রাজধানীর মিরপুরে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে ও ছুরিকাঘাত করে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর ২১ লাখ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা লুটে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সূত্র ধরে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. জাফর (৩৩), মোস্তাফিজুর রহমান (৪০), সৈকত হোসেন ওরফে দিপু মৃধা (৫২), সোহাগ হাসান (৩৪), জলিল মোল্লা (৫২) ও পলাশ আহমেদ (২৬)। মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা গত ২৪ জানুয়ারি কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকায় গুলি করে ৫০ ভরি স্বর্ণ লুট এবং গত ২০ অক্টোবর সাত মসজিদ রোড ধানমন্ডি থানা এলাকায় গুলি করে ৫২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানান, গত ২৭ মে সকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী তাদের মিরপুর-১১ নম্বরের সি-ব্লকের বাসা থেকে একটি কালো ব্যাগে ব্যবসার ২১ লাখ টাকা ও বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের (মিরপুর ১০ নম্বর) উদ্দেশে হেঁটে রওনা হন। তারা সকাল আনুমানিক ৯টা ৪০ মিনিটে শেরেবাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝের গলির মাথায় পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে চারটি মোটরসাইকেলে ওত পেতে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় ৭-৮ জন মাস্ক পরা দুর্বৃত্ত তাদের পথরোধ করে। তাদের একজন জাহিদুল হক চৌধুরীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তার হাতে থাকা টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। জাহিদুল হক এবং তার শ্যালক রাসেল ডাকাত দলকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে মুখোশধারী একজন ফাঁকা গুলি করে ভীতির সৃষ্টি করে এবং অপর একজন ধারালো চাপাতি দিয়ে জাহিদুলের কোমরের বাম পাশে আঘাত করে। চাপাতির আঘাতে জাহিদুল গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা টাকার ব্যাগটি নিয়ে মোটরসাইকেলে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে মিরপুর-১ নম্বরের দিকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনাটি একজন পথচারী তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করলে তা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় জাহিদুল হক চৌধুরীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা হয়। 

ডিবি সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিবির একাধিক টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটন, জড়িতদের গ্রেপ্তার, ব্যবহৃত অস্ত্র ও গাড়ি উদ্ধারের লক্ষ্যে মাঠে নামে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির টিম ঘটনায় ব্যবহৃত একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস শনাক্ত করে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মাইক্রোবাসটির চালক জাফরকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাফর মাইক্রোবাসটি ডাকাতির কাজে ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন। ডিবি টিম তার দেওয়া তথ্য মতে গাজীপুর টঙ্গী এলাকা থেকে মাইক্রোবাসটি জব্দ করে।

ডিবি সূত্র আরও জানায়, তথ্যপ্রযুক্তির চূড়ান্ত বিশ্লেষণে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির একাধিক টিম একইসঙ্গে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ডাকাতদলের মূল পরিকল্পনাকারী জলিল মোল্লাসহ অপরাপর সদস্য মোস্তাফিজ, পলাশ, দিপু ও সোহাগকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত পাঁচ লাখ তিন হাজার টাকা ও ১০৬ টি বিভিন্ন মানের বৈদেশিক মুদ্রা, দুই লাখ ১২ হাজার টাকা মানের জাল নোট এবং ঘটনায় ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা পেশাদার ডাকাত এবং তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, খুন, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারসহ অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ নত ই গ র প ত র কর জ হ দ ল হক ব যবহ ত ব যবস ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার

দেশের প্রতি চারজনের একজন মানুষ এখনো বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) বিষয়ক এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা কমিশনে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশের জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন জিইডির সদস্য (সচিব) মনজুর হোসেন। আলোচক ছিলেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতার এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিবিএসের ২০১৯ সালের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের (এমআইসিএস) তথ্য ব্যবহার করে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) নিরূপণ করা হয়েছে।  বহুমাত্রিক দারিদ্র্য হলো দারিদ্র্য পরিমাপের একটি বিস্তৃত পদ্ধতি, যা শুধু আয় বা ভোগের মতো একক মাত্রার বাইরে গিয়ে দারিদ্র্যকে তার বিভিন্ন দিক থেকে বুঝতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের এ সূচকে তিনটি মাত্রা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যাতে জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়েছে। এই মাত্রাগুলোকে ১১টি আলাদা সূচকে ভাগ করা হয়েছে। যেমন জীবনযাত্রার মানের মধ্যে রয়েছে—বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, খাওয়ার পানি, বাসস্থান, রান্নার জ্বালানি, সম্পদ এবং ইন্টারনেট সংযোগ।

এমপিআই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে ২৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে রয়েছে, যা সংখ্যায় প্রায় ৩ কোটি ৯৮ লাখ। গ্রামীণ এলাকায় এই হার ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ, আর শহরে ১৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সিলেট বিভাগে এই দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ, ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর পাঁচটি জেলায় ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। জেলাগুলো হলো—বান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও ভোলা। শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এ হার ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

প্রধান অতিথি আনিসুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে এমপিআই-কে দারিদ্র্য দূরীকরণের একটি নতুন ও উদ্ভাবনী কৌশল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই পদ্ধতি সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে। তিনি এ সূচককে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এ ছাড়া কিছু জেলায় দারিদ্র্যের হার বেশি হওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে আরও গবেষণা করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এমপিআই ব্যবস্থাটি আয়ভিত্তিক দারিদ্র্য মাপকাঠিকে সম্পূরকভাবে সহায়তা করবে এবং এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে। সভাপতির বক্তব্যে মনজুর হোসেন জানান, জিইডি ভবিষ্যতেও নিয়মিত এই সূচক প্রকাশ করবে এবং নীতিনির্ধারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ্মা সেতুর ঢালে বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত
  • ডিজিটাল মেশিনে ওজন নিন
  • বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর রাজনীতি না করার ঘোষণা
  • যেসব মালিক ব্যাংকঋণ নিয়ে পালিয়েছেন, সেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে: শ্রম উপদেষ্টা
  • ভারতে উড়োজাহাজে সহযাত্রীর থাপ্পড়ের পর খোঁজও মিলছে না যাত্রীর: পরিবারের দাবি
  • প্রলোভনের এই যুগে নিজেকে রক্ষার উপায়
  • নারীরা কেন পুরুষদের তুলনায় বেশিবার প্রস্রাব করেন?
  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার