ঈদের ছুটিতে পদ্মাপার যেন মিনি কক্সবাজার
Published: 5th, April 2025 GMT
পদ্মা সেতু ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের কারণে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া, মাদারীপুরের শিবচর ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে গেছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পদ্মাপারে বাড়ছে পর্যটক; গড়ে উঠছে বিভিন্ন স্থাপনা। মাওয়া প্রান্তের লৌহজংয়ের বিচ্ছিন্ন পদ্মার চরেও গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র।
শিবচর ও জাজিরা প্রান্তেও পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে। প্রমত্তা পদ্মার সৌন্দর্য আর অনুপম পদ্মা সেতু হয়ে উঠেছে পর্যটকের অন্যতম আকর্ষণ।
ঈদুল ফিতরের ছুটি ঘিরে পদ্মা সেতু এলাকা ও পদ্মাপারের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার ঈদের চতুর্থ দিনেও লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাট, পদ্মা সেতু এলাকা, ঘোড়দৌড় বাজার পুরান থানা, শামুরবাড়ি, সিনহার বাড়ি, ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও স্পিডবোটে ভ্রমণ, পদ্মার চরে সব বয়সী মানুষের উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে।
লৌহজং উপজেলার পদ্মাপারে কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, আবার কেউ বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে। কেউ সেলফি তুলছেন, আবার কেউ গা ভাসাচ্ছেন পদ্মার জলরাশিতে। ট্রলারযোগে গান বাজিয়ে তীর ঘেঁষে এদিক-সেদিক ছুটছে কিশোর-যুবকেরা। সবাই ঈদ আনন্দে উৎফুল্ল। নদীতীরের নয়নাভিরাম পরিবেশ আর মানুষের মিলনমেলায় যেন আরেকটি মিনি কক্সবাজারে রূপ নিয়েছে পদ্মাপার। শিমুলিয়াঘাট ও শামুরবাড়িতে বসেছে হরেক রকম খেলনার দোকান ও নাগরদোলা।
শিমুলিয়াঘাটে বেড়াতে আসছেন বহু পর্যটক। নগরজীবন ছেড়ে অনেকেই আসছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে। এবারের ঈদে বিনোদনপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে পদ্মাপার। একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়ছে বালুময় ঢালু তীরে। পাশেই পদ্মার চরে কাঁশবন, হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে সবুজ ঘাস। এ যেন এক সমুদ্র সৈকত।
রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে শিমুলিয়া ঘাটে ঘুরতে আসা কলেজছাত্রী সাবিনা হক বলেন, ‘পদ্মা সেতু দেখতে এলাম। পদ্মাপারে এত বাতাস, মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো বাতাস।’
কামরুল সিকদার নামে একজনের ভাষ্য, পদ্মাপারে মৃধাবাড়ী ও শামুরবাড়ি অপূর্ব। কয়েক বছর ধরে এখানে বালিগাঁও থেকে ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন তারা।
পর্যটক আশিক ইসলাম বলেন, ‘সুবচনী থেকে ট্রলারে করে বন্ধুরা মিলে পদ্মা নদীতে ঘুরতে আসছি। আমরা পদ্মার চরে নেমে গোসল করলাম।’
ঢাকা থেকে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী শরীফ হোসেন জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলায় বিনোদন কেন্দ্রের অভাব। মানুষের যাওয়ার জায়গা নেই। এ জায়গাটি সুন্দর। নদীর পাড়ের স্নিগ্ধ পরিবেশ, শীতল বাতাস সবারই ভালো লাগবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পর্যটনের পাশাপাশি শিল্প-বাণিজ্যেও এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হয়েছে মুন্সীগঞ্জ, ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। বর্তমানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের স্পটে পরিণত হয়েছে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত।
পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত ঘুরে দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, শ্রীনগর ও সিরাজদীখান উপজেলার গ্রামীণ এলাকায় শহরের আবহ তৈরি হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পর থেকেই মুন্সীগঞ্জের তিনটি উপজেলার প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে। মানুষের জীবনযাত্রার মানেও পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে।
পদ্মাপারের বাসিন্দারা জানান, সেতু চালু হওয়ার পর দুই প্রান্তে তৈরি হয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। লৌহজংয়ে জেগে ওঠা পদ্মার চরে গড়ে উঠেছে একাধিক পর্যটন কেন্দ্র। সেতু চালুর পর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই আসছে অসংখ্য মানুষ। ফলে আগের পেশা বদল করে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের অনেকেই এখন পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করছেন।
কথা হয় শরীয়তপুরের নাওডোবা মোড়ে ফুড এক্সপ্রেস নামে রেস্তোরাঁর তরুণ উদ্যোক্তা তারিক আহমেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, পদ্মা সেতু ঘিরে খাবার ও বিনোদন কেন্দ্রের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। সেতু উদ্বোধনের পর দর্শনার্থীর ভিড় বেড়েছে। তাঁর বিক্রিও বেড়েছে। সেতুসংলগ্ন সড়কে এখন রেস্তোরাঁ ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। এ ছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গার মোড়ে গোলচত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় কয়েকটি স্পট। একই অবস্থা মাদারীপুরের শিবচরেও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু ঈদের ছুটিতেই নয়, শুক্র ও শনিবার এই এলাকায় দর্শনার্থীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হয়। মাওয়া প্রান্ত থেকে শুধু সেতু দেখতেই প্রতিদিন ৩০টির বেশি স্পিডবোট ছেড়ে যায়। প্রতিটি স্পিডবোট অন্যান্য দিন দু-একটি ট্রিপ পেলেও সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে ১০-১২টির বেশি ট্রিপ পায়।
স্পিডবোটচালক শামসুদ্দিন বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুপুরের পর থেকে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। তবে সেতুর নিরাপত্তার স্বার্থে কাছে ঘেঁষতে পারছেন না তারা।
কয়েকজন হকার ও খাবার বিক্রেতা জানান, পদ্মা সেতু দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে। ঈদ বা ছুটির দিনে তাদের বেচাকেনা দ্বিগুণের বেশি হয়।
মাওয়ার হোটেল ব্যবসায়ী আলিফ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে জনসমাগম বেশি। সেতুকে কেন্দ্র করে মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাট এখন পর্যটনের কেন্দ্রস্থল।
লৌহজং উপজেলার মাওয়ার বাসিন্দা হুমায়ুন আহমেদ সমকালকে বলেন, শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায় নতুন নতুন হোটেল-রেস্তোরাঁ তৈরি হচ্ছে। পদ্মার তীরে বসে রুপালি ইলিশ ভাজা খেতে খেতে স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখার মুহূর্ত অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি করে। পদ্মা সেতুকে ফ্রেমের পেছনে রেখে মোবাইল ফোনে সেলফিসহ নানা ভঙ্গিমায় ছবি তুলছেন দর্শনার্থীরা।
হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকদের ভাষ্য, পদ্মা সেতু ঘিরে গড়ে ওঠা ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর থেকে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক আসছেন। তারাই এখন মাওয়ার শিমুলিয়া ফেরিঘাটের হোটেল-রেস্তোরাঁর মূল গ্রাহক। তাই ঘাটকেন্দ্রিক খাবারের ব্যবসা বেশি জমেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদ ম প র প র পদ ম প র উপজ ল র ল হজ য় ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
নায়িকা হতে আসিনি, তবে...
গুটি, সুড়ঙ্গ, মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন থেকে ওমর—সব সিনেমা-সিরিজেই প্রশংসিত হয়েছে আইমন শিমলার অভিনয়। অল্প সময়ের উপস্থিতিতেও নিজের ছাপ রাখতে পেরেছেন এই তরুণ অভিনেত্রী। ধূসর চরিত্রেও তিনি সাবলীল, অন্য তরুণ অভিনেত্রীদের থেকে এখানেই আলাদা শিমলা। তবে একটা কিন্তু আছে। এখন পর্যন্ত তাঁর অভিনীত আলোচিত চরিত্রগুলোর সবই চাটগাঁইয়া। শিমলা নিজে চট্টগ্রামের মেয়ে, একটা সময় পর্যন্ত বন্দরনগরীর বাইরে চেনাজানা ছিল সীমিত। এক সিরিজে তাঁর চাটগাঁইয়া ভাষা আলোচিত হওয়ায় পরপর আরও কাজে তাঁকে চাটগাঁইয়া চরিত্রের জন্য ভেবেছেন নির্মাতা।
এ প্রসঙ্গ দিয়েই অভিনেত্রীর সঙ্গে আলাপের শুরু করা গেল। শিমলা জানালেন, এ নিয়ে তাঁর নিজেরও অস্বস্তি আছে। চেষ্টা করছেন ‘চাটগাঁইয়া দুনিয়া’র বাইরে যেতে। সঙ্গে এ–ও জানিয়ে রাখলেন, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তাঁর নিজের চরিত্র পছন্দ করে নেওয়ার সুযোগ কমই ছিল।
‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুটিংয়ের ঠিক আগে জেনেছি চরিত্রটি সম্পর্কে। তখন তো কিছু করার থাকে না। তবে যেসব কাজ করেছি, সবই আলোচিত পরিচালক আর অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে; এ অভিজ্ঞতার মূল্যও কম নয়। শিহাব (শিহাব শাহীন) ভাইয়ের সঙ্গে মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন, কাছের মানুষ দূরে থুইয়া, রবিউল আলম রবি ভাইয়ের সঙ্গে ফরগেট মি নট আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। এ ছাড়া (শহীদুজ্জামান) সেলিম ভাইয়ের কথা বিশেষভাবে বলব। সুড়ঙ্গ ও ওমর—দুই সিনেমায় তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন,’ বলছিলেন তিনি।
ঈদে মুক্তি পাওয়া এম রাহিমের সিনেমা জংলিতেও আছেন শিমলা। এ ছবিতে অবশ্য তাঁর চরিত্রটি চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলে না। সে জন্য সিনেমাটি নিয়ে তিনি বেশি উচ্ছ্বসিত। ‘মুক্তির পর থেকে সিনেমা তো বটেই, আমার অভিনীত চরিত্রটি নিয়ে প্রশংসা পাচ্ছি কিন্তু দুঃখের কথা, আমি নিজেই এখনো দেখতে পারিনি। ব্যক্তিগত ঝামেলা, শুটিংয়ে ব্যস্ততার কারণে সম্ভব হয়নি। শিগগিরই আমার টিমের সঙ্গে দেখতে চাই,’ বলছিলেন তিনি।
আইমন শিমলা