খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। ক্যাম্পাস খুলবে ১৫ জুন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ কর্মদিবস আজ মঙ্গলবারও বেতন ও ঈদের বোনাস পাননি ১১ শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। এতে বিপদে পড়েছেন তারা। অনেকে কোরবানি দেওয়া নিয়েও অশ্চিয়তায় পড়েছেন।

জানা গেছে, শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের মুখে গত ২২ মে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো.

হযরত আলী পদত্যাগ করেন। ব্যাংক থেকে বেতন-বোনাস ছাড় করতে উপাচার্যের স্বাক্ষর প্রয়োজন। কিন্তু এ পদে কেউ না থাকায়, তা আটকে গেছে। ২৯ মে কুয়েটের রেজিস্ট্রার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে নির্দেশনা চান। সেখান থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। এরই মধ্যে কুয়েটে শুরু হওয়া ঈদের ছুটি থাকবে ১৪ জুন পর্যন্ত। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কর্মচারী বলেন, ঈদের আগে বেতন-বোনাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কোরবানি দিতে পারবেন কিনা বুঝতে পারছেন না। ঈদের সময় অনেক খরচ আছে। টাকা না থাকায় সবাই বিপদে পড়েছেন। কুয়েটে কখনও এমন পরিস্থিতি হয়নি।

কুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মঈনুল হকও একই ধরনের কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন মাস ধরে ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থী। তারা সেশনজটে পড়েছেন। ঈদের ছুটিতে সাতটি হলের বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রী ইতোমধ্যে বাড়ি চলে গেছেন।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, বেতন-বোনাস না পাওয়ায় সবাই সমস্যায় পড়েছেন। নতুন উপাচার্য নিয়োগ হলে তাঁর কাছে দাবি তুলে ধরা হবে। শিক্ষক লাঞ্ছিতকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন না। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান বলেন, রেজিস্ট্রার ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বেতন-বোনাস ছাড় করানোর জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সুফল মেলেনি। 

প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। সেদিন কয়েকজন শিক্ষার্থী তৎকালীন উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। তখন থেকে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা। ২২ মে থেকে উপাচার্য এবং ২৫ এপ্রিল থেকে উপ-উপাচার্যের পদ শূন্য রয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপ চ র য

এছাড়াও পড়ুন:

ডলারের দামের আঁচ দা, বঁটির বাজারে

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের দা, বঁটি ও ছুরির দোকান থেকে গত মঙ্গলবার বড় আকারের একটি চাকু কেনেন আবদুল মজিদ নামের এক ব্যক্তি। জানতে চাইলে তিনি বললেন, চাকুটি বিক্রেতা ৯০০ টাকা নিয়েছে। বছর দুয়েক আগে তিনি একই আকারের একটি চাকু কিনেছিলেন ৭০০ টাকায়।

পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দা, বঁটি, চাপাতি ও ছুরির বিক্রি বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বেচাকেনা মোটামুটি ভালো। তবে দাম বেশি। লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

লোহার মূল্যবৃদ্ধির কারণ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শুরুতে যে ডলার ৮৬ টাকা ছিল, এখন তা ১২৩ টাকা। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরোনো জাহাজ আমদানিতে খরচ বেশি পড়ছে। অন্যদিকে চীনে তৈরি ছুরি ও চাপাতি আমদানিতে সরাসরি বাড়তি ব্যয় হয় ডলারের দামের কারণে।

দেশে লোহার বড় একটি উৎস পুরোনো জাহাজ। চট্টগ্রামে এসব জাহাজ ভাঙা হয়। পরে তা গলিয়ে বিভিন্ন কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পুরোনো লোহার বাজারে কেজিপ্রতি দর এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পাকা লোহার কেজি এখন ১৫০ টাকার আশপাশে। পাকা লোহা মূলত স্প্রিং গলিয়ে তৈরি করা হয়।

পুরোনো লোহার দর আগে কত ছিল, তার আনুষ্ঠানিক কোনো হিসাব নেই। তবে রডের দামের হিসাব পাওয়া যায় সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছ থেকে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ৬০ গ্রেডের রডের টনপ্রতি দর ৮৭ থেকে ৯০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে যা ছিল ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ২০২৪ সালে রডের টনপ্রতি দর ১ লাখ টাকার কাছাকাছি উঠেছিল।

লোহার উৎস যা-ই হোক, এর একটি নির্দেশক মূল্য আছে। রডের দামের সঙ্গে তা ওঠানামা করে।

দোকানিরা জানান, তিন বছর আগেও বড় আকারের একটি বঁটি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করা যেত। এখন এখন সেটা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। ভারী একটি চাপাতি কিনতে এখন এক হাজার মতো লাগে। অবশ্য দাম নির্ভর করে পণ্যের ওজন ও গুণগত মানের ওপর।

কারওয়ান বাজারে ২৮ বছর ধরে দা, বঁটি, ছুরি তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা করেন মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, লোহার দাম বেড়েছে। কেনা দাম বেশি হলে তাঁদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে ক্রেতারা দামাদামি করেই কিনছেন।

বিক্রেতাদের দাবি, শুধু কাঁচামালের দাম নয়, তাঁদের জীবনযাত্রার খরচও বেড়েছে। এ কারণে একই পণ্যে আগের চেয়ে বেশি লাভে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দা, বঁটি ও ছুরি বিক্রি করেন এক বিক্রেতা, যিনি নাম বলতে চাননি। তিনি বলেন, আগে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ করতে পারলে চলে যেত। এখন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা না হলে হয় না। বিক্রি তো বাড়েনি। বরং দোকান এখন বেশি। এ কারণে সমপরিমাণ পণ্য থেকে তাঁকে বেশি লাভ করতে হচ্ছে।

কিছু ছুরি, চাপাতি, কুড়াল ইত্যাদি সরাসরি বিদেশ থেকে আমদানি হয়। কারওয়ান বাজারের আকমল হোসেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, তাঁরা কিছু চাইনিজ কুড়াল বিক্রি করেন। এসব কুড়াল ৩ বছর আগে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করা যেত। এখন সেটা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ