এবার জিয়াউল আহসানের বাগানবাড়িসহ চারটি বাড়ি, ৩টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ
Published: 24th, April 2025 GMT
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের (বরখাস্ত) একটি বাগানবাড়িসহ চারটি বাড়ি এবং তিনটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া জিয়াউলের নামে থাকা আরও নয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসেবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর বাইরে তাঁর নামে থাকা বিভিন্ন কৃষিজমিও জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জিয়াউল আহসানের আটতলা একটি বাড়ি, বরিশালে একটি বাগানবাড়ি, একটি একতলা বাড়ি ও নির্মাণাধীন আটতলা একটি বাড়ি রয়েছে; আর ফ্ল্যাট তিনটি ঢাকার মিরপুর, উত্তরা ও মিরপুর ডিওএইচএসে।
গত ১৬ আগস্ট সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে গভীর রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এখন তিনি কারাগারে আছেন।
জিয়াউল আহসান সর্বশেষ টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। গত ১৫ বছর আলোচিত ও প্রভাবশালী এই কর্মকর্তাকে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম–দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে প্রায় ৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২৩ জানুয়ারি জিয়াউল আহসান ও তাঁর স্ত্রী নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
আরও পড়ুনদেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ জিয়াউল আহসানের২৩ জানুয়ারি ২০২৫পরের দিন দুদক জানায়, তারা অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে, জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার নাগরিকত্ব নিয়ে বিপুল অর্থ অবৈধভাবে সেখানে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি দুবাই, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে বড় অঙ্কের টাকা পাচার করেছেন। এ ছাড়া তাঁর দেশে–বিদেশে বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৭ সালে জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছে দুদক। ওই নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় জিয়াউল আহসান ও তাঁর পরিবার দুই লাখ মার্কিন ডলার মালয়েশিয়ার দুটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিশোধ করেন। এ ছাড়া জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ডে প্রায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার অবৈধভাবে বিনিয়োগ করেছেন।
দুদক অনুসন্ধানকালে আরও জানতে পারে, জিয়াউল আহসান দুবাইয়ের ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংক নামের একটি ব্যাংকের হিসাবে ২০ কোটি টাকা ও আরেকটি ব্যাংক হিসাবে ৭৫ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক হিসাবে ৭৫ কোটি টাকা ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংক হিসাবে বড় অঙ্কের টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুনসাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের আট দিনের রিমান্ড১৬ আগস্ট ২০২৪১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়া জিয়াউল আহসান ২০০৯ সালে মেজর থাকাকালে র্যাব-২–এর উপ-অধিনায়ক হন। ওই বছরই তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন এবং র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার পরিচালকের দায়িত্ব পান। পরে কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হন। ২০১৬ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর কিছুদিন তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৭ সালে তাঁকে এনটিএমসির পরিচালক করা হয়। ২০২২ সালে সংস্থাটিতে মহাপরিচালক পদ সৃষ্টি করে তাঁকে এনটিএমসির নেতৃত্বে রাখা হয়।
আরও পড়ুনএনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু১৮ ডিসেম্বর ২০২৪উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।