সুন্দরবনের বন কর্মকর্তার ওপর হরিণশিকারিদের হামলা
Published: 19th, March 2025 GMT
সুন্দরবনে হরিণ শিকারে জড়িত থাকার অভিযোগে বন আইনে মামলা দেওয়ায় এক কর্মকর্তাকে মারধর করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবন–সংলগ্ন মহেশ্বরীপুর গ্রামের পাউবোর বেড়িবাঁধের ওপর এ ঘটনা ঘটে।
আহত ফারুকুল ইসলাম বন বিভাগের কয়রা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ফারুকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকালে আমি সুন্দরবনের কয়রা নদী পেরিয়ে মহেশ্বরীপুর গ্রামের বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে বন বিভাগের বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে ওই গ্রামের চিহ্নিত হরিণশিকারি আজগর হোসেন, কামরুল ইসলাম, জুয়েল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমার ওপর হামলা করেন। তাঁরা আমাকে কিলঘুষি মারতে মারতে বলতে থাকেন, আমি কেন তাঁদের নামে মামলা দিয়েছি। এ সময় হাঁক–চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা এসে আমাকে উদ্ধার করেন।’
সুন্দরবন–সংলগ্ন মহেশ্বরীপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, বন কর্মকর্তার ওপর হামলার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। হামলাকারীরা হরিণ শিকার, বিষ দিয়ে মাছ শিকারসহ বনকেন্দ্রিক নানা অপরাধে জড়িত। হামলাকারীদের কয়েকজন সম্প্রতি হরিণ শিকারের মামলায় জামিন নিয়ে জেল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। এলাকায় ফিরে কয়েক দিন ধরে বন কর্মকর্তাকে মারপিট করবেন বলেও বলাবলি করছিলেন। এলাকার মানুষ ভয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না।
বন কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত আজগর হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি সুন্দরবনে কোনো অপরাধ করিনি। তারপরও আমাকে জড়িয়ে বনকর্মীরা মিথ্যা মামলা দেওয়ায় আমি বন কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলামের কাছে বিষয়টি শোনাবোঝার চেষ্টা করেছি। সেখানে কোনো মারপিটের ঘটনা ঘটেনি।’
সুন্দরবনে হরিণশিকারি ও অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্য নির্মূলে বন বিভাগ চোরা শিকারিদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানান সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যাঁদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা হচ্ছে, তাঁরা বন বিভাগের তালিকাভুক্ত হরিণশিকারি। আজ যাঁরা কয়রা টহল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ওপর হামলা করেছেন, তাঁদের মূল উদ্দেশ্য বন বিভাগের অভিযান বন্ধ করা। আমরা এ বিষয়ে পুলিশকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা হামলার খবর পেয়েছি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র স ন দরবন ল ইসল ম র ওপর হ
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস