বেতন-বোনাস পাননি কুয়েটের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
Published: 3rd, June 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। ক্যাম্পাস খুলবে ১৫ জুন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ কর্মদিবস আজ মঙ্গলবারও বেতন ও ঈদের বোনাস পাননি ১১ শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। এতে বিপদে পড়েছেন তারা। অনেকে কোরবানি দেওয়া নিয়েও অশ্চিয়তায় পড়েছেন।
জানা গেছে, শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের মুখে গত ২২ মে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো.
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কর্মচারী বলেন, ঈদের আগে বেতন-বোনাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কোরবানি দিতে পারবেন কিনা বুঝতে পারছেন না। ঈদের সময় অনেক খরচ আছে। টাকা না থাকায় সবাই বিপদে পড়েছেন। কুয়েটে কখনও এমন পরিস্থিতি হয়নি।
কুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মঈনুল হকও একই ধরনের কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন মাস ধরে ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থী। তারা সেশনজটে পড়েছেন। ঈদের ছুটিতে সাতটি হলের বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রী ইতোমধ্যে বাড়ি চলে গেছেন।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, বেতন-বোনাস না পাওয়ায় সবাই সমস্যায় পড়েছেন। নতুন উপাচার্য নিয়োগ হলে তাঁর কাছে দাবি তুলে ধরা হবে। শিক্ষক লাঞ্ছিতকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান বলেন, রেজিস্ট্রার ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বেতন-বোনাস ছাড় করানোর জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সুফল মেলেনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। সেদিন কয়েকজন শিক্ষার্থী তৎকালীন উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। তখন থেকে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা। ২২ মে থেকে উপাচার্য এবং ২৫ এপ্রিল থেকে উপ-উপাচার্যের পদ শূন্য রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
সালমান, শিবলী ও সায়ান পুঁজিবাজারে ‘আজীবন অবাঞ্ছিত’
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তাঁর ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমান এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএসইসির সাবেক কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টসের সাবেক প্রধান নির্বাহী ইমরান আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে।
বিএসইসি জানিয়েছে, সালমান রহমান ও তাঁর ছেলেকে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি দেড় শ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংক গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড ও বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের অর্থ উত্তোলন-সংক্রান্ত নানা অনিয়মের জন্য এসব ব্যক্তিকে জরিমানার পাশাপাশি শেয়ারবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৯৬৫তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তের কথা আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে বিএসইসি। সংস্থাটি জানায়, আড়াই হাজার কোটি টাকার শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডটি ২০২৩ সালের ৪ জুন বিএসইসির কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়। আর ওই বছরের ১২ জুলাই কমিশনের পক্ষ থেকে সম্মতিপত্র ইস্যু করা হয় শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের নামে। অথচ কোম্পানিটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় ২০২৩ সালের ২ মার্চ। নিবন্ধনের মাত্র এক মাস পরই ১১ এপ্রিল শ্রীপুর টাউনশিপের পক্ষ থেকে বন্ড ইস্যুর আবেদন করা হয়।
বিএসইসি আরও জানায়, বন্ডটির জামিনদার বা গ্যারান্টার ছিল আইএফআইসি ব্যাংক। পরামর্শক ও অ্যারেঞ্জার ছিল মার্চেন্ট ব্যাংক আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস। ট্রাস্টি ছিল সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স, নিরীক্ষক ছিল এমজে আবেদিন অ্যান্ড কোং এবং ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ছিল এমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড। আইএফআইসি ব্যাংক এই বন্ড ইস্যু না করলেও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নাম ব্যবহার করে। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়েছিল। পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষে তাদের প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এই বন্ড ইস্যুতে অনিয়মের জন্য আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা ও পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে ব্যাংকটির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা ও পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টসের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী ইমরান আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ করা হয়। সেই সঙ্গে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। তবে তাঁর বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
একই ঘটনায় ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান এমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর বাইরে শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসির ওই সভায় বেক্সিমকোর ৩ হাজার কোটি টাকার পাঁচ বছর মেয়াদি অ্যাসেট-ব্যাকড গ্রিন সুকুক বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে কোম্পানিটিকে বিধিবহির্ভূতভাবে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় শিবলী রুবাইয়াতকে আজীবন এবং শেখ শামসুদ্দিন আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
আজীবন অবাঞ্ছিত হওয়া ব্যক্তিরা শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট কী কী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন বা পারবেন না, তার বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। এ সিদ্ধান্ত কীভাবে কার্যকর করা হবে, তারও সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা ঘোষণা করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে কমিশনের পক্ষ থেকে আলাদা নির্দেশনা জারি করা হবে। সে অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
তবে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আইনি ভিত্তি ও সক্ষমতা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেই। ফলে শেষ পর্যন্ত এসব সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাঁরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেগুলো বাস্তবে সহজে প্রয়োগযোগ্য এবং ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জের মধ্যে না পড়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় বাস্তবভিত্তিক। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন নয়, যা কার্যকর করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ধরনের অবাঞ্ছিত ঘোষণার কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু পুঁজিবাজার ও সিকিউরিটিজ আইনে এ ধরনের ভাষা ও শাস্তির মানে কী, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। এমনকি এর অর্থও আমি বুঝতে অক্ষম।’