মৃত্যুর আগে স্ত্রী-সন্তানের থেকে বিদায় নিয়েছিলেন মামুন, স্ত্রী বোঝেননি শেষবিদায়
Published: 11th, June 2025 GMT
ঈদের ছুটিতে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে সোনারগাঁয় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল যুবদল কর্মী মামুন ভূঁইয়ার (৩৫)। কিন্তু ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে যাওয়া হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে গাড়িতে তুলে দিয়ে তাঁদের থেকে বিদায় নেন। বিদায়ের সময় ছোট্ট দুই সন্তানের কপালে চুমু খেয়েছিলেন। নিজেও কপাল বাড়িয়ে নিয়েছিলেন সন্তানের চুমু। এর কিছুক্ষণ পরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মামুন মারা যান।
আজ বুধবার দুপুরে দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছিলেন মামুনের স্ত্রী ইমা আক্তার। বারবার বলছিলেন, ‘এই বিদায় যে শেষবিদায় হইব তা জানলে তো আমি তাঁর হাত ছাড়ি না খোদা। আমি তো তাঁরে চোখের আড়াল করতাম না। উনি তো খুনের রাজনীতি করতেন না। কোন পাপের শাস্তি পাইলাম আমরা। কোন কারণে আমার মাসুম বাচ্চাদের এতিম কইরা দিল।’ এ সময় তিনি তাঁর স্বামীর হত্যার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক জায়েদুল ইসলাম ওরফে বাবুকে দায়ী করেন।
মামুন ভূঁইয়ার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা মাঝিনা এলাকায়। এলাকার প্রয়াত আবদুল মান্নানের ৯ সন্তানের মধ্যে মামুন ষষ্ঠ। খুব বেশি পড়াশোনা করেননি। বাড়ির পাশেই মুদিদোকানের ব্যবসা করতেন। পাশাপাশি এলাকায় গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহ করতেন।
বুধবার সকালে মাঝিপাড়া এলাকায় গিয়ে অন্তত ২০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, মামুনদের পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতি করে। তাঁর বড় ভাই বাদল ভূঁইয়া ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপির রাজনীতি করায় ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন সময় তাঁদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ৫ আগস্টের পর বাদল ভূঁইয়ার সুবাদে যুবদলের সভা-সমাবেশে যেতেন মামুন।
আরও পড়ুনছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সময় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে যুবদলকর্মী নিহত৩ ঘণ্টা আগেস্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে মাঝিপাড়া এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ভুলতা ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন ওরফে খোকাকে আটক করেন এলাকাবাসী। সেখানে যুবদল নেতা বাদলের অনুসারী কর্মী-সমর্থকেরাও ছিলেন। আটক ছাত্রলীগ নেতাকে বাদলের বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে নিজের অনুসারীদের নিয়ে উপস্থিত হন জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক জায়েদুল ইসলাম। তখন জায়েদুল প্রভাব বিস্তার করে সাব্বিরকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাদলের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ শেষে এলাকা ছাড়ার সময় মাঝিপাড়া এলাকায় মামুনকে একা পেয়ে গুলি করা হয়। একটি গুলি তাঁর কানের পাশে মাথায় লাগে। উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মামুন মারা যান।
আজ দুপুরেও মাঝিপাড়ার সড়কে রক্তের কালচে দাগ দেখা গেছে। সেই সড়ক থেকে ৫০০ গজের মধ্যে মামুনের সিলিন্ডারের দোকান। আজ বেলা দেড়টায় ময়নাতদন্ত শেষে মামুনের লাশ মাঝিনা এলাকায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে আগে থেকেই বিএনপি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। সকাল থেকেই বাড়ির ভেতর থেকে আহাজারির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। দুপুরে লাশবাহী গাড়ি বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই বাড়িতে জড়ো হওয়া নারী-পুরুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নিহত মামুন ভূঁইয়া.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক য় র সময় য বদল ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
হামলায় ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা
ইরানে চালানো হামলায় ইসরায়েলের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল রাজধানী তেহরান ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থিত পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা। হামলার আগেই রেকর্ড করে রাখা একটি ভিডিও বার্তায় এ কথা বলে ইরানে হামলার কথা নিশ্চিত করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ওই ভিডিও বার্তায় বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, এই অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানাগুলো ধ্বংস করা। এই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে, কারণ ইসরায়েলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই এখন প্রধান লক্ষ্য।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, তেহরানের আবাসিক এলাকাতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
এ ঘটনায় হতাহতের মধ্যে শিশুরাও আছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেছেন, ইরান থেকে শিগগিরই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আশঙ্কা রয়েছে।
ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বাজিয়ে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে এবং ভোর ৩টা থেকে জরুরি কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনসমাগম এবং অধিকাংশ কর্মস্থল বন্ধ থাকবে। দেশটির বিমান চলাচলও সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ইরানের স্থানীয় সংবাদ সংস্থার বরাতে আল–জাজিরা জানিয়েছে, শহরজুড়ে ইসরায়েলি হামলার পর তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠা-নামা স্থগিত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত নয়। ওয়াশিংটনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ওই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
অবশ্য হামলার আগে গত বুধবার ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পারমাণবিক আলোচনা ভেঙে পড়লে এবং যুদ্ধ শুরু হলে, আমাদের লক্ষ্য হবে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত সব মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। প্রয়োজনে আমরা এগুলোতে সরাসরি আঘাত করব।