গোপন বন্দিশালা পরিচালিত হতো ‘হাসপাতাল’ ও ‘ক্লিনিক’ নামে
Published: 10th, June 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে যেসব গোপন বন্দিশালায় গুম শিকার হওয়া ব্যক্তিদের আটকে রাখা হতো, সেগুলোর মধ্যে দুটির সাংকেতিক নাম ছিল ‘হাসপাতাল’ ও ‘ক্লিনিক’। এ দুটি বন্দিশালা পরিচালনার মূল দায়িত্বে ছিল র্যাবের গোয়েন্দা শাখা।
উত্তরার র্যাব-১ কার্যালয়ের চত্বরে থাকা টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন বা টিএফআই সেল হিসেবে পরিচিত বন্দিশালার সাংকেতিক নাম ছিল হাসপাতাল। এটি র্যাব সদর দপ্তরের অধীনে পরিচালিত হতো। তবে সুনির্দিষ্টভাবে দেখভাল করত র্যাবের গোয়েন্দা শাখা।
সাংকেতিক নাম ‘ক্লিনিক’ হিসেবে পরিচালিত বন্দিশালাটির অবস্থান ছিল র্যাব সদর দপ্তরের চত্বরেই। কাচঘেরা কাঠামো হওয়ায় এই বন্দিশালাটিকে ‘গ্লাস হাউস’ নামেও ডাকা হতো।
গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এ দুটি গোপন বন্দিশালার বিস্তারিত উঠে এসেছে। ৪ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ: আ স্ট্রাকচারাল ডায়াগনোসিস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে গুমের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রতিটি বাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৭ আগস্ট গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে। কমিশন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করছে। গত ১৪ ডিসেম্বর ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ (সত্য উন্মোচন) শীর্ষক প্রথম অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছিল কমিশন। সেই প্রতিবেদনে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা উঠে আসে।
আরও পড়ুনগুমের শিকার ব্যক্তিদের খোঁজে সিটিটিসির ‘বন্দিশালায়’০৭ আগস্ট ২০২৪ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কীভাবে গুমের আলামতগুলো ধ্বংস করা হয়েছে, তা–ও উঠে আসে প্রথম প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) পরিচালিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলসহ (জেআইসি) বিভিন্ন সংস্থায় ৫ আগস্টের পর গুমের আলামত ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে।
টিএফআই সেলটি তিনটি আলাদা অংশে বিভক্ত ছিল। একটি প্রশাসনিক এলাকা, একটি বৃহত্তর বন্দিশালা এবং একটি ছোট এলাকা, যা নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যবহৃত হতো।দ্বিতীয় প্রতিবেদনে পূর্বের ঘটনার সারাংশ তুলে ধরে বলা হয়, অনুসন্ধান যত এগিয়েছে, ততই আরও নতুন নতুন প্রমাণ ধ্বংসের ঘটনার সন্ধান পাওয়া গেছে। ‘হাসপাতাল’ ও ‘ক্লিনিক’ নামে র্যাব পরিচালিত দুটি গোপন বন্দিশালার অনেক আলামতও সরকার পতনের পর ধ্বংস করা হয়। অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোই এ কাজ করে। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও চিহ্ন সম্পূর্ণভাবে মুছে যায়, তদন্তকাজে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং সময়ক্ষেপণ হয়। পরে ভুক্তভোগীদের বর্ণনা অনুযায়ী বন্দিশালাগুলো শনাক্ত করা হয়।
‘হাসপাতাল’–এর খোঁজ যেভাবে২০১৬ সালের ৯ আগস্ট মীর আহমদ বিন কাসেমকে (ব্যারিস্টার আরমান) মিরপুর ডিওএইচএস থেকে গুম করার কথা জানায় পরিবার। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ছেলে। গোপন বন্দিশালা থেকে গত ৬ আগস্ট পরিবারের কাছে ফেরেন আরমান। মূলত তাঁর দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী বন্দিশালা হাসপাতালের খোঁজ পায় তদন্ত কমিশন।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে খবর ছিল, ব্যারিস্টার আরমান ডিজিএফআইয়ের গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘরে’ (জেআইসি) আটক ছিলেন। কিন্তু তিনি যে সেখানে ছিলেন না, এ বিষয়ে প্রথম ইঙ্গিত মেলে তাঁরই সাক্ষ্য থেকে। কারণ, প্রতিটি বন্দিশালার নিজস্ব পরিচালনা ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে প্রহরীদের আচরণ, শৌচাগার ব্যবহারের সময়সূচি, পরিবেশের শব্দ, পরিবেশিত খাদ্যের ধরন এবং অন্যান্য সংবেদনশীল সংকেত দিয়ে একটি বন্দিশালাকে শনাক্ত করা যায়। কিন্তু আরমান যে বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তার সঙ্গে ডিজিএফআইয়ের বন্দিশালার পরিচিত বৈশিষ্ট্যগুলোর অসামঞ্জস্যতা স্পষ্ট হয়। ডিজিএফআইয়ের বন্দিশালায় আটক থাকা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দ্বন্দ্ব দূর করতে আরমানের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ধীরে ধীরে তাঁর বর্ণনায় এমন কিছু বিষয় উঠে আসে, যা ইঙ্গিত দেয় যে তাঁকে আসলে র্যাব সদর দপ্তরের অধীনে পরিচালিত র্যাব-১ প্রাঙ্গণে অবস্থিত টিএফআই সেলে আটকে রাখা হয়েছিল। গত ১৬ অক্টোবর প্রথমবার ওই টিএফআই সেল পরিদর্শন করলে কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি অন্তত দুই বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এই দাবি তখন কিছুটা বাস্তবসম্মত মনে হয়েছে কমিশনের। কারণ, স্থাপনাটি জরাজীর্ণ, অবকাঠামো ভাঙাচোরা এবং পুরো এলাকা দীর্ঘকাল অযত্নে পড়ে থাকার ছাপ রয়েছে।
আরও পড়ুনগুমের ঘটনায় প্রধান ভূমিকা পুলিশ, র্যাব, ডিবি ও সিটিটিসির০৫ জুন ২০২৫টিএফআই সেলটি তিনটি আলাদা অংশে বিভক্ত ছিল। একটি প্রশাসনিক এলাকা, একটি বৃহত্তর বন্দিশালা এবং একটি ছোট এলাকা, যা নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যবহৃত হতো। ব্যারিস্টার আরমানের বর্ণনা নির্যাতন এলাকার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলে যায়। পরে কমিশন বুঝতে পারে, নির্যাতন শাখার একটি ছোট অংশ দীর্ঘমেয়াদি বন্দীদের আবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
যেমন আরমান বলেছিলেন, তাঁর পায়ের নিচে থাকা মেঝেটি ছিল ঠান্ডা এবং টাইলস করা। কিন্তু কমিশনের সদস্যরা যখন সেই স্থানে যান, তখন মেঝে ছিল অসমান ও রুক্ষ সিমেন্টের, যা অনেক আগে থেকেই পড়ে ছিল। এটিই ছিল সন্দেহের কারণ। কমিশন দেখতে পায়, মেঝেতে বর্গাকৃতির চিহ্ন রয়েছে, যা পরিত্যক্ত টাইলসের চিহ্ন হতে পারে। এরপর টাইলসের খোঁজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
টিএফআই সেলের গোপন কক্ষ আবিষ্কারের পর কমিশন প্রমাণ ধ্বংসের সময়রেখা নিয়ে আরও অনুসন্ধান চালায়। এরপর কমিশন নিশ্চিত হয়, এই স্থানটিতে ধ্বংস ও গোপন করার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০২৪ সালের আগস্টে হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই।বন্দিত্বকালীন অধিকাংশ সময় আরমানের চোখ বাঁধা ছিল। তবে অন্য অনেক বন্দীর মতো তিনি দিকনির্দেশনা ও চলাচলের স্মৃতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছিলেন। সেই অনুযায়ী তাঁকে একটি মানচিত্র একে দিতে বলে তদন্ত কমিশন। ওই মানচিত্র থেকে কমিশনের সন্দেহ আরও জোরদার হয়। এরপর আরমান তাঁর কাছে পাঠানো একটি ছবি থেকে ধারণা করেন, এ অংশে তাঁর কক্ষের দরজা ছিল, যা পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণ অনুসন্ধানের গতিপথ পাল্টে দেয়।
আরও পড়ুনকী ভয়াবহ একেকটি ঘটনা, আমাদের সমাজের ‘ভদ্রলোকেরা’ এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা০৪ জুন ২০২৫প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে কমিশন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের একটি নকশা পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট দেয়ালের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিমাপ তুলনা করার অনুরোধ করা হয়। এই পরিমাপের পর অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যায়, এটি পরিত্যক্ত থাকার তথ্য সঠিক নয়। এরপর দেয়াল ভাঙলে একেবারে অক্ষত অবস্থায় থাকা একটি গোপন কক্ষ পাওয়া যায়, যা ব্যারিস্টার আরমানের বর্ণনার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। তখন কমিশন নিশ্চিত হয় যে আট বছরের অধিক সময় আরমান ওই গোপন কক্ষে বন্দী ছিলেন।
ক্রমাগত ধ্বংস করা হয় প্রমাণতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, টিএফআই সেলের গোপন কক্ষ আবিষ্কারের পর কমিশন প্রমাণ ধ্বংসের সময়রেখা নিয়ে আরও অনুসন্ধান চালায়। এরপর কমিশন নিশ্চিত হয়, এই স্থানটিতে ধ্বংস ও গোপন করার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০২৪ সালের আগস্টে হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই। এরপর সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে তা চলমান ছিল।
র্যাবের ঊর্ধ্বতন পদে দায়িত্ব পরিবর্তনের পরও আলামত ধ্বংস বন্ধ হয়নি, এমন উদাহরণ রয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। বলা হয়, র্যাবের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন পরিচালক ৫ আগস্টের আগে থেকে ১৬ অক্টোবর কমিশনের পরিদর্শনের সময়ও একই পদে বহাল ছিলেন। তবে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (অপারেশনস) পদে পরিবর্তন আসে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। নতুন কর্মকর্তার অধীনেও প্রমাণ ধ্বংসের কাজ অব্যাহত ছিল। পরে গোয়েন্দা শাখার পরিচালককে সরিয়ে একজন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নিয়োগ করা হলেও তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা থেকে যায়।
কমিশনের সদস্যদের সরাসরি ও পরোক্ষ—উভয়ভাবেই ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাও ঘটেছে। ব্যক্তিগতভাবে, মুঠোফোনের মাধ্যমে এবং অনলাইন যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে এসব হুমকি দেওয়া হয়।প্রতিবেদনে বলা হয়, র্যাবের নতুন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের মতো কর্মকর্তারা, যাঁরা সরাসরি পূর্বের অপরাধে জড়িত ছিলেন না, তাঁরা এখন একটি দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে পূর্বসূরিদের অপকর্ম আড়াল করতে গিয়ে নিজেরাও নতুনভাবে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। এর আইনগত পরিণতি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করে কমিশন।
সদর দপ্তরেই বন্দিশালা ‘ক্লিনিক’অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়, র্যাব গোয়েন্দা শাখা গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত আরেকটি গোপন বন্দিশালা পরিচালনা করত। র্যাবে ‘ক্লিনিক’ নামে পরিচিত এ বন্দিশালার অবস্থান ছিল র্যাব সদর দপ্তরের চত্বরের মধ্যেই। এর তৃতীয় তলায় একসময় প্রায় ছয়টি ছোট বন্দিশালা ছিল।
গুম–খুনে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে মায়ের ডাক। ১৪ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে সংগঠনটিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য র স ট র আরম ন ট এফআই স ল র বন দ শ ল বন দ শ ল র গ ম র ঘটন কর মকর ত ড জ এফআই পর চ ল ত ৫ আগস ট আরম ন র প রথম অবস থ ব যবহ র সময অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষাবিদ যতীন সরকার পড়ে গিয়ে আহত, হাসপাতালে ভর্তি
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার (৯০) পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। ঊরুর হাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি গত শনিবার রাত থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। শারীরিক অবস্থা কিছু ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর অস্ত্রোপচার হতে পারে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
যতীন সরকার বেশ কয়েক মাস ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলি আর্থ্রাইটিসে ভুগছিলেন। কয়েক মাস আগে বেশ কিছু কারণে তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর কিছুটা সুস্থ হলে নেত্রকোনায় নিজ বাড়িতে বসবাস করছিলেন।
যতীন সরকারের স্ত্রী কানন সরকার প্রথম আলোকে জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শোবার কক্ষে সামনে বারান্দা থেকে পত্রিকা আনতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। এরপর রাইট ফিমার নেক ফ্যাকচার হয়। এরপর গত শনিবার তাঁকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর শরীরে জটিল অস্ত্রোপচার হতে পারে।
কানন সরকার বলেন, তাঁর স্বামী মানুষের সান্নিধ্য পছন্দ করেন। শারীরিক অবস্থা উন্নতি না হওয়া সত্ত্বেও এখন তিনি নিজ বাসায় চলে যেতে চাইছেন।
যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক সুদীর্ঘকাল ধরে মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
লেখক হিসেবে যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’ গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থপুরস্কার, ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।
৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় থেকে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণের পর যতীন সরকার স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে শিকড়ের টানে চলে আসেন নিজ জেলা নেত্রকোনায়। বর্তমানে বসবাস করছেন শহরের সাতপাই এলাকার নিজ বাড়িতে।