দেশে–বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে
Published: 18th, April 2025 GMT
বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দেশে–বিদেশে কমে গেছে। জানুয়ারির তুলনায় গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ১৬ কোটি টাকা বা ৫ শতাংশের বেশি। একইভাবে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ৬২ কোটি টাকা বা ১৬ শতাংশ।
দেশে–বিদেশে এ দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার–সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রতিবেদনে গত ফেব্রুয়ারির ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়।
দেশে–বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমলেও ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে বসবাসকারী বা ভ্রমণে আসা বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে। জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিলেন ২৫৩ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে সেই খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ২৬৮ কোটি টাকায়। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে এ দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিদেশিদের খরচ বেড়েছে ১৫ কোটি টাকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ করা হয়েছে ২৯৭ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে যার পরিমাণ ছিল ৩১৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ ১৬ কোটি টাকা কমে গেছে। একইভাবে ফেব্রুয়ারিতে এ দেশের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খরচ করা হয়েছে ৩৮৪ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে যার পরিমাণ ছিল ৪৪৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ৬২ কোটি টাকা বা ১৬ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড–সংক্রান্ত গত কয়েক মাসের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। আবার এ দেশে অবস্থানকারী বিদেশিদের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কার্ডধারীরা। অর্থাৎ দেশে ও বিদেশের মাটিতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার এখন যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিরা সর্বোচ্চ ৫২ কোটি টাকা খরচ করেছেন। যদিও জানুয়ারিতে তার পরিমাণ আরও বেশি ছিল। অথচ ২০২৪ সালের জুনেও বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করতেন ভারতে। সে মাসে ভারতে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিলেন ৯২ কোটি টাকা। ওই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছিল ৭৭ কোটি টাকা। আর সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমে নেমে এসেছে ২৯ কোটি টাকায়। জানুয়ারিতেও যা ছিল প্রায় ৩৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাত মাসের ব্যবধানে ভারত শীর্ষ স্থান থেকে নেমে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে ভারত। তাতে ভারতে ভ্রমণ ও চিকিৎসার প্রয়োজনে বাংলাদেশিদের যাতায়াত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে। চিকিৎসা ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভারতের বড় বিকল্প হয়ে উঠেছে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া। এ কারণে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় এখন বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের বাইরে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার ছিল থাইল্যান্ডে। দেশটিতে গত ফেব্রুয়ারিতে খরচ হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে যার পরিমাণ ছিল ৬৪ কোটি টাকা। থাইল্যান্ডের পরের অবস্থানে সিঙ্গাপুর। ফেব্রুয়াতিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সিঙ্গাপুরে খরচ করা হয়েছে ৩৯ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে দেশটিতে খরচ হয়েছিল ৩৮ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে হওয়ায় সার্বিকভাবে খরচের পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডের সুদহার বাড়তে থাকায় কার্ডধারীরা খরচের ক্ষেত্রে কিছুটা লাগাম টেনেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক র ড ট ক র ড ব যবহ র কর ক র ড ট ক র ড র ব যবহ র গত ফ ব র য় র ত ম স র ব যবধ ন খরচ কম ছ র পর ম ণ অন য য়
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ততার অভিযোগ মিথ, বললেন মার্কিন সাবেক কূটনীতিক
সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন ড্যানিলুইৎজ বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত ছিল বলে প্রচার করে থাকে বিগত সরকার আর তার সমর্থকেরা। তাদের ওই প্রচারণা মিথ। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে (এনএসইউ) অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ড্যানিলুইৎজ বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেন। ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষিতে জুলাই বিপ্লবের তাৎপর্য: পেছন ফিরে দেখা, সামনে এগিয়ে চলা’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে এনএসইউর সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি)।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেনেভায় বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এবং এসআইপিজির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মুহাম্মদ সুফিউর রহমান। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান কীভাবে ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে তা বলতে গিয়ে ২০০৭-০৮ সালের সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলের প্রসঙ্গ টানেন।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনীতি বিভাগের সাবেক প্রধান জন ড্যানিলুইৎজ বলেন, গত জুলাই-আগস্টে এখানে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিল বলে বিগত সরকার আর তাদের সমর্থকেরা প্রচার করে থাকে। তাদের এই প্রচারণা মিথ। তিনি বলেন, ‘মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাইনি। আমি তাদের (বিগত সরকার আর তাদের সমর্থকেরা) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ দিতে বলেছি। কিন্তু তারা কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিবর্তনে যুক্ত ছিল না, তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।’
জন ড্যানিলুইৎজ গত আগস্টের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এক-এগারোর কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে বিশ্বাস করেন, যেসব ঘটনাপ্রবাহের কারণে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছিল, তাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত ছিল। হয়তো আপনারা আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের এতে কোনো ভূমিকা ছিল না। পরের দুই বছর বাংলাদেশের কাজের ধারা কেমন হবে, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখনকার সেনা নেতৃত্ব।’ তিনি বলেন, এর মানে কিন্তু এটা নয় যে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির আগের ঘটনাপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উদ্বেগ ছিল না। এর মানে আবার এটাও নয় যে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত থেকে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কাজ করেনি।
ড্যানিলুইৎজ বলেন, ওই সময়কালের (এক-এগারো) প্রসঙ্গ এ জন্যই উল্লেখ করছেন, কারণ এখনকার (গত জুলাই-আগস্ট) পরিবর্তনের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ততার কথা বলা হচ্ছে।
এসআইপিজির পরিচালক শেখ তৌফিক এম হক আলোচনায় সঞ্চালনা করেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান, এনএসইউ বিজনেস স্কুলের ডিন এ কে এম ওয়ারেসুল ইসলাম এবং বিজিএমওএ সভাপতি ফয়সল সামাদ।