জলাবদ্ধতায় নাকাল বরিশালবাসী, মৃত খালগুলো পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ
Published: 11th, July 2025 GMT
একসময় খাল-নদীর শহর হিসেবে খ্যাত বরিশাল আজ মারাত্মক জলাবদ্ধতার মুখে। শহরে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা খালগুলো একসময় প্রাণশক্তি ছিল। ভারী বর্ষণেও দ্রুত সময়ে পানি সরে যেত। কোথাও জলাবদ্ধতা দেখা দিত না। অথচ এখন সামান্য বৃষ্টিতেই নগরের বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যায়। অচল হয়ে পড়ে জনজীবন।
নগরবাসীর ভোগান্তি লাঘবে নগরের মৃত খালগুলো পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মৃত খালগুলো পুনরুদ্ধারে প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। ৭০১ দশমিক ৫৩ কোটি টাকার প্রস্তাবিত প্রকল্পের ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৫৬১ দশমিক ২৩ কোটি টাকার সরকারি অনুদান এবং বাকি ১৪০ দশমিক ৩০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে।
গত সোমবার থেকে টানা তিন দিন বরিশালে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় এখনো হাঁটুপানি। বহু এলাকার বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নাগরিকেরা।
অক্সফোর্ড মিশন রোডের বাসিন্দা ও বরিশাল সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময়ও তাঁদের ঘরে পানি ওঠেনি। অথচ এখন সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো শহর ডুবে যায়। তিনি বলেন, একসময় বরিশালে ২৪টি মূল খাল ও অসংখ্য শাখা খাল ছিল। তিন হাজারেরও বেশি সরকারি-বেসরকারি দিঘি ও পুকুর ছিল। এখন প্রায় সেগুলো নেই। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে খালগুলো দখলমুক্ত করতে দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এভাবে চলতে থাকলে বরিশাল অচিরেই বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হবে।
নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ২৪টি খালের মধ্যে এখন জেল খাল, সাগরদী, লাকুটিয়া, টিয়াখালী, মোহাম্মদপুর, আমানতগঞ্জ, জাগুয়ার ও হরিনাফুলিয়া খালের আংশিক অস্তিত্ব আছে। এসব খালও দখল ও দূষণে মৃতপ্রায়। বাকি খালগুলো বিলুপ্তির পথে। সেগুলোর মধ্যে আছে নাপিতখালী, ভাটার খাল, নবগ্রাম, চাঁদমারী, ভেদুরিয়া, কলাডেমা, সাপানিয়া, কাশিপুর, সোলনা, ভাড়ানী, পুডিয়ার, উত্তর নবগ্রাম সাগরদী, ঝোড়াখালি, তাজকাঠি, চৌপাশা এবং শোভারানী খাল প্রভৃতি।
খাল পুনরুদ্ধারে অর্থায়ন অনুমোদনবরিশালের পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিকদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খাল পুনরুদ্ধার করে পানি প্রবাহ সচল করতে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন খালের পাড় সংরক্ষণসহ পুনরুদ্ধার ও পুনঃখনন কাজ (প্রথম পর্ব)’ শীর্ষক প্রকল্পে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্মতি দিয়েছে। ৭০১ দশমিক ৫৩ কোটি টাকার প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৫৬১ দশমিক ২৩ কোটি টাকা সরকারি অনুদান এবং বাকি ১৪০ দশমিক ৩০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে পুনরুদ্ধারযোগ্য হবে। অর্থ বিভাগের বাজেট-১১ শাখার বাজেট-২ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মোছা.
জানতে চাইলে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার বিকেলে তাঁরা লিখিত অনুমোদনপত্র পেয়েছেন। প্রকল্পটি এখন একনেকে যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরের ২৯টি খালের উন্নয়ন, পুনঃখনন ও আধুনিকায়ন করা হবে। তিনি বলেন, ‘নগরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে এটি বড় অগ্রগতি। আশা করি প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের পর দ্রুত সব খাল পুনরুদ্ধার ও খনন করার উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের ৪৬টি খালের মধ্যে ২০টিতে খনন এবং ৯টিতে খনন, পাড় বাঁধাই, ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। নাগরিকদের বহু প্রত্যাশার এ প্রকল্পে নতুন আশার আলো দেখছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবাদীরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশাল বিভাগের সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলেন, নগরের খাল ও জলাশয় ভরাট করে গড়ে ওঠা দখলনির্ভর উন্নয়নই আজকের জলাবদ্ধতার মূল কারণ। সামনে আরও ভয়াবহ চিত্র দেখা যাবে। তিনি বলেন, খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই প্রতিটি খালের সীমানা নির্ধারণ করে দখলমুক্ত করতে হবে। উৎস ও পতনমুখে যেসব স্থাপনা পানিপ্রবাহে বাধা তৈরি করছে, সেগুলো অপসারণ না করলে খাল খননের সুফল মিলবে না। তাই খাল খননের আগে নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে হাত দেওয়া উচিত।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগর র ব ভ ন ন বর শ ল স ট র প রস ত ব প রকল প দশম ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেবশ্রীর বোন মারা গেছেন
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ের বোন মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ঝুমা রায়। একসময় কলকাতায় বুকে রুমকি-ঝুমকি নামে পরিচিত ছিলেন এই দুই বোন। দারুণ জনপ্রিয় ছিল তাদের নৃত্যশৈলী।
দক্ষিণ কলকাতায় দেবশ্রী রায়ের বাড়ির পাশেই থাকতেন ঝুমা রায়। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে কলকাতায় যাচ্ছেন তাদের ভাই রাজা। দেবশ্রী-ঝুমা বলিউড অভিনেত্রী রানী মুখার্জি ও রাজা মুখার্জির সম্পর্কে খালা হন।
কিছু দিন আগে ঘরোয়া একটি অনুষ্ঠানে দুই বোনকে অন্য মেজাজে দেখা যায় তাদের। সারা বাড়ি সাজানো হয়েছিল লাল-সাদা বেলুনে। সম্ভবত কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে এক হয়েছিলেন তারা। সেখানে মাইক নিয়ে দুই বোনকে গান গাইতে দেখা যায়।
আরো পড়ুন:
ট্রলের মুখে প্রসেনজিতের দুঃখ প্রকাশ
এপ্রিলে বিয়ে, জুলাইয়ে বিচ্ছেদ?
একসময় কলকাতায় রুমকি-ঝুমকির অনুষ্ঠান খুবই জনপ্রিয় ছিল। সেই জুটি এবার ভেঙে গেল। আর কখনো দুই বোনকে একসঙ্গে দেখা যাবে না। এখন পর্যন্ত বোনের মৃত্যু নিয়ে অভিনেত্রী দেবশ্রীর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/শান্ত