সুন্দরবনে হরিণ শিকারে জড়িত থাকার অভিযোগে বন আইনে মামলা দেওয়ায় এক কর্মকর্তাকে মারধর করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবন–সংলগ্ন মহেশ্বরীপুর গ্রামের পাউবোর বেড়িবাঁধের ওপর এ ঘটনা ঘটে।

আহত ফারুকুল ইসলাম বন বিভাগের কয়রা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ফারুকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকালে আমি সুন্দরবনের কয়রা নদী পেরিয়ে মহেশ্বরীপুর গ্রামের বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে বন বিভাগের বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে ওই গ্রামের চিহ্নিত হরিণশিকারি আজগর হোসেন, কামরুল ইসলাম, জুয়েল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমার ওপর হামলা করেন। তাঁরা আমাকে কিলঘুষি মারতে মারতে বলতে থাকেন, আমি কেন তাঁদের নামে মামলা দিয়েছি। এ সময় হাঁক–চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা এসে আমাকে উদ্ধার করেন।’

সুন্দরবন–সংলগ্ন মহেশ্বরীপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, বন কর্মকর্তার ওপর হামলার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। হামলাকারীরা হরিণ শিকার, বিষ দিয়ে মাছ শিকারসহ বনকেন্দ্রিক নানা অপরাধে জড়িত। হামলাকারীদের কয়েকজন সম্প্রতি হরিণ শিকারের মামলায় জামিন নিয়ে জেল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। এলাকায় ফিরে কয়েক দিন ধরে বন কর্মকর্তাকে মারপিট করবেন বলেও বলাবলি করছিলেন। এলাকার মানুষ ভয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না।

বন কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত আজগর হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি সুন্দরবনে কোনো অপরাধ করিনি। তারপরও আমাকে জড়িয়ে বনকর্মীরা মিথ্যা মামলা দেওয়ায় আমি বন কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলামের কাছে বিষয়টি শোনাবোঝার চেষ্টা করেছি। সেখানে কোনো মারপিটের ঘটনা ঘটেনি।’

সুন্দরবনে হরিণশিকারি ও অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্য নির্মূলে বন বিভাগ চোরা শিকারিদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানান সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যাঁদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা হচ্ছে, তাঁরা বন বিভাগের তালিকাভুক্ত হরিণশিকারি। আজ যাঁরা কয়রা টহল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ওপর হামলা করেছেন, তাঁদের মূল উদ্দেশ্য বন বিভাগের অভিযান বন্ধ করা। আমরা এ বিষয়ে পুলিশকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা হামলার খবর পেয়েছি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র স ন দরবন ল ইসল ম র ওপর হ

এছাড়াও পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ

জীব ও প্রাণ-বৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে বনজীবী থেকে শুরু করে পর্যটক, কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা যুবদল ও মৎস্যজীবী দলের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী।

গত শুক্রবার তারা ভ্রমণে যান। সুন্দরবনের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়িতে অবস্থানকালে নিজেদের ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এডিসি পদমর্যাদার একজনের মাধ্যমে বন বিভাগের কাছ থেকে ১০ জনের অনুমতি মেলে। ওই দলে তিনি যুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর সঙ্গে ট্রলারে উঠে পড়েন। এ সময় তাদের আর নামিয়ে দেওয়া যায়নি। 

উপসচিব বা তাঁর জন্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা– জানতে চাইলে আমিনুর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলার তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’ কথা বলার জন্য ওই উপসচিবের নাম ও যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি দেননি।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জিয়াউর রহমান বলেন, এক উপসচিবের একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে ১০ জনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তির সুন্দরবনে যাওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন আবদারে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ