রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর কারাবরণ তুরস্কের দীর্ঘ এক দশকের স্বৈরতন্ত্রের দিকে যাত্রার সর্বনিম্ন পর্যায়। কিন্তু প্রতিবাদকারীরাও এখনো হাল ছাড়েনি।

এ মাসের শুরুতে রাষ্ট্রপতি এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ—তিনি দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু স্পষ্টতই এ অভিযোগ সাজানো। এর পর থেকে ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র ও রাজনৈতিক বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল তাকসিম স্কয়ার ফাঁকা পড়ে আছে। পুরো এলাকা পুলিশ দিয়ে ঘেরা।

আমি পঞ্চাশ বছর ধরে ইস্তাম্বুলে বসবাস করছি। কিন্তু কখনো শহরের রাস্তায় এত বেশি তথাকথিত নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখিনি, যতটা গত কয়েক দিনে দেখছি। তাকসিম মেট্রোস্টেশন এবং শহরের আরও বহু ব্যস্ত স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক প্রশাসন ইস্তাম্বুলে গাড়ি ও আন্তনগর বাস চলাচল সীমিত করেছে। পুলিশ শহরে প্রবেশকারী যানবাহন চেক করছে। সন্দেহ হলে বিক্ষোভে যোগ দিতে আসা মানুষদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। শহরের সব জায়গায় এবং দেশজুড়ে মানুষের টেলিভিশন চালু রাখা হয়েছে, যেন তারা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাগুলো অনুসরণ করতে পারে।

এক সপ্তাহ ধরে ইস্তাম্বুলের গভর্নরের কার্যালয় জনসমক্ষে প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। অথচ এগুলো সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। কিন্তু তবুও স্বতঃস্ফূর্ত, অনুমোদনবিহীন প্রতিবাদ থেমে নেই। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে। সরকার মানুষকে একত্রিত হতে বাধা দিতে ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত করে দিয়েছে। পুলিশ নির্মমভাবে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছে। গ্রেপ্তার করেছে অসংখ্য মানুষকে।

এক দশক ধরে তুরস্ক প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল না। তুরস্কে আছে কেবল একটি নির্বাচনী গণতন্ত্র। মানুষ এখানে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে; কিন্তু তাদের বাক্‌স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের অধিকার থাকে না।

একটা দেশ, যা ন্যাটোর সদস্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পেতে আগ্রহী, সেই দেশে কীভাবে এত অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে? বিস্ময়ের ব্যাপার না? পুরো পৃথিবী এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত। এমন সময় তুরস্কের গণতন্ত্রের সামান্য অবশিষ্ট অংশ টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে।

ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়ার ক্ষমতা রাখেন বহাল রাষ্ট্রপতির সেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে জেলে পাঠিয়ে এরদোয়ানের কঠোর, স্বৈরাচারী শাসন এমন এক স্তরে গেছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল আনুষ্ঠানিকভাবে ইমামোগলুকে তাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। সরকারপন্থী থেকে সরকারবিরোধী—উভয় পক্ষই এই বিষয়ে মোটামুটি একমত যে ইমামোগলুকে এরদোয়ান রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখেন। ইমামোগলুর হাত থেকে এরদোয়ান নিষ্কৃতি চান।

ইমামোগলু ইস্তাম্বুলের গত তিনটি মেয়র নির্বাচনে এরদোয়ানের দল, জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। ২০১৯ সালের এপ্রিল নির্বাচনে তিনি এরদোয়ানের দলের মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করলে এরদোয়ান কারচুপির অজুহাতে ফলাফল বাতিল করে দেন। দুই মাস পর আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইমামোগলু ফের জয়ী হন আগের চেয়ে বড় ব্যবধানে।

পাঁচ বছর মেয়র থাকার পর ২০২৪ সালের স্থানীয় নির্বাচনে ইমামোগলু আবারও এরদোয়ানের দলের প্রার্থীকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর নির্বাচনী সাফল্য ধারাবাহিক। জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। সব মিলিয়ে ইমামোগলু পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম একজন প্রধান বিরোধী নেতা হয়ে উঠেছেন।

এখন এই সীমিত গণতন্ত্রও শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। আর এ কারণেই আরও বেশি মানুষ সাম্প্রতিক আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এরদ য় ন র র জন ত ক ত রস ক

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের আলোচনা ও ঐকমত্যের সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দলটি বলেছে, আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জনগণ শুধু কথায় নয়, বাস্তবে সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পদক্ষেপ দেখতে চায়।

শুক্রবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

তারা বলেন, এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক ও বিবৃতিতে আগামী বছরের পবিত্র রমজানের আগেই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ এবং তার পূর্বশর্ত হিসেবে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচারের প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের ঘোষিত প্রত্যয়ে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গণমানুষের রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাঠামোগত মৌলিক সংস্কার এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচারের ব্যবস্থা। এই বিষয় দুটির দৃশ্যমান অগ্রগতিই কেবল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি রচনা করতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সমাজের শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের মতামত, আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে দ্রুত ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়নের আহ্বান জানায় জেএসডি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়
  • প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • বর্তমান সংকটে হবস, রবীন্দ্রনাথ ও অমর্ত্য সেন যেখানে প্রাসঙ্গিক
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি