শার্লক হোমস স্রষ্টা আর্থার কোনান ডয়েলের জগৎ
Published: 22nd, May 2025 GMT
স্যার আর্থার কোনান ডয়েল জগৎ বিখ্যাত কিশোর উপন্যাস ‘পিটার প্যান’ স্রষ্টা জেমস ব্যারির সাথে ক্রিকেট খেলছেন, ‘প্রিজনার অফ জেন্ডা’র লেখক অ্যান্থনি হোপ তার সহ-খেলোয়াড় অথবা ‘দ্যা জঙ্গল বুক’ লেখক রুডিয়ার্ড কিপলিং এবং তিনি ভারমন্টের মাঠে গলফ খেলছেন—এই তথ্য জানলে আমাদের মনে হতেই পারে ডয়েলের পুরো জীবনটাই বোধহয় এমন আনন্দে পূর্ণ ছিল। তিনি ওই সময়ের শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের জন্য নাটক লিখছিলেন—থিওডর রুজভেল্ট, উইনস্টন চার্চিলের সঙ্গে নিয়মিত রাতের খাবার সারেন, প্রিন্স অফ ওয়েলস এক গেলাসের ইয়ার—এসব রূপকথার মতো শোনায়। সবার আগ্রহের কেন্দ্রে আসার আগে যাত্রাপথ কেমন ছিল তার?
জেমস রায়ান, ডয়েলের সারা জীবনের বন্ধু তাকে বলতেন, ‘তুমি যে চিঠিতে তারিখ দাও না এজন্য জীবনীকাররা তোমায় অভিম্পাত দেবেন।’ তিনি একজন চিকিৎসক ছিলেন প্রথম জীবনে, খেলোয়াড় হিসেবে নাম করেছিলেন, সামাজিক ন্যায় বিচার এবং অপরাধ দমনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে প্রতিবাদী অধিকারকর্মী ছিলেন, ওয়ার করেসপন্ডেন্ট, সামরিক ইতিহাসবিদ এবং শেষ পর্যন্ত প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন আস্ত একটা ধর্ম। তার নির্মিত রোমাঞ্চ কাহিনির মতোই ছিল তার জীবন। প্রায় সময় আর্থার কোনান ডয়েলের কার্যক্রম তীব্র বিতর্কের শীর্ষে অবস্থান করত। আর লিখতেন প্রচুর চিঠি—নামী, অনামী সবাইকেই।
ছাত্র হিসেবে মন্দ ছিলেন না তবু চিকিৎসা বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই অস্বস্তিকর সময় কাটাতে হয়েছিল। তিমি শিকারের জাহাজে ডাক্তার হিসাবে ছয় মাস পার করে কিছুটা মুক্তির আনন্দ তিনি উপভোগ করতে পেরেছিলেন। যদিও বরফের বিশাল টুকরোতে একবার জীবন-সংশয়ের মুখে পড়েছিলেন। কোনান ডয়েল এসেছিলেন বিখ্যাত এক চিত্রকর পরিবার থেকে যাদের শিকড় ছিল আইরিশ। অবশ্য তার সময় এই পরিবারটি ইংল্যান্ডে থিতু কয়েক প্রজন্ম জুড়ে। জন ডয়েল, তার দাদা, ছিলেন খুবই বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্রী। ‘এইচ বি’ আদ্যাক্ষরে স্বাক্ষরকৃত তার ছবিগুলো এখন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা আছে। স্বনামধন্য ব্যঙ্গপত্রিকা পাঞ্চ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ করেছিলেন তার এক কাকা রিচার্ড। আরেক কাকা জেমস ইংল্যান্ডের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যারনদের তালিকা করেছিলেন। দ্যা ন্যাশনাল গ্যালারি অব আয়ারল্যান্ড প্রতিষ্ঠাতা ডয়েলের অন্যতম এক কাকা হেনরি। ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি অভিধানে আর্থার কোনান ডয়েলসহ তিন প্রজন্মের জীবনী লিপিবদ্ধ আছে।
বাবা চার্লস আলটামন্ট ডয়েলও একজন চিত্রকর ছিলেন। পৌরসভায় কাজ করতে গিয়ে নিজের জীবনসঙ্গীর দেখা পান। ভিক্টোরিয়ান ব্রিটিশদের তুলনায় স্ত্রী ছিলেন স্বশিক্ষিত। ‘রেভ্যু দ্যো দ্যু মন্ড’ পত্রিকা থেকে দুনিয়ার খবর আহরণ করতেন এবং ফরাসিতে অনর্গল কথা বলতে পারতেন। দক্ষ ছিলেন কুলচিহ্নবিদ্যায়। ইতিহাস এবং বংশতালিকা অর্থাৎ অতীতের ঘটনা, মানুষ সম্পর্কে জানা মায়ের খুবই প্রিয় ছিল। আর্থার মায়ের কাছ থেকেই এই দুটি বিষয়ে আগ্রহী হন। গবেষকরা বলেন, ঐতিহাসিক কাহিনির প্রতি লেখকের মুগ্ধতা এবং চর্চার উৎস হচ্ছে মাতৃচরিতমানস। নিজেই বলেছেন—অবিরত চিঠি লেখার প্রতি আমার প্রেম, গল্প বলার ভেতরকার আগ্রহ এই সবকিছুই আমি পেয়েছি আমার মায়ের কাছ থেকে।
২.
আমরা সবাই জানি ডয়েল পৃথিবী জোড়া খ্যাতি পেয়েছেন শার্লক হোমসের সূত্রে। কিন্তু প্রফেসর চ্যালেঞ্জার এবং বিগ্রেডিয়ার জেরার্ডের কথা ভুললে চলবে না। কিছু বিজ্ঞান কল্পকাহিনি আর অনেকটাই নির্জলা কল্পনা মিলিয়ে লেখা চ্যালেঞ্জার চরিত্রের উপাখ্যানমালা। আমাদের অনেকেরই মনে আছে, আমরা ছেলেবেলায় সেবা প্রকাশনীর অনুবাদে পড়েছিলাম ‘বিষ বলয়’ আর ‘হারানো পৃথিবী’ যথাক্রমে ‘দ্যা পয়জন বেল্ট’ আর ‘দ্যা লস্ট ওয়ার্ল্ডে’র অনুবাদ। পরেরটিকে নিয়ে কত ধরনের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। বাংলা কল্পকাহিনির আরেক নামী লেখক অদ্রীশ বর্ধনের সুবিখ্যাত চরিত্র প্রফেসর নাটবল্টু চক্রের মূল অনুপ্রেরণা ডয়েলের চরিত্র এই খেয়ালী বিজ্ঞানী। লিখছিলাম এক বিগ্রেডিয়ারের কথা। জেরার্ড চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে সতেরটি গল্প, একটি নাটক প্রণীত হয়। এক উপন্যাসেও অনেক জায়গা জুড়ে থাকেন। নেপোলিয়নের যুদ্ধের সময় এক ঘোড়সওয়ার অফিসার এই ভদ্রলোক, ফরাসি সেনাবাহিনীর। অত্যন্ত সাহসী ভাবেন নিজেকে। শ্রেষ্ঠ সোর্ড ফাইটার হিসেবে জাহির করেন সবসময়। সুন্দরী সান্নিধ্যে গলে যান। সংক্ষেপে, লেখক তাকে গড়েছেন কৌতুক আবহে।
কবিতা খুব বেশি লেখেননি। প্রায় সবই যুদ্ধ, পরিবেশ, সাম্রাজ্য সম্পর্কিত। একটি ছোট কবিতার নমুনা অনুবাদের চেষ্টা করে আমাদের কৈশোরের প্রিয়তম ভিনভাষী লেখকের জন্মদিনে শুভ বাসনা জানাই।
সাম্রাজ্য১৯০২
তারা বলে এটির ছিল মাটির পা,
তাই পতন নিশ্চিত ও দ্রুত।
গতকালের অগ্নিশিখায়
সকল মাটি পুড়ে হয়েছিল ইট।
যখন তারা আমাদের সমাধিফলক লিখতে এল
আর চিহ্নিত করল আহ্বানদূর পতিত হিসেবে,
আমরা, আমরা ফিরে বললাম, জোরে হেসে,
সাম্রাজ্যটাই তো ফুটে যাচ্ছে হে পতনের দিকে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ল ন র জ বন চর ত র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।
আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।
আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।
আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে