ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের (বরখাস্ত) একটি বাগানবাড়িসহ চারটি বাড়ি এবং তিনটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া জিয়াউলের নামে থাকা আরও নয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসেবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর বাইরে তাঁর নামে থাকা বিভিন্ন কৃষিজমিও জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.

জাকির হোসেন আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জিয়াউল আহসানের আটতলা একটি বাড়ি, বরিশালে একটি বাগানবাড়ি, একটি একতলা বাড়ি ও নির্মাণাধীন আটতলা একটি বাড়ি রয়েছে; আর ফ্ল্যাট তিনটি ঢাকার মিরপুর, উত্তরা ও মিরপুর ডিওএইচএসে।

গত ১৬ আগস্ট সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে গভীর রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এখন তিনি কারাগারে আছেন।

জিয়াউল আহসান সর্বশেষ টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। গত ১৫ বছর আলোচিত ও প্রভাবশালী এই কর্মকর্তাকে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম–দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে প্রায় ৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২৩ জানুয়ারি জিয়াউল আহসান ও তাঁর স্ত্রী নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

আরও পড়ুনদেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ জিয়াউল আহসানের২৩ জানুয়ারি ২০২৫

পরের দিন দুদক জানায়, তারা অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে, জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার নাগরিকত্ব নিয়ে বিপুল অর্থ অবৈধভাবে সেখানে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি দুবাই, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে বড় অঙ্কের টাকা পাচার করেছেন। এ ছাড়া তাঁর দেশে–বিদেশে বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১৭ সালে জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছে দুদক। ওই নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় জিয়াউল আহসান ও তাঁর পরিবার দুই লাখ মার্কিন ডলার মালয়েশিয়ার দুটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিশোধ করেন। এ ছাড়া জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ডে প্রায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার অবৈধভাবে বিনিয়োগ করেছেন।

দুদক অনুসন্ধানকালে আরও জানতে পারে, জিয়াউল আহসান দুবাইয়ের ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংক নামের একটি ব্যাংকের হিসাবে ২০ কোটি টাকা ও আরেকটি ব্যাংক হিসাবে ৭৫ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক হিসাবে ৭৫ কোটি টাকা ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংক হিসাবে বড় অঙ্কের টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুনসাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের আট দিনের রিমান্ড১৬ আগস্ট ২০২৪

১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়া জিয়াউল আহসান ২০০৯ সালে মেজর থাকাকালে র‍্যাব-২–এর উপ-অধিনায়ক হন। ওই বছরই তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন এবং র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার পরিচালকের দায়িত্ব পান। পরে কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হন। ২০১৬ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর কিছুদিন তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৭ সালে তাঁকে এনটিএমসির পরিচালক করা হয়। ২০২২ সালে সংস্থাটিতে মহাপরিচালক পদ সৃষ্টি করে তাঁকে এনটিএমসির নেতৃত্বে রাখা হয়।

আরও পড়ুনএনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন র একট

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুতে এআই ব্যবহারে থাকবে শিথিলতা, তবে অপব্যবহার করা যাবে না: নির্বাচন কমিশন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে। তবে এর অপব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য জুলফিকার মাহমুদ।

রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫-এর আচরণবিধিবিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদের এক দাবির জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধির ৭–এর ঘ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করা যাবে না। আমরা যারা ছোট সংগঠন, আমাদের তহবিল সীমিত। আমরা নির্বাচনী প্রচারের জন্য এআই ব্যবহার করে দু-এক মিনিটের ভিডিও বানিয়ে প্রচার কার্যক্রম চালাতে চাই। আমাদের দাবি, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যেন শিথিল নীতি গ্রহণ করে।’

মুরাদ আরও বলেন, বিগত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কিছু ত্রুটি লক্ষ করা গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত রাখার জন্য যতগুলো ভোটকক্ষ থাকবে, সব কটি সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় রাখতে হবে। সবার জন্য সেই সিসিটিভি ফুটেজ উন্মুক্ত রাখতে হবে। ভোট গ্রহণকে স্বচ্ছ রাখার জন্য ভোটকক্ষের ভেতরে জাতীয় গণমাধ্যমকে সরাসরি সম্প্রচার করার অনুমতি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জকসুর নির্বাচন কমিশনার জুলফিকার মাহমুদ বলেন, ‘এআই ব্যবহার করে বিভিন্নজনের চরিত্র হনন করা হয়, অপপ্রচার চালানো হয়। সেদিক থেকে চিন্তা করে এআই ব্যবহার নিষিদ্ধ রেখেছিলাম। তোমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এআই ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে প্রচার–প্রসারে, তবে অপব্যবহার করা যাবে না। আর সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আলোচনা করে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ