Risingbd:
2025-06-06@21:07:50 GMT

যেভাবে কোরবানি করতে হবে

Published: 6th, June 2025 GMT

যেভাবে কোরবানি করতে হবে

কোরবানি মুসলমানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামী শরিয়তের আলোকে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য কোরবানি করা আবশ্যক। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। এমন ব্যক্তি যদি ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে তাকে কোরবানি করতে হবে। 

নিসাব হচ্ছে- সাড়ে সাত ভরি সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন (৫২.

৫) ভরি রূপা অথবা এগুলোর সমমূল্যের অর্থ বা সম্পদ থাকা। (আল মুহিতুল বুরহানি : ৮/৪৫৫)

কোরবানি করার সময় হলো জিলহজের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। এই তিনদিনের যে কোনো দিন কোরবানি করা জায়েজ। তবে প্রথম দিন কোরবানি করা সর্বাপেক্ষা উত্তম। তারপর দ্বিতীয় দিন। তারপর তৃতীয় দিন। জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পর কোরবানি করা শুদ্ধ নয়। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৬)

আরো পড়ুন:

দিনাজপুরের ২০ গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে ঈদ উদযাপন

কোরবানির সময় ও পদ্ধতি

ঈদুল আজহার নামাজের আগে কোরবানি করা বৈধ নয়। অবশ্য যে স্থানে ঈদের নামাজ বা জুমার নামাজ বৈধ নয় সে স্থানে ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পরও কোরবানি করা জায়েজ। (কুদুরি, পৃষ্ঠা ১৯৮)

নিজের কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা মুস্তাহাব। যদি নিজে জবাই করতে না পারে তবে অন্যের মাধ্যমে জবাই করাবে। এমতাবস্থায় নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২৭২)

জবাই করার সময় কোরবানির পশু কিবলামুখী করে শোয়াবে। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করবে। ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ পরিত্যাগ করলে জবাইকৃত পশু হারাম বলে গণ্য হবে। আর যদি ভুলক্রমে বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয় তবে তা খাওয়া জায়েজ আছে। (হেদায়া : ৪/৪৩৫)

পশু জবাই করার সময় মুখে নিয়ত করা জরুরি নয়, বরং উত্তম। অবশ্য মনে মনে নিয়ত করবে যে, আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করছি। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২৭২)

জবাই করার সময় চারটি রগ কাটা জরুরি-কণ্ঠনালী, খাদ্যনালী এবং দুই পাশের মোটা দুটি রগ যাকে ওয়াজদান বলা হয়। এই চারটি রগের মধ্যে যে কোনো তিনটি যদি কাটা হলে হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি দুটি কাটা হয় তবে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (হেদায়া : ৪/৪৩৭)

ইসলাম পশু জবাইয়ের আগে ছুরি ভালোভাবে ধার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যেন পশুর বেশি কষ্ট না হয়। জবাইয়ের সময় বিনা প্রয়োজনে পশুকে কষ্ট দেওয়া মাকরুহ। কোরবানির সময় শরিকদের নাম মুখে উচ্চার করা উত্তম, তবে আবশ্যক নয়। কোরবানিদাতা ও জবাইকারীর নিয়তে থাকাই যথষ্টে। (হেদায়া : ৪/৪৩৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৩/৫৪৭, ফাতাওয়ায়ে শামি : ৯/৪৭৩)

কোরবানির দোয়া

পশুর গলায় ছুরি চালানোর আগে এই দোয়া পাঠ মুস্তাহাব : ‘ইন্নি ওয়াজ জাহতু ওয়াজ হিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাবিবল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা।' (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৭৯৫)

উল্লিখিত দোয়া পড়ার পর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে পশু জবাই করবে। পশু জবাই করার পর এই দোয়া পাঠ করবে-‘আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মদ ও খালিলিকা ইবরাহিম আলাইহিমাস সালাতু ওয়াস সালাম।’ 

শরিকানায় কোরবানি

গরু, মহিষ ও উট-এই তিন প্রকার পশুর একেকটিতে সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি পর্যন্ত শরিক হয়ে কোরবানি করতে পারবে। তবে কোরবানির জন্য শর্ত হচ্ছে- কারো অংশ যেন এক-সপ্তমাংশের চেয়ে কম না হয়। প্রত্যেক শরিককেই কোরবানি ও অথবা আকিকার মতো কোনো ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিয়ত করতে হবে। যদি শরিকদের একজনও গোশত খাওয়ার নিয়ত করে তবে কারো নিয়ত দুরস্ত হবে না। অনুরূপভাবে যদি কোনো শরিকের অংশ সপ্তমাংশের কম হয় তবে সবার কোরবানিই নষ্ট হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৩০৪)

গোশত খাওয়া ও বণ্টনের নিয়ম

ইসলামী শরিয়ত কোরবানিদাতাকে কোরবানির গোশত ও চামড়ার মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার অনুমতি দিয়েছে। কোরবানির পশুর নির্ধারিত ছয়টি অঙ্গ ছাড়া বাকি সবই খাওয়া জায়েজ। নিষিদ্ধ অঙ্গগুলো হচ্ছে, ১. প্রবাহিত রক্ত, ২. অণ্ডকোষ, ৩. চামড়া ও গোশতের মধ্যে সৃষ্ট জমাট মাংসগ্রন্থি, ৪. মূত্রথলি, ৫. পিত্ত, ৬. যৌনাঙ্গ। এসব অঙ্গ খেতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। (কিতাবুল আসার, হাদিস : ৮০৮)

কোরবানির পশুর গোশত বণ্টনের সুন্নত পদ্ধতি হলো তিনভাগ করে একভাগ পরিবার-পরিজনের জন্য রাখবে এবং বাকি দুইভাগের একভাগ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে আর একভাগ গরিব-মিসকিনকে বণ্টন করে দেবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৪৭৩)

কয়েক ব্যক্তি একসাথে শরিক হয়ে যদি একটি পশু কোরবানি করে তবে পাল্লা দিয়ে মেপে সমানভাবে গোশত বণ্টন করে নেবে। অনুমান করে বণ্টন করা জায়েজ নয়। কেননা ভাগে কমবেশি হলে তা সুদ বলে গণ্য হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/২৩২)

কোরবানির গোশত অমুসলিমকেও দেওয়া বৈধ। কসাইকে গোশত বানানোর মজুরি হিসেবে গোশত, চামড়া, রশি ইত্যাদি দেওয়া বৈধ নয়। পারিশ্রমিক দিতে হলে তা ভিন্নভাবে আদায় করবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৩০)

কোরবানির গোশত কোরবানিদাতার জন্য বিক্রি করা মাকরুহ তাহরিমি। যদি কেউ বিক্রি করে তাহলে এর মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/৪৭৭)

কোরবানিদাতা হয়ত পশুর চামড়া দান করে দেবে অথবা নিজে ব্যবহার করতে পারবে। পশুর চামড়া বিক্রি করলে তার মূল্য গরিব ও মিসকিনদেরকে দান করে দেওয়া আবশ্যক। এমনকি চামড়া বিক্রি করে পাওয়া নোট নিজে খরচ করার পরে যদি অন্য নোট দান করা হয় তাবে তা মাকরুহ হবে। (হিদায়া : ৪/৪৩৪; মাসায়িলে ঈদাইন, পৃষ্ঠা ১৯২)

লেখক: মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর র সময় রব ন দ ত ন র জন য আল ল হ জ লহজ

এছাড়াও পড়ুন:

কোরবানির পশু সম্পর্কে যে বিষয়গুলো জানতেই হবে

নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে ইসলামী শরিয়তের আলোকে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এই  বিধানটি যে পশুটিকে জবাইয়ের মাধ্যমে আদায় করতে হবে তার বৈশিষ্ট্য জানাও ওয়াজিব।

কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য

ছয় প্রকার পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ বা বৈধ। এসব পশু ছাড়া অন্য পশু দিয়ে কোরবানি করা বৈধ নয়। এগুলো হচ্ছে- উট, গরু, ছাগল, দুম্বা, ভেড়া ও মহিষ। (হেদায়া : ৪/৪৪৮)

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে কোরবানির হাট: কম দামে খুশি ক্রেতা, হতাশ বিক্রেতা

ঢাকার গাবতলীতে নজর কাড়ছে আফগানি উট

এসব ভেতর দুম্বা, ছাগল ও ভেড়ার বয়স এক বছর হওয়া জরুরি। তবে ছয় মাসের ভেড়া ও দুম্বা মোটাতাজা হলে এবং দেখতে এক বছর বয়সের মতো দেখা দেলে তা দিয়েও কোরবানি করা জায়েজ। গরু ও মহিষ পূর্ণ দুই বছর বয়সী হওয়া এবং উট পাঁচ বছর বয়সী হওয়া আবশ্যক। এর কম হলে কোরবানি জায়েজ হবে না। (হেদায়া : ৪/৪৪৯)

উল্লিখিত আয়াতের আলোকে ইসলামী আইনজ্ঞরা বলেন কোরবানির পশু নিখুঁত, দৃষ্টিনন্দন, সুস্বাস্থ্যের অধিকার ও মধ্য বয়সী হওয়া উত্তম। দৃষ্টিনন্দন যেকোনো রঙের পশু যেমন কোরবানি করা যাবে, তেমনি চাষাবাদে ব্যবহৃত হওয়ার পরেও যদি কোনো পশু ত্রুটিমুক্ত থাকে তবে তা দিয়ে কোরবানি করা যাবে।

ইসলামী আইনজ্ঞরা বলেন, কোরবানি জায়েজ হওয়ার জন্য মৌলিকভাবে পশুকে চারটি মারাত্মক ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে। এগুলো হচ্ছে-. অন্ধত্ব, খ. গুরুতর অসুস্থতা, গ. খোড়া হওয়া, ঘ. গুরুতর স্বাস্থ্যহানি ও অঙ্গহানি ঘটা। (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, কোরবানি অধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)

কোনো পশুর দুই চোখ বা এক চোখ অথবা এক চোখের এক-তৃতীয়াংশের বেশি নষ্ট হয়ে গেলে তা দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নয়। অনুরূপ যে পশুর একটি কান বা লেজের এক-তৃতীয়াংশের বেশি কেটে গেছে তা দিয়েও কোরবানি করা বৈধ নয়। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৮)

যে পশু এমন খোঁড়া যে তিন পায়ের ওপর ভর করে চলে, চতুর্থ পা মাটিতে লাগেই না, কিংবা মাটিতে লাগে বটে কিন্তু তার ওপর ভর করে চলতে পারে না-এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা বৈধ নয়। তবে যদি খোঁড়া পায়ের ওপর ভর করে চলতে পারে, তবে তা দিয়ে কোরবানি করা বৈধ। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২২৮)

শিং ওঠেনি এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। অনুরূপ শিংয়ের অগ্রভাগ ভেঙ্গে গেলেও তা দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। কিন্তু শিং মূল থেকে ভেঙ্গে গিয়ে থাকলে তা দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নেই। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২২৭-৮; ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৭)

যে পশুর গায়ে বা কাঁধে দাদ বা খুজলি হয়েছে তা দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। কিন্তু ক্ষত যদি গোশত পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং তার কারণে পশুর স্বাস্থ্যহানি ঘটে তবে এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নেই। (হেদায়া : ৪/৪৩২)

আল্লাহ সবাইকে সঠিকভাবে কোরবানি করার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক: মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এপ্রিলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় জাতি হতাশ: মির্জা ফখরুল
  • চট্টগ্রামে ছোট গরুর বড় দাম
  • টিভিতে যত কাহিনিচিত্র
  • কোরবানির পশু সম্পর্কে যে বিষয়গুলো জানতেই হবে