চাল বিতরণে দুর্নীতি, সেনাবাহিনীর হাতে ১১ ইউপি সদস্য আটক
Published: 27th, May 2025 GMT
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ভালনারেবল উইম্যান বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) এর চাল বিতরণে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে এক ইউনিয়ন পরিষদেরই আট পুরুষ ও তিন নারী ইউপি সদস্যসহ ১১ জনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।
সোমবার (২৭ মে) রাতে উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে আদায় করা এক লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা জব্দ করা হয়। পরে তাদের বোদা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আটকৃতরা হলেন- বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খলিলুর রহমান, দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হামিজ উদ্দিন, তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রিয় নাথ রায়, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুনীল চন্দ্র রায়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দাহির উদ্দিন, সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খাদিমুল ইসলাম, আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন ইসলাম, নয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আশরাফুল ইসলাম, ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য শেফালী রাণী, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য বিলকিস বেগম এবং ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুপালী বেগম।
পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়নের দরিদ্র অসহায় নারীদের সহায়তার জন্য সরকারিভাবে ভিডাব্লিউবি কার্ডের আওতায় ২৫৮টি পরিবারের মাঝে ৩০ কেজি করে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসের মোট ১৫০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছিল।
এসময় উপকারভোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ৫০০ থেকে ৬০০ করে টাকা আদায় করছিলেন ওই ইউপি সদস্যরা। বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেওয়ায় টাকা আদায়ের অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ১১ ইউপি সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে সুবিধাভোগীরা। এক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে পাঁচ শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
এদিকে, খবর পেয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম ফুয়াদ, সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বোদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। সুবিধাভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পেয়ে অভিযুক্তদের আটক করে সেনাবাহিনী। পরে তাদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ভিডব্লিউবি উপকারভোগী দুলাল রহমান বলেন, “আমাদের কাছেও টানা ৫ মাসের চাল দেয়ার নামে ৫০০ টাকা করে নিয়েছে। টাকা না দিলে চাল পাবো না বলেছে। তাই আমরা টাকা দিয়েছি।”
অপর সুবিধাভোগী শাহীনুর বলেন, “আমাদের এখানে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। এর মাঝে আজ এটা হয়েছে এবং প্রকাশ পেয়েছে বলে তারা আটক হয়েছেন। অনিয়মের কারণে আমরা তাদের বিচার দাবি করছি। একই সাথে বলতে চাই, যেহেতু ১১ জন সদস্য আটক হয়েছে- তাই তাদের বিচার কার্যক্রম চলা অবস্থায় আমাদের পরিষদের ও ইউনিয়নের সেবা যেন প্রশাসন প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।”
সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন ইসলাম বলেন, “আমরা যেহেতু চালগুলো বোদা থেকে নিয়ে এসেছি। এ কারণে আমাদের পরিবহন খরচ হয়েছিল। আমরা উপকার ভোগীদের কাছে ৫০০ টাকা করে চেয়েছিলাম। তারা দিয়েছিল। তবে আমাদের এটি নেওয়া ঠিক হয়নি। আমরা সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম। যে এরকম ভুল আর কোনদিন করা হবে না। এরপরও আমাদেরকে আটক করা হয়েছে।”
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির বলেন, “স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি ও ঘটনাস্থলে পাওয়া আলামতের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, “চাল বিতরণের সময় ইউপি সদস্যরা উপকারভোগীদের কাছে ৫০০-৬০০ টাকা নিয়েছেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সেখানে গেলে প্রমাণ মেলে। আটক ১১ ইউপি সদস্য থানা হেফাজতে আছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।”
ঢাকা/নাঈম/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ল ব তরণ আম দ র ইসল ম উপজ ল উপক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণ কী
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এবং নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার মুখে পড়েছে।
গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রাণক্ষয়ী বিক্ষোভের মুখে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানো সত্ত্বেও প্রতিশ্রুত সংস্কারে বিলম্ব, ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক বিভাজনের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কারণ এখানে তুলে ধরা হলো:
নির্বাচন বিতর্কডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। তবে এখনো নির্বাচন আয়োজনে সুনির্দিষ্ট তারিখ জানায়নি অন্তর্বর্তী সরকার।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। গত সপ্তাহে দলটি বলেছে, একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী পরিকল্পনা ছাড়া অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখা ‘কঠিন’ হবে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত সপ্তাহে এক বক্তব্যে ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এতে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ে।
গত বছরের অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের উদ্যেোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জোর দিয়ে বলছে, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
সংস্কার নিয়ে অচলাবস্থাহাসিনার বিদায়ের পর অধ্যাপক ইউনূস যে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই সংস্কারের অগ্রগতি ধীরগতিতে চলছে। তাঁর সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য গঠনের জন্য সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে।
ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের প্রথম দফার সংলাপে কিছু পরিবর্তনের বিষয়ে ব্যাপক সমর্থন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।
তবে সাংবিধানিক সংস্কার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ–সংক্রান্ত আরও জটিল কিছু প্রস্তাব নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপ জুনের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে বলে ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিবাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অস্থিতিশীল অবস্থা জনগণের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক ও রাজনৈতিক কর্মীদের রাজপথে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ রাজধানী ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে।
এই অস্থিরতা নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, যদি শিগগিরই রাজনৈতিক ঐকমত্য না হয়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
আরও পড়ুনইউনূস সরকারের ওপর চাপ বাড়ার মধ্যেই বাংলাদেশে বিক্ষোভ২৬ মে ২০২৫হাসিনার দলের ওপর নিষেধাজ্ঞাচলতি মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সামনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে দলটিকে কার্যত বাইরে রাখা হচ্ছে। কিন্তু এতে পরবর্তী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পদক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর সরকারকে অস্থিতিশীল করতে যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে, তাতে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুননির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি২৩ মে ২০২৫