যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত অভিনেতাকে লাল গালিচায় হাঁটতে দেওয়া হলো না
Published: 15th, May 2025 GMT
যৌন সহিংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ায় ফরাসি অভিনেতা থিও নাভারো-মুসিকে এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি পরিচালক ডমিনিক মলের চলচ্চিত্র ‘Dossier 137’-এ পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
উৎসব শুরুর আগেই উৎসবের মহাসচিব থিয়েরি ফ্রেমো চলচ্চিত্রের প্রযোজনা দলের সঙ্গে একমত হয়ে, থিও নাভারো-মুসিকে লাল গালিচায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। যা কান চলচ্চিত্র উৎসবের ইতিহাসে একটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপ।
জানা গেছে, তিনজন সাবেক সঙ্গিনী ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে থিওর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার অভিযোগে মামলা করেছিলেন। দীর্ঘ তদন্তের পর ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে মামলা প্রমাণের অভাবে খারিজ হয়ে যায়।
তবে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা আবারও মামলা করতে যাচ্ছেন। এইবার আদালতে নিজ উদ্যোগে (পার্টি সিভিল হিসেবে) অভিযোগ আকারে।
অভিনেতার আইনজীবী, মে পুজে-গালিয়ার্দি জানিয়েছেন, আমার মক্কেলকে এই মুহূর্তে আইনি দিক থেকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনো চলমান প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাঁকে কিছু জানানোও হয়নি।”
কান উৎসব সম্প্রতি একটি নৈতিক সজাগতা নীতি চালু করেছে, যেখানে প্রতিটি চলচ্চিত্রের প্রযোজনা দলকে নিশ্চিত করতে হবে যে চিত্রগ্রহণের সময় নিরাপত্তা, মর্যাদা ও নৈতিকতা বজায় রাখা হয়েছে।
উৎসবের মহাসচিব থিয়েরি বলেন, যেহেতু মামলার ওপর আপিল হয়েছে এবং বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান, তাই আমরা এটিকে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে ধরে নিতে পারি না। যখন বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবে, তখন বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখা হবে।”
তিনি আরও জানান, আরও একজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, এবং সেই সম্পর্কেও উৎসব কর্তৃপক্ষ তথ্য সংগ্রহ করছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস