চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো.

সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র‌্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র‌্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।

আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।

আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’

আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩

কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স মন র

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবী থেকে ৩৭ কোটি মাইল দূরে থাকা মহাকাশযানের ক্যামেরা যেভাবে মেরামত করেছে নাসা

২০২৩ সালে বৃহস্পতি গ্রহকে প্রদক্ষিণ করার সময় বিকিরণের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয় নাসার জুনো মহাকাশযান। সে সময় বিভিন্ন যন্ত্রাংশের পাশাপাশি মহাকাশযানটিতে থাকা ‘জুনোক্যাম’ ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে আইও চাঁদের নিম্নমানের ছবি পাঠাতে থাকে ক্যামেরাটি। সমস্যা সমাধানে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবী থেকেই ৩৭ কোটি মাইল দূরে অবস্থিত ক্যামেরাটি মেরামত করে নাসা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এনএসআরইসি সম্মেলনে পৃথিবী থেকে ক্যামেরাটির মেরামতপদ্ধতি প্রকাশ করেছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।

নাসার তথ্যমতে, অ্যানিলিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে জুনোক্যাম ক্যামেরা মেরামত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ক্যামেরাটিকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত করে মাইক্রোস্কোপিক ত্রুটি মেরামত করা হয়। মেরামতের পরে বৃহস্পতির চাঁদের উন্নতমানের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে ক্যামেরাটি। ফলে বৃহস্পতির চাঁদে সালফার ডাই–অক্সাইড, তুষারপাত ও আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগোর ম্যালিন স্পেস সায়েন্স সিস্টেমের জুনোক্যাম ইমেজিং ইঞ্জিনিয়ার জ্যাকব শ্যাফনার জানান, ‘অ্যানিলিং প্রক্রিয়ায় সিলিকনের মতো উপাদানকে মাইক্রোস্কোপিক স্তরে পরিবর্তন করা যায়। আমরা জানতাম না যে এ প্রক্রিয়ায় ক্ষতি মেরামত হতে পারে। আমরা একটি হিটারের মাধ্যমে জুনোক্যাম ক্যামেরার তাপমাত্রা ৭৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম। এই তাপমাত্রা জুনোক্যামের জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উষ্ণ।’

অ্যানিলিং একটি তাপীয় প্রক্রিয়া যা মূলত ধাতুবিদ্যা ও পদার্থবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়। কোনো পদার্থের ভৌত ও কখনো কখনো রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করার জন্য এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। তবে পুরো সমস্যা সম্পর্কে জানা এবং পৃথিবী থেকে ৩৭ কোটি মাইল দূর থেকে ক্যামেরা মেরামত করা চ্যালেঞ্জিং ছিল।

ম্যালিন স্পেস সায়েন্স সিস্টেমের জুনোক্যামের যন্ত্র বিভাগের প্রধান মাইকেল র‍্যাভিন জানান, ‘বৃহস্পতি গ্রহে ৫৫তম বার প্রদক্ষিণের পরেই বিভিন্ন ছবিতে রেখা দেখা যায়। আমরা ছবির মান উন্নত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াকরণের চেষ্টা করলেও কিছুই কাজ করেনি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আইও চাঁদের মুখোমুখি হবে দেখে আমরা অ্যানিলিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করি।’

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মাদকাসক্ত’ ছেলেকে পিটিয়ে হত্যার পর থানায় আত্মসমর্পণ মা-বাবার
  • চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা
  • রাউজানে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত, গিয়াস কাদেরের পদ স্থগিত
  • গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ
  • রাউজানে বিএনপি নেতা গোলাম আকবরের গাড়িবহরে হামলা, আহত ২০
  • রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ–গুলি, উত্তর জেলা আহ্বায়কসহ আহত ২০
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়ালো
  • পৃথিবী থেকে ৩৭ কোটি মাইল দূরে থাকা মহাকাশযানের ক্যামেরা যেভাবে মেরামত করেছে নাসা
  • আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে