে হবে। এরপর ‘প্রটেকশন অ্যান্ড সেফটি’তে গিয়ে ‘ম্যানেজ সেনসিটিভ কনটেন্ট ওয়ার্নিংস’ অপশনে গিয়ে ফিচারটি চালু করা যাবে। পুরোনো অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ফিচারটি ব্যবহার করতে গুগল প্লে স্টোর থেকে ‘সেফটিকোর’ অ্যাপ ডাউনলোড করতে হতে পারে।
ফিচারটি চালু থাকলে শুধু ছবি দেখার সময় নয়, কোনো সংবেদনশীল ছবি পাঠানো বা ফরোয়ার্ড করার আগেও সতর্কবার্তা দেখা যাবে। সতর্কবার্তায় ডান দিকে সোয়াইপ করে অনুমোদন দিতে হবে। এতে অনিচ্ছাকৃতভাবে সংবেদনশীল ছবি শেয়ার হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমবে। এই সতর্কবার্তা কেবল স্থির ছবির ক্ষেত্রে কার্যকর। জিআইএফ বা ভিডিও ফাইলের ক্ষেত্রে সুবিধাটি প্রযোজ্য নয়।
সূত্র: অ্যান্ড্রয়েডপুলিশ