নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর এই বয়সে বাংলাদেশের জাতীয় পটপরিবর্তনের অস্থিরতা থেকে বহুদূরে শান্ত অবসরজীবন বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি এখন দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকে খুঁজে পান। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য এমন এক দায়িত্বে রয়েছেন; যা তাঁর দৃষ্টিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়, বরং অবশ্যপালনীয় কর্তব্য।

অধ্যাপক ইউনূস এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি চটজলদি জবাব দেন, এটা (সরকারপ্রধানের পদে বসা) কখনোই তাঁর নিজের জন্য নয়; বরং দেশের জনগণের জন্য।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এটা আমার নয়, এটা সেসব মানুষের চাওয়া, যাঁরা পরিবর্তন চেয়েছিলেন। তাঁরা যেভাবে চলতে চান, আমি শুধু তাঁদের সেভাবে চলতে সহায়তা করছি।’

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদমাধ্যম বারনামাকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।

ক্ষুদ্রঋণ ধারণার পথিকৃৎ হিসেবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি পাওয়া একজন ব্যক্তি হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের আসনে পা রাখাটা কখনোই অধ্যাপক ইউনূসের পরিকল্পনার অংশ ছিল না। তাঁর ভাষায়, পরিস্থিতি তাঁকে পছন্দ বেছে নেওয়ার বিষয়ে খুব কমই সুযোগ দিয়েছে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে ১১ থেকে ১৩ আগস্ট অধ্যাপক ইউনূস দেশটি সফর করেন। সফরের শেষ দিকে অধ্যাপক ইউনূসের সাক্ষাৎকারটি নেন বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দুরার রাজ। সঙ্গে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সার্ভিসের সম্পাদক ভুন মিয়াও পিং ও বারনামার ইকোনমিক নিউজ সার্ভিসের সহকারী সম্পাদক কিশো কুমারী সুশেদারাম।

ক্ষুদ্রঋণ ধারণার পথিকৃৎ হিসেবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি পাওয়া একজন ব্যক্তি হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের আসনে পা রাখাটা কখনোই অধ্যাপক ইউনূসের পরিকল্পনার অংশ ছিল না। তাঁর ভাষায়, পরিস্থিতি তাঁকে পছন্দ বেছে নেওয়ার বিষয়ে খুব কমই সুযোগ দিয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক উপাদানগুলো পুরো ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।মুহাম্মদ ইউনূস, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান

একজন নেতার চেয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একজন অভিভাবক হিসেবেই বর্তমানে নিজের ভূমিকা তুলে ধরতে চান অধ্যাপক ইউনূস। নিজের সামনে থাকা বিশাল চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়েও তিনি অকপটে স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এখানে অসুবিধা অনেক। অনেকেই এটাকে ব্যাহত করতে চায়। কেননা, বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক উপাদানগুলো পুরো ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।’

আরও পড়ুনরোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ১ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে গত দেড় দশকে প্রাপ্তবয়স্ক অনেকে নতুন ভোটার হয়েছেন, যাঁদের কেউ আগে কখনো ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। তাঁদের বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘কেউ ১০ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। কেউ ১৫ বছর ধরেও।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘একবার ভাবুন, আপনার ১৮ বছর বয়স হয়েছে, আপনি ভোট দিতে আগ্রহী। কিন্তু আপনি সেই সুযোগ কখনো পাননি। কারণ, সত্যিকার অর্থে কখনো নির্বাচনই হয়নি। এখন তাঁরা ১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার ভোট দিতে পারবেন।’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো.

সাহাবুদ্দিন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা অধ্যাপক ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার ভার দেন।

অধ্যাপক ইউনূসের এ কথায় জাতীয় পরিবর্তনের প্রত্যাশার আলো ফুটে ওঠে। বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা অধ্যাপক ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার ভার দেন।

আরও পড়ুনদ্রুত বিকাশমান বিশ্ববাজারে যৌথভাবে হালাল পণ্য উৎপাদন করতে পারে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ: ড. ইউনূস১৫ আগস্ট ২০২৫

তবে অধ্যাপক ইউনূসের পেশাজীবন শুরু হয়েছিল এরও কয়েক দশক আগে, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে চরম দরিদ্র মানুষদের সহায়তা করার মধ্য দিয়ে। তখন তিনি ৪২টি পরিবারকে মাত্র ২৭ ডলার ব্যক্তিগত ঋণ দিয়েছিলেন। এ অর্থে তাঁরা উচ্চ সুদের বোঝা ছাড়াই বিক্রির জন্য পণ্য উৎপাদন করতে পেরেছিলেন।

একবার ভাবুন, আপনার ১৮ বছর বয়স হয়েছে, আপনি ভোট দিতে আগ্রহী। কিন্তু আপনি সেই সুযোগ কখনোই পাননি। কারণ, সত্যিকার অর্থে কখনো নির্বাচনই হয়নি। এখন তাঁরা ১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার ভোট দিতে পারবেন।মুহাম্মদ ইউনূস, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান

অধ্যাপক ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক উদ্যোগটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় গবেষণাধর্মী পাইলট প্রকল্প হিসেবে ১৯৭৬ সালে যাত্রা শুরু করেছিল। ১৯৮৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন।

আরও পড়ুনগণ–অভ্যুত্থানের পরে আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফর আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল: অধ্যাপক ইউনূস১৪ আগস্ট ২০২৫

গ্রামীণ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটি ১০ দশমিক ৭২ মিলিয়ন (১ কোটি ৭ লাখ ২০ হাজার) গ্রহীতাকে মোট ৪০ হাজার ৩৬৮ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের ৯৭ শতাংশই নারী।

আরও পড়ুনমালয়েশিয়ায় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন মুহাম্মদ ইউনূস১৩ আগস্ট ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক সরক র র র জন য বছর র কখন ই আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

কোনো চাঁদাবাজ দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবো না: চরমোনাই পীর

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও পীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘‘বিদেশিদের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশের মানুষ আর চলতে চায় না। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তাই মানুষ ইসলামকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। এজন্য দেশপ্রেমিক ইসলামিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীতে ইসলামের পক্ষে ভোটের বাক্স হবে একটি। আমরা ইসলামী দলগুলো আর কোনো চাঁদাবাজ দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবো না।’’

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ লক্ষ্মীপুর জেলা শাখা আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রেজাউল করীম বলেন, ‘‘একটি দল আছে, যারা পূর্বে ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে একাধিকবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দলবাজিসহ নানা অপরাধ করেছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীও করছে। আবারো ক্ষমতায় যেতে ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ দেশের ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে ফ্যাসিস্ট বিদায় করেছে পুরনো বন্দোবস্তর জন্য নয়। নতুন সিস্টেম ও নতুন কাউকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। কারণ দেশের মানুষ গত ৫৩ বছর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ক্ষমতা দেখেছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশের মানুষ পুরনো সিস্টেম আর দেখতে চায় না। পুরনো বউকে নতুন কাপড়ে সাজিয়ে এনে জনগণের সামনে উপস্থাপন করলে জনগণ আর মেনে নেবে না। তাই নির্বাচনের পূর্বে গণভোট দিতে হবে। পিআর কার্যকর করতে হবে। জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নির্বাচনের পূর্বেই দিতে হবে। বিদেশি অথবা দেশের কোনো অপশক্তির ইশারায় যদি এগুলো কার্যকর করা না হয়। তাহলে, ইসলামী আন্দোলন দেশের মানুষকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’’

ঢাকা/জাহাঙ্গীর/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা
  • ইকুয়েডরে গণভোটে ‘না’ এগিয়ে, বিদেশি সামরিক ঘাঁটিতে সায় নেই মানুষের
  • ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করলে গুলির নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের
  • ‘বিহারে ভোট কিনতে ব্যবহার হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ১৪ হাজার কোটি রুপি’
  • গণভোট ভবিষ্যতে সংকট তৈরি করবে: রিজভী
  • নেতারা বলবেন, জনতা শুনবে—এই সংস্কৃতি বদলাতে চায় মানুষ: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
  • একটি দল গণভোটে না দেওয়ার জন্য ক্যাম্পেইন করছে: আখতার 
  • রাজনীতি আগে যেমন ছিল, সে রকম হবে না, সেই সুযোগও নেই: সৈয়দা রিজওয়ানা
  • আওয়ামী লীগের লকডাউন, অগ্নিসন্ত্রাস ও ‘রাজনৈতিক মৃত্যু’
  • কোনো চাঁদাবাজ দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবো না: চরমোনাই পীর