১২৮ পৃষ্ঠার একটি খাতার দাম এখন অন্তত ৫০ টাকা। মানভেদে এই খাতা সর্বোচ্চ ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ চার–পাঁচ বছর আগেও ৩০ টাকায় পাওয়া যেত। একইভাবে বেড়েছে ২০০ পৃষ্ঠার খাতার দাম ৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৮০-৯০ টাকা। ৩০০ পৃষ্ঠার খাতা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়; আগে ছিল ৮০ টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২০–২১ সালেও প্রতি দিস্তা কাগজের দাম ছিল ১৬ টাকা, এখন তা ৩৫ টাকা। কয়েক বছর ধরেই কাগজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বই, খাতা ও ব্যবহারিক খাতার মতো কাগজনির্ভর শিক্ষা উপকরণে। গত পাঁচ বছরে এসব শিক্ষা উপকরণের দাম গড়ে বেড়েছে প্রায় শতভাগ।

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার লাকি বুকস অ্যান্ড স্টেশনারির জ্যেষ্ঠ বিক্রয়কর্মী মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, খাতার জন্য সবচেয়ে বেশি চলে ‘৫৫ গ্রাম’ (কাগজের ধরন) কাগজ। ২০২০ সালে প্রতি রিম কাগজ ১ হাজার ২০ টাকায় কিনতেন। বর্তমানে এর দাম ২ হাজার ১০০ টাকার আশপাশে থাকে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বইয়ের দামও। ২০০ টাকা দামের স্কুলের বইয়ের মূল্য ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

মাঝে কলমের দাম কিছুটা বাড়লেও এখন আবার আগের জায়গায় ফিরেছে। তবে পেনসিলের দাম কিছুটা বাড়তি।

কচুক্ষেত, মিরপুর ১০ ও নীলক্ষেত এলাকার বেশ কিছু দোকান ঘুরে জানা গেল, বাজারে চীন থেকে আমদানি করা কলম, পেনসিল বক্স, প্লাস্টিকের ফাইল ইত্যাদি স্টেশনারি পণ্যের চাহিদা বেশি। তবে আমদানিকারকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় এগুলোর দাম সেভাবে বাড়েনি। মাঝে কলমের দাম কিছুটা বাড়লেও এখন আবার আগের জায়গায় ফিরেছে। তবে পেনসিলের দাম কিছুটা বাড়তি।

শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি বেড়েছে স্কুলের বেতন (টিউশন ফি), প্রাইভেট পড়ানোর খরচও। অভিভাবকেরা বলছেন, এসব খরচ বাড়ার তুলনায় তাঁদের আয় সেভাবে বাড়েনি। তাই সন্তানের শিক্ষার খরচ মিটিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।

রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার একটি নামকরা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে মেয়েটি। তার বেতন ১ হাজার ৩০০ টাকা, টিউশন শিক্ষক নেন ৫ হাজার টাকা। বছরে দুবার কিনতে হয় ১৪টি খাতার সেট। যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মাসে এই শিশুর জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই শিশুর অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্তানের মানসম্মত পড়ালেখা নিশ্চিতে কষ্ট হলেও ব্যয় করতেই হয়। উপায় তো নেই। ভালো স্কুলে খরচ এমনই। তবে শিক্ষা ব্যয় কমলে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে আর্থিক চাপ কিছুটা কমত।’ এই অভিভাবকের ছোট ছেলে নার্সারিতে পড়ে। দুই ভাই–বোনের পড়ালেখার খরচ মাসে ১৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।

অথচ একই শহরের আরেক অভিভাবক মো.

বাবুলের মাসিক আয় এর চেয়ে কম। মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় পিঠা বিক্রি করেন তিনি। তাঁর ১২-১৫ হাজার টাকা আয় হয় মাসে। এই টাকাতেই সংসার চালাতে হয়। বাসাভাড়া, খাবার, ওষুধ—সব খরচ মিটিয়ে সন্তানের পড়ালেখার জন্য আলাদা টাকা বের করা কঠিন। তাই সন্তানকে নামী স্কুলে পড়ানোর সক্ষমতা নেই এই বাবার।

প্রশ্ন ওঠে, মহানগরগুলোর নিম্ন আয়ের পরিবারের পক্ষে এই ফি দেওয়া সম্ভব কি না? বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে, এমন অভিযোগও আছে।বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

বই-খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ, স্কুলের বেতন এবং নানা নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টাকা আদায়—সব খাতেই খরচ বাড়ার কথা জানালেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বেতন-ভাতা বেড়েছে সরকারি নির্দেশনায়। স্কুলগুলোর ইচ্ছেমতো ফি বাড়ানো ঠেকাতে সৎ উদ্দেশ্যেই সরকার হয়তো এটা করেছে। কিন্তু একাধিক সন্তান থাকলে নিম্ন আয়ের কতজন অভিভাবক এই খরচ মেটাতে পারবেন?’ তিনি বলেন, উপবৃত্তি, মিড ডে মিল ভালো উদ্যোগ। কিন্তু মূল্যস্ফীতি যেভাবে বেড়েছে, সেই অনুপাতে উপবৃত্তি বাড়েনি।

উল্লেখ্য, এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিও স্কুল-কলেজের বেতন ছাড়া অন্য সব ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি নীতিমালা ২০২৪-এ বলা হয়েছে, মহানগরের (সিটি করপোরেশন এলাকা) এমপিওভুক্ত স্কুল ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বেতন ছাড়া অন্যান্য খাতে একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ২ হাজার ৪৬৫ টাকা আদায় করতে পারবে। জেলা সদর, পৌর এলাকা ও উপজেলা সদরের এমপিওভুক্ত স্কুলের ক্ষেত্রে ফি বাবদ দিতে হবে ১ হাজার ৮৫০ টাকা। মফস্‌সলের স্কুলের ক্ষেত্রে তা হবে ১ হাজার ৪০৫ টাকা। নন-এমপিও স্কুলের ক্ষেত্রে এই খরচ আরও বেশি।

প্রশ্ন ওঠে, মহানগরগুলোর নিম্ন আয়ের পরিবারের পক্ষে এই ফি দেওয়া সম্ভব কি না? বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে, এমন অভিযোগও আছে।

বিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম নিয়ে সরকারি পর্যায় থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো তদারকি তাঁর চোখে পড়েনি বলে জানালেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, শিক্ষার পেছনে পরিবারের এত বেশি ব্যয় সংগত নয়। শিক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।

২০২৩ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২–এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করতে হয় পরিবারকে। এনজিও বিদ্যালয়ে ফি সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় তিন গুণ বেশি। বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ক্ষেত্রে এই ব্যয় ৯ গুণ বেশি। প্রাইভেট পড়ানোর খরচের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের গ্রামাঞ্চলের পরিবারগুলোর প্রাইভেট পড়ানোর খরচ ২০০০ সালের ২৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১০ সালে হয়েছে ৫৪ শতাংশ। এই খরচ শহরাঞ্চলে ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৭ শতাংশ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র ব সরক র এমপ ও র খরচ ই খরচ খরচ ম

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহ শুরু করেছে ইসি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের গুদামে ইতোমধ্যেই এসব নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো শুরু হয়েছে।

সোমবার বিকেলে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্বাচন ভবনের বেসমেন্টে অবস্থিত ইসির গুদামে নির্বাচনী সরঞ্জাম দেখতে যান। এ সময় তারা সংগৃহীত ভোটগ্রহণের বিভিন্ন সরঞ্জাম পরীক্ষা করে দেখেন।

এসব নির্বাচনী সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ব্যালট বাক্স, লক, ঢাকনা, গানি ব্যাগ, সিল, বিভিন্ন ধরনের ফরম, প্যাকেট ইত্যাদি।

ইসি ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী দ্রব্য, ফরম, প্যাকেট বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।

নির্বাচনী সরঞ্জাম সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বাসসকে বলেন, ‘আজ বার্ষিক দ্রব্য সংগ্রহের পরিকল্পনা সংক্রান্ত মিটিং করেছি। ইতিমধ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম আসা শুরু হয়েছে।’

ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বাসসকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা কোনো কোনো নির্বাচনী উপকরণ প্রায় অর্ধেক পেয়েছি। আবার কোনো কোনো উপকরণ এখনো আসেনি। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচনী দ্রব্য সামগ্রী পেয়ে যাব।’

ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, বর্তমানে দেশের ১০টি অঞ্চলের আওতায় ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬১ লাখ ৬১ হাজার ২০১ জন। এবার গড়ে প্রতি ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র করার ভিত্তিতে মোট ৪২ হাজার ৬১৮টি ভোটকেন্দ্র প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সব মিলিয়ে ভোটকক্ষ হবে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি। আগামী ২০ অক্টোবর চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহের বিষয়ে সম্প্রতি ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ পর্যন্ত ব্রাস সিল ও সিলগালা বাদে অন্যান্য উপকরণগুলো আমরা পাচ্ছি। সময়সীমা দেওয়া আছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উপকরণগুলো পাচ্ছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সকল দ্রব্য পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহ শুরু করেছে ইসি