যোগ্যতার ভিত্তিতে তালিকা প্রকাশে বিলম্ব, কলকাতায় মধ্যশিক্ষা ভবন অবরুদ্ধ
Published: 23rd, April 2025 GMT
যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের পৃথক তালিকা প্রকাশ না করায় কলকাতার মধ্যশিক্ষা পর্ষদ (এসএসসি) দপ্তর অবরুদ্ধ করে রেখেছেন চাকরিচ্যুত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। সোমবার বিকেল থেকে চলা আন্দোলনে মধ্যশিক্ষা ভবনের মধ্যে আটকা পড়েছেন পর্ষদের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারসহ একাধিক কর্মকর্তা।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল হওয়ায় আন্দোলনে নামেন নিজেদের ‘যোগ্য’ দাবি করা চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা। তাঁদের মূল দাবি, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। এ দাবির ভিত্তিতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ঘোষণা করেছিলেন, ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে এসএসসির ওয়েবসাইটে যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা সোমবার বিকেলে মধ্যশিক্ষা ভবন ঘেরাও করেন এবং রাতভর পর্ষদ কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখেন। মঙ্গলবার সকালেও অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশ দেননি। আগের বৈঠকেও আন্দোলনকারীদের জানানো হয়েছিল, আইনজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী তালিকা প্রকাশ করা হবে। এখনো সেই আইনগত পরামর্শ না পাওয়ায় তালিকা প্রকাশ সম্ভব হয়নি।’
এদিকে মঙ্গলবার সকালে ভবনের ভেতর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে পর্ষদ চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, ‘এই আন্দোলনে এখন শুধু শিক্ষকেরা নয়, বহিরাগতরাও যুক্ত হয়েছেন।’
এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, আন্দোলনকারীদের অপমান করার উদ্দেশ্যেই পর্ষদ চেয়ারম্যানের এ ধরনের বক্তব্য।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারি বয় থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার আবু সালেহ, মাসে আয় কত জানেন
পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। অভাবের সংসারে নিজেকে একরকমের বোঝাই মনে করতেন। কিছু একটা করা দরকার। পরিস্থিতি যেন আবু সালেহ আহমেদকে দিন দিন আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেক স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্নে নিজেকে অটুট রেখেছেন। আর পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকটা পথ। ধৈর্য নিয়ে নিজের স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আজ সালেহ নিজেকে বলতেই পারেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। কেননা এখন তিনি মাসে আয় করেন তিন লাখ টাকা।
আবু সালেহ আহমেদ। ডাকনাম আফনান। বাবা মো. কুতুব উদ্দিন শেখ মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার তারাপুর গ্রামের আবু সালেহ আহমেদ এখন অবশ্য এলাকায় থাকেন না। থাকেন ঢাকার কাঁঠালবাগানে। এখান থেকেই আফনান গড়ে মাসিক তিন লাখ টাকা আয় করেন। ছোট্ট একটা অফিসও নিয়েছেন, যেখানে চারজন ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান করেছেন।
২০১৬ সালে সেনগ্রাম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাসের পর ২০২০ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন আবু সালেহ আহমেদ। এখন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে স্থাপত্য বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ছাত্রাবস্থাতেও তাঁর মাসিক আয় কোনো কোনো মাসে পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২৭ বছর বয়সী আবু সালেহ আহমেদ বিয়ে করেছেন গত বছর। স্ত্রীর নাম ফাতেমা জোহরা।
পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই ছিল কঠিন
আফনান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আসলে মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করে বের হয়েছি। তখন ইচ্ছা থাকলেও আমাদের সামর্থ্য ছিল না ভালো জায়গায় পড়ার। আমার চার বছর যে সময়টা কেটেছে, আসলে খুব কষ্টে কেটেছে। কলেজে আমি এক্সট্রা কারিকুলামে ভালো ছিলাম, ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলাম, বেশ কিছু জায়গায় বিতর্ক করে চাম্পিয়নও হয়েছি। স্যারদের চোখে পড়েছি। একসময় আর পেরে উঠছিলাম না, তাই দুই বছর পড়তে পড়তেই টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিতে গিয়েছিলাম। লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা আমার কথা শুনে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যার ফলে আমি পড়াশোনাটা শেষ করেছি।’
আবু সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘দিনগুলো কঠিন ছিল। টিউশনি করাতাম। ১ হাজার ৫০০ টাকা পেতাম। ১ হাজার টাকা মেসভাড়া ও ৫০০ টাকায় খাওয়া। সকালে ও রাতে খেতাম। মাসে তা–ও খাওয়ার বিল আসত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। মেসের বাকিরা সেটা দিয়ে দিত। তারপর একদিন ২ হাজার ৫০০ টাকার একটা টিউশনি পেয়ে একটু যেন শক্তি পেলাম। এভাবেই আমার ডিপ্লোমার চার বছর কেটেছে।’
একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায়
২০২০ সালে ডিপ্লোমা পড়া শেষ করেই একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আবু সালেহ আহমেদ। এসেই শুরু করেন আবার জীবনসংগ্রাম। কোথাও কাজ পাচ্ছিলেন না। শেষমেশ ফুডপ্যান্ডায় রাইডার (ডেলিভারি বয়) হিসেবে কাজ নেন তিনি। কিন্তু শুধু ফুডপ্যান্ডায় কাজের আয় দিয়ে তাঁর চলছিল না। তখন থেকেই কাজের পাশাপাশি কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলেন। কিছু জায়গায় খোঁজ নিয়ে ভর্তি হয়ে যান তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটিতে। খাবার ডেলিভারির পাশাপাশি কাজও শিখতেন।
আবু সালেহ আহমেদ