নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র পূর্ণাঙ্গতা পায় না
Published: 4th, June 2025 GMT
নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। নির্বাচন ও সংস্কার পরস্পরবিরোধী নয়। বরং সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের যাত্রা নিশ্চিত করা না গেলে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা কখনোই সুষ্ঠু ও জনমুখী হতে পারে না।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ যাত্রা: জরুরি সংস্কার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সুশাসন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এই অভিমত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। আজ বুধবার বিকেলে যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা ফোরাম ইনিশিয়েটিভ ও ইউনিভার্সাল নিউজ এজেন্সি (ইউএনএ)।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক নাগরিক যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, সেটিই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। নির্বাচন না হলে জনগণের মতামতের প্রতিফলন হয় না। নির্বাচন একটি টিমওয়ার্ক—এতে শুধু সংসদ সদস্যরাই নন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে সম্পৃক্ত হতে হবে।’
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, ‘সংস্কার কেবল আইন পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি হচ্ছে মানুষের মধ্যে মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করা। প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, শিক্ষানীতি ও রাজনৈতিক কাঠামো—সবকিছুরই সময়োপযোগী ও ন্যায়ভিত্তিক সংস্কার দরকার।’
আলোচনায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন পরিচালনার জন্য যথেষ্ট আইন রয়েছে। কিন্তু সে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনটি জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, অনেক কেন্দ্রেই অনিয়ম হয়েছে। অথচ প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ও সংস্কার পরস্পরবিরোধী নয়। বরং সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।’
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এমনভাবে ভেঙে পড়েছে, যা পুনর্গঠনের জন্য সময়োপযোগী সংস্কার অপরিহার্য। নির্বাচন জরুরি, তবে তার আগে প্রয়োজন নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নিরপেক্ষ ও কার্যকর ব্যবস্থা।
সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলই প্রমাণ করে, সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাবে দেশে আজ রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। সুতরাং, নির্বাচন ও সংস্কার—দুটিই অপরিহার্য এবং এ দুটিকে সমান্তরালে এগিয়ে নিতে হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘আমাদের ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে। মনে হয় পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে টিকে থাকতে একসময় লড়াই করতে হবে।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার মারুফ হোসেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দিন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, মানবাধিকারকর্মী সাইয়েদ আবদুল্লাহ প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত গণতন ত র ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব