ইউরি গ্যাগারিনের ঐতিহাসিক মহাকাশ যাত্রার বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকায় শুরু হয়েছে গ্যাগারিন বিজ্ঞান ও শিল্প উৎসব-২০২৫। মানবজাতির প্রথম মহাকাশ যাত্রার ৬৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই উৎসবের আয়োজন করেছে ঢাকার রাশিয়ান হাউস।

সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।

ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউজের পরিচালক মিস্টার পাভেল এ.

দ্ভইচেনকভ উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন এবং অতিথিদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। তিনি ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল গ্যাগারিনের অগ্রণী যাত্রার কথা তুলে ধরেন, এটিকে ‘মানব সভ্যতা মহাকাশ যুগে প্রবেশ’ মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেন, যা মানবতার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করে।

দ্ভইচেনকভ রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের উপর জোর দেন।

তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো চলমান প্রকল্পগুলোর কথা উল্লেখ করেন এবং রাশিয়া ও সোভিয়েত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি স্নাতকদের অবদানের কথা স্বীকার করেন যাদের প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় ভূমিকা বাংলাদেশের উন্নয়নকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নিয়েছে। তিনি মহাকাশ বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের প্রশংসা করেন এবং তরুণদের বড় স্বপ্ন দেখতে ও মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে উৎসাহিত করেন।

বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে আয়োজিত এই উৎসবের লক্ষে সপ্তাহব্যাপী ধারাবাহিক কার্যক্রমের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক কৌতূহল, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনকে অনুপ্রাণিত করা।

উদ্বোধনী আলোচনার পর, দ্ভইচেনকভ আনুষ্ঠানিকভাবে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘রাশিয়ান স্পেস এক্সপিডিশনস’ উদ্বোধন করেন। এরপর ‘ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পরে প্যারেড’ তথ্যচিত্রের প্রদর্শনীর পর এবং একটি জ্যোতির্বিজ্ঞান কর্মশালা শুরু হয়।

সপ্তাহব্যাপী উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকবে সেমিনার এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান কর্মশালা; রকেট মডেল তৈরির প্রতিযোগিতা; মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা; ‘মহাকাশে প্রথম মানুষ’ বিষয়ের উপর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।

উৎসবটি ১২ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউসের পরিচালক কর্তৃক সকল অংশগ্রহণকারীদের সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপ্তি হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথি বক্তারা ইউরি গ্যাগারিনকে ‘বিশ্ব বীর’ এবং মানুষের সাহস ও কৌতূহলের চিরন্তন প্রতীক বলে অভিহিত করেন।

সমাপনী বক্তব্যে মিস্টার দ্ভইচেনকভ এই অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনসহ সকল অংশগ্রহণকারী ও অতিথিদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি সবাইকে তাদের অন্বেষণের যাত্রা অব্যাহত রাখতে উৎসাহিত করেন, সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন যে ‘আকাশ সীমা নয়, এটি কেবল শুরু’। তিনি একটি অনুপ্রেরণামূলক আহ্বান দিয়ে শেষে বলেছিলেন ‘আসুন এগিয়ে যাই একসাথে, তারার দিকে!’

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎসব র

এছাড়াও পড়ুন:

বকুলতলায় বৃষ্টির সুর

নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক 
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ১০ দিন পর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বাণিজ্য শুরু 
  • ঈদের ছুটি শেষে ব্যাংক খুলেছে, ভিড় নেই তেমন
  • ছুটি শেষে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হচ্ছে কাল
  • টানা ১০ দিনের ছুটি শেষ, রবিবার খুলছে সরকারি অফিস
  • চেনা রূপে বরিশাল নদীবন্দর, ঈদফেরত যাত্রীদের ভিড়
  • রাজশাহীতে ঢাকাগামী টিকিটে বাড়তি ভাড়া আদায়, ৩ কাউন্টারকে জরিমানা
  • কাহালুর জামাই মেলায় মানুষের ঢল
  • ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে ঈদের সেরা চার নাটক