জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের তৃতীয় বৈঠকে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু হয়। এর আগে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় আলোচনায় যোগ দেয়নি জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াতের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ।

আলোচনায় সব রাজনৈতিক দল অংশ নেওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এ আলোচনায় তাড়াহুড়োর চেয়ে ঐকমত্যকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘কিছু আলোচনা সমাপ্ত হয়নি, সেটা আগামী সপ্তাহের আলোচনায় পুনরায় তোলা হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, আলোচনার কোনো অংশকে পুনরুক্তি না করে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য।’

আজকের আলোচনা থেকে বড় অগ্রগতি অর্জনের আশা প্রকাশ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘আগামী জুলাইয়ের মধ্যেই আমাদের জাতীয় সনদ তৈরির কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। কাজেই আমাদের সময়ের স্বল্পতাও রয়েছে। বিষয়টিও রাজনৈতিক দলগুলোর খেয়াল রাখতে হবে।’

আলোচনায় অংশ নিয়েছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, সিপিবি, এবি পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচ্য সূচির মধ্যে রয়েছে অসমাপ্ত আলোচনা শেষ করা, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন।

বৈঠকে উপস্থিত আছেন জাতীয় ঐকমত্য সদস্য আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র আল চ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনা শেষে মৌলিক সংস্কারের ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত এসেছে। এর মধ্যে ৭টি বিষয়ে সব দল একমত হয়েছে আর ১২টি বিষয়ে বিভিন্ন দলের ভিন্নমত ও মন্তব্যসহ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অগ্রগতি, যা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘ হতাশার মাঝে কিছুটা হলেও আশাবাদের জায়গা তৈরি করে।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান যে বৃহৎ জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো বাংলাদেশের নাগরিকেরা আর পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরতে চান না। অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যাতে কোনোভাবে ফিরতে না পারে, তার জন্য রাষ্ট্র, সরকার ও শাসনকাঠামোয় মৌলিক সংস্কার প্রত্যাশা করেছেন তাঁরা।

জন-আকাঙ্ক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম পর্যায়ে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে। এরপর আরও পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশন তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার পর প্রধান ছয়টি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দফায় ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৪টি এবং ২ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩০টি দলের সঙ্গে ২৩টি বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অতীতে এত সময় ধরে এতগুলো রাজনৈতিক দল মিলে এমন রাজনৈতিক ঐক্যপ্রচেষ্টা আর কখনোই হয়নি।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই দফা আলোচনার পর যেসব বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা নিয়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও এর আইনি ভিত্তি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক। আর সেই মতপার্থক্য নিরসনের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পথ হলো আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দলগুলো খুব শিগগির এ ব্যাপারে একটা যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছাতে পারবে বলে আমরা আশা করি।

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের আমলে পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। ফলে দেশের সিংহভাগ নাগরিকই দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত আছেন। এ অবস্থায় দেশের নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা হলো একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আবার গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করবে। ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। আমরা মনে করি, তাঁর ঘোষিত সময়সীমা, অর্থাৎ আগামী ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলের মধ্যেই দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।

একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। নির্বাচন কমিশন সে ব্যাপারে তাদের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে অগ্রগতি দেখাতে পেরেছে, তা ধরে রাখার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। এ ক্ষেত্রে দলগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন করছে, তার ওপর দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের অনেকটাই নির্ভর করে। এই প্রচেষ্টা একটা অগ্রগতির জায়গায় নিয়ে আসার জন্য ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাঁদের সবাইকে আমরা সাধুবাদ জানাই। 

এটা ঠিক যে একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বড় একটা বাধা দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ৫ আগস্টের পর পুলিশের মনোবল ও শৃঙ্খলা অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল। সেখান থেকে অনেকটা উত্তরণ হলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি পুলিশ। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীরও অধিক সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ সনদ প্রকাশ উচিত নয়
  • ঐকমত্য হয়েছে বেশ কিছু মৌলিক সংস্কারে
  • এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে
  • নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ
  • নানা বাধার কারণে রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব হয়নি: আসিফ মাহমুদ
  • ৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের
  • যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে: আলী রীয়াজ
  • মৌলিক ১৯ সংস্কার বিষয়ে সিদ্ধান্ত, ৯টিতে ভিন্নমত
  • সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে কমিশনের সভা বর্জন বাম দলগুলোর
  • সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের, সদস্য মনোনীত হবেন পিআর পদ্ধতিতে