ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানকে ‘ফাদার অব মবোক্রেসি’ আখ্যা দিয়েছে শাখা ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস।

তিনি বলেছেন, “এখনো বহাল তবিয়তে ফাদার অফ মবোক্রেসি নিয়াজ আহমেদ খান হেঁটে বেড়াচ্ছেন এবং মবস্টার সাইফুদ্দিন আহমেদ। আজ নাকি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন; হাস্যোজ্জল দাঁতে খিলখিল হাসি তার।”

সোমবার (২৬ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার, উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। দুপুর ১২টা থেকে তারা এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

আরো পড়ুন:

ঢাবি উপাচার্যের হাতে সাম্য হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন 

অভয়নগরে আগুনে পোড়া বাড়িগুলো পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার

গণেশ বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কোনো হেনতেন সংগঠন নয়। ছাত্রদল বিশ্বের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন। এ সংগঠন সব সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে অবস্থান নেয়। এই সংগঠন গণতান্ত্রিক ও অনেকটা সহিষ্ণু পন্থায় কর্মসূচি দিয়ে আসছে। আর অনেকে দাঁত খিলখিলিয়ে হাসছে, যেন ছাত্রদলের করার বোধহয় কিছুই নেই।”

উপাচার্য-প্রক্টর দায়িত্ব পাওয়ার পর এই ক্যাম্পাসে মব উস্কে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ঢাবি ছাত্রদল সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, “ছাত্রদলের গাজীরা জানে কীভাবে তার ভাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে হয়। আমরা ন্যায় বিচার চাচ্ছি। আপনারা আমার ভাইদের নিরাপত্তা দিতে পারেননি। আপনারা জাতির সামনে এখনো কোনো তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেননি। আমি অবিলম্বে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছি।”

তিনি বলেন, “সাম্য হত্যার পরে একটি গোষ্ঠী ন্যারেটিভ দাঁড় করালো, রাতে সাম্য উদ্যানে কী করে। তারা ন্যারেটিভ দাঁড় করালো, উদ্যান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে না; এ উপাচার্য এই দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ছ ত রদল উপ চ র য ছ ত রদল স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ