২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা থেকে ঈদে বাড়ি আসতে ঘণ্টা তিনেক সময়ের বেশি লাগত না। এবার লাগল ৮ ঘণ্টা। সড়কের অবস্থাপনা ও একটি পুরোনো বাস ৩৩ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতুর সুফল পুরোপুরি নষ্ট করে দিল।

ঢাকা থেকে আমাদের বাড়ি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটারের মতো। এই দূরত্বে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসের ভাড়া ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে একটি বাসের টিকিট কাটলাম। বাস ছাড়ার কথা গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায়। মালিবাগে বাস কাউন্টারে পৌঁছালাম বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। গিয়ে শুনলাম, যে বাস আমাদের নিয়ে যাবে, সেটি ঢাকায় ঢোকার মুখে পোস্তগোলা সেতুর ওপরে যানজটে আটকে আছে।

বসে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে গেলাম। সময় আর কাটে না। বাস এল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। মধ্যে দেড় ঘণ্টা বিলম্ব। কিছুক্ষণ পরেই বাস ছাড়ল। ঢাকা থেকে বের হতে তীব্র যানজট। দেখলাম যাত্রাবাড়ী ও দোলাইরপাড় মোড়ে যানবাহনের চাপ। সঙ্গে অব্যবস্থাপনা।

রাত তখন ১০টা। যখন বাড়ির কাছাকাছি চলে যাওয়ার কথা, তখন আমি পদ্মা সেতুর ওপরে। সেতুর টোলঘরে তেমন কোনো যানজট ছিল না। ধরে নিলাম, রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আমাদের বাড়ি, অর্থাৎ উজিরপুর থানার বামরাইল ইউনিয়নের বাসস্ট্যান্ডে নামতে পারব।

আসল ভোগান্তি শুরু হলো গৌরনদী উপজেলা পার হওয়ার পর। ঢাকার দিক থেকে যেতে বরিশালের প্রথম উপজেলা গৌরনদী। এরপরই উজিরপুর। গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড পার হওয়ার পরই যানজট শুরু। বাস আর চলে না। একদম থেমে আছে। এক জায়গায় দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর একটু চলল। আবার থেমে গেল।

আরও পড়ুন১৫ ঘণ্টা অপেক্ষার পর এল বাস, একদিন না একদিন বাড়ি পৌঁছাব৪ ঘণ্টা আগে

এভাবে থেমে থেমে ১০ কিলোমিটারের মতো পথ যেতে লেগে গেল ঘণ্টা দুয়েক। পথে দেখলাম একটি পুরোনো বাস রাস্তার পাশে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। যতটুকু জায়গা বাকি আছে, তা দিয়ে দুটি বাস পাশাপাশি যেতে পারে না। এর ফলাফল, তীব্র যানজট।

স্থানীয় লোকজন জানান, বাসটি দুপুর থেকে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। যানজট সেই দুপুর থেকেই।

আমার চাচা স্বপন হাওলাদার বিকেলে গৌরনদী থেকে বামরাইল গেছেন। ১০ কিলোমিটারের মতো পথ যেতে তাঁর লেগেছে দুই ঘণ্টার মতো। তা–ও অটোরিকশায়। মুঠোফোনে বললেন, ‘একটা বাস দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নষ্ট হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকবে, সেটাকে প্রশাসনের কেউ সরাবে না, এটা কেমন কথা।’

নষ্ট বাসটি অতিক্রম করার সময় দেখলাম, সেটি অনেক পুরোনো। বাসের ভেতর কয়েকজন বসে আছেন। হতে পারে তাঁরা বাসের শ্রমিক। কথা বলার সুযোগ পাইনি। বাসটি কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, না এমনিতেই নষ্ট হয়ে আছে, সেটা নিশ্চিত হতে পারিনি।

আরও পড়ুন২৫ কিলোমিটার যানজট, ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ হাজার যানবাহন পারাপার৪ ঘণ্টা আগে

ঢাকা-বরিশাল পথে পদ্মা সেতু চালুর পর নতুন নতুন বাস কোম্পানি সেবা শুরু করেছে। যানবাহনের চাপ বেড়েছে। কিন্তু ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সড়ক সরু। সেখানে বড় কোনো যানবাহন হঠাৎ বিকল হয়ে গেলে মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না। এমন পরিস্থিতি হলে মানুষের ভোগান্তি লাঘবে প্রশাসনের তৎপরতাও দেখা যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

যানজটে আটকে থাকতে থাকতে নিজের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়ছিল। ১০টায় বাড়ি পৌঁছানোর কথা। কিন্তু কখন পৌঁছাবে জানি না। গভীর রাত হয়ে গেলে কীভাবে যাব?

মহাসড়ক থেকে আমার বাড়ি আড়াই কিলোমিটারের মতো। গভীর রাতে কি কোনো যানবাহন পাব? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না। যদি পথে ছিনতাই হয়। সঙ্গে কোরবানির টাকা।

রাত দুইটায় বামরাইল নামলাম। নেমে দেখি কয়েকটি দোকান খোলা। বেশ কিছু মানুষ। কয়েকজন নারীও আছেন। তাঁরা স্বজনের ফেরার অপেক্ষায়। স্বজন কখন ফিরবেন, তা তাঁদের অজানা।

ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যান পেলাম। ২০ টাকার ভাড়া ১২০ টাকা দিয়ে বাড়ি গেলাম।

আরও পড়ুনপদ্মা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ৫ কোটি টাকার টোল আদায়ের রেকর্ড৬ ঘণ্টা আগে

১৯৯২ সাল থেকে ঢাকায় থাকি। এর মধ্যে দু–একবার বাদ দিয়ে বাকি বছরগুলোয় পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা গ্রামের বাড়িতে কাটিয়েছি।

আগে ঢাকা–বরিশাল পথে চলাচল করতাম আরিচা হয়ে। সময় লাগত কখনো ৫ ঘণ্টা, কখনো ৭ ঘণ্টা। শীতে কুয়াশা পড়লে ফেরিঘাটে দেরি হতো।

ভেবেছিলাম পদ্মা সেতু হলে মুক্তি। কিন্তু তা হয়নি। এখন ঢাকা থেকে বের হওয়া ও ঢাকায় ঢোকার মুখে যে যানজট হয়, তা অসহ্য।

৩৩ হাজার কোটি টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্দেশ্য মানুষের সহজ যাতায়াত। উদ্দেশ্য পুরোপুরি পূরণ হয়নি, তা বলা যাবে না। কিন্তু এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের সুফল অনেকটাই নষ্ট করেছে ঢাকায় ঢোকার মুখে এবং বের হওয়ার সময়ের যানজট। সঙ্গে সড়কে বিকল হয়ে থাকা দু-একটা যানবাহন মেগা প্রকল্পের সুফল নষ্ট করে দেয়।

‘লাখ টাকার গাছ যাতে দুই টাকার ছাগলে’ না খেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করবে কে?

আরও পড়ুনঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, ধীরগতি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও৬ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনবিলাসবহুল এসি বাসে ‘যেমন ইচ্ছা তেমন ভাড়া’০৫ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ল ম ট র র মত র য নজট র স ফল বর শ ল র হওয গ রনদ

এছাড়াও পড়ুন:

২২ অনাথ কাশ্মীরি শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী

অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি গোলায় ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ২২ অনাথ শিশুর লেখাপড়ার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই শিশুরা পুঞ্চ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে স্নাতক হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুদের পড়াশোনার সব খরচ রাহুল গান্ধী বহন করবেন। সেই খরচের প্রথম কিস্তির টাকা বুধবার ওই পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা।

পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল কয়েকজন জঙ্গি। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন পর্যটক। প্রত্যাঘাতের জন্য ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। চার দিনের সেই লড়াইয়ের সময় জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন ৭০ জনের বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, ওই ২২ শিশু ওইসব পরিবারেরই সন্তান। তাদের কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ–বা দুজনকেই হারিয়েছে। কারও পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

রাহুল গত মে মাসে ওইসব এলাকায় গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনাথ শিশুদের স্কুলেও গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনাথ শিশুদের তালিকা তৈরি করতে। সরকারি নথির সঙ্গে সেই নাম মিলিয়ে ২২ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়। পুঞ্চ জেলা সফরের সময় রাহুল তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ওই শিশুদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার সব খরচ তিনি দেবেন।

পাকিস্তানের গোলার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন ১২ বছরের দুই যমজ ভাই–বোন জাইন আলি ও উরবা ফতিমা। রাহুল তাঁদের স্কুলে গিয়েছিলেন। সেই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুদের হারিয়েছ। সে জন্য তোমাদের মন খারাপ। ওই মৃত্যু আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের দুঃখ আমি বুঝি। কিন্তু তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। তোমরা ভয়কে জয় করেছ। রাহুল ওই শিশুদের বলেছিলেন, ভয়কে জয় করতে হবে। সুদিন আসবে। সব আবার স্বাভাবিক হবে।

ওই ২২ জনের জন্য বছরে কত খরচ হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানাননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ