রোনালদোর অদম্য ক্ষুধা, দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে জেতালেন আল-নাসরকে
Published: 31st, July 2025 GMT
চলতি বছরের শুরুতে ৪০ পেরিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তার পা যেন বয়সকে পাত্তাই দেয় না। ফুটবল মাঠে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর উপস্থিতি মানেই উত্তেজনা, প্রত্যাশা আর গোলের গন্ধ। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। এক প্রীতি ম্যাচে ফরাসি ক্লাব তুলুজের বিপক্ষে দারুণ এক গোল করে দলকে জয় এনে দিলেন পর্তুগিজ তারকা।
অস্ট্রিয়ার আন্টার্সবার্গ-অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত এই গ্রীষ্মকালীন ম্যাচে শুরুতে পিছিয়ে পড়েছিল সৌদি ক্লাব আল-নাসর। ম্যাচের ২৫তম মিনিটে ইয়ান বোহোর গোলে এগিয়ে যায় তুলুজ। কিন্তু খেলা তখনও শেষ হয়নি। কারণ, মাঠে ছিলেন রোনালদো।
৮ মিনিট পরই পাল্টা জবাব দেন আল-নাসরের ফরোয়ার্ড ওয়েসলি। প্রতিপক্ষের রক্ষণের ফাঁক গলে তার পাস পেয়ে বল জালে জড়ান রোনালদো, দারুণ এক ওয়ান টাচ ফিনিশে। সমতায় ফেরার পর আল-নাসরের খেলায় আসে নতুন ছন্দ।
আরো পড়ুন:
মেসির জাদুতে জয়ে ফিরল ইন্টার মায়ামি, ডি পলের অভিষেকে উচ্ছ্বাস
মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়সূচি ঘোষণা
দ্বিতীয়ার্ধে একাধিকবার সুযোগ তৈরি করেন রোনালদো। একটি সুযোগ তো প্রায় নিশ্চিত গোল হয়ে যেত, যদি না জোয়াও ফেলিক্সের সঙ্গে বোঝাপড়ায় সামান্য ভুল হতো। বাঁ দিক থেকে আসা ক্রসটিতে দুজনই একসঙ্গে পা লাগাতে গিয়ে গোলটা মিস করেন।
তবে ম্যাচে তার প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। একাধিকবার দূরপাল্লার শটে তুলুজ গোলরক্ষককে ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন। শুধু গোলই নয়, তার দৌড়, পাস, আর শারীরিক ভাষা বুঝিয়ে দিচ্ছিল; তিনি থামার মতো কেউ নন।
৭৬তম মিনিটে মোহাম্মদ মারান দুর্দান্ত এক হেডে আল-নাসরের জয় নিশ্চিত করেন। নাওয়াফ বুশালের দুর্দান্ত ক্রসে ভেসে ওঠা হেডটি সোজা গোললাইনের ভেতর গিয়ে জড়ায়।
ম্যাচ শেষে রোনালদো ফেসবুকে নিজের ‘সিউ’ উদযাপনের ছবি পোস্ট করে লেখেন, “এই ক্ষুধা কখনোই শেষ হবে না। আমরা কেবল শুরু করেছি।” তার এই বার্তা যেন একধরনের হুঙ্কার, এক নতুন লড়াইয়ের ইঙ্গিত।
আল-নাসরে যোগ দেওয়ার পর বড় কোনো শিরোপা জেতা না গেলেও রোনালদো থেমে থাকেননি। গত মৌসুমে সব মিলিয়ে ৩৫টি গোল করেছেন ক্লাবটির হয়ে। এবার নতুন চুক্তি অনুযায়ী ২০২৭ সাল পর্যন্ত আল-নাসরে থাকছেন। লক্ষ্য এবার আরও বড়; ট্রফি জয় এবং ক্যারিয়ারে ১০০০ গোলের ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করা।
আল-নাসরের পরবর্তী প্রীতি ম্যাচ আগামী ১০ আগস্ট, স্পেনের পাওয়ার হর্স স্টেডিয়ামে লা লিগার ক্লাব আলমেরিয়ার বিপক্ষে। আর মৌসুমের প্রথম বড় লড়াই শুরু ১৯ আগস্ট, সৌদি সুপার কাপের সেমিফাইনালে আল-ইত্তিহাদের বিপক্ষে। সেই লড়াইয়ের আগে রোনালদোর এই বার্তা একটাই— তাকে এখনো অনেক কিছু জিততে হবে!
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ
বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানোর নামে মানব পাচারের ঝুঁকি রোধ এবং যোগ্য খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ৯ অক্টোবর এনএসসি এক চিঠিতে ফেডারেশনগুলোকে জানিয়েছে, এখন থেকে বিদেশে ক্রীড়া দল পাঠানোর আগে ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ফ্লাইটের কমপক্ষে ১০ দিন আগে জিওর (সরকারি আদেশ) জন্য প্রস্তাব পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও পারফরম্যান্স–সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রও এনএসসিকে দিতে হবে।
অভিযোগ আছে, কিছু ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অনেক বছর ধরেই দলের সঙ্গে ভুয়া খেলোয়াড়-কর্মকর্তা পাঠিয়ে আদম পাচার করে আসছে। দুই একটা ঘটনা সামনে এলেও এসবের বেশির ভাগই থেকে যায় আড়ালে। ছোট খেলাগুলো থেকেই এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসে। এনএসসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত এ ধরনের অপকর্ম ঠেকাতেই বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ফ্লাইটের অন্তত ১০ দিন আগে জিওর প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম করা হয়েছে। এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) আমিনুল এহসান সরাসরি তা না বললেও তাঁর কথায়ও সে আভাস আছে, ‘আমি বলব না শুধু আদম পাচার রোধ করতে এই নিয়ম করেছি। তবে কোথাও কোথাও এসব খেলার নামে মানব পাচারের প্রশ্ন চলে আসে।’
অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।ফারহাদ জেসমিন, সাবেক অ্যাথলেট ও বিএও অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যানএনএসসির কাছে ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন এত দিন জিওর জন্য খেলোয়াড়দের নামই শুধু পাঠাত। যাঁর নাম দেওয়া হতো, তিনি আসলেই খেলোয়াড় কি না বা খেলোয়াড় হলে তাঁর যোগ্যতা কী বা যোগ্য কাউকে বাদ দিয়ে অযোগ্য কাউকে নেওয়া হচ্ছে কি না, এসব যাচাই–বাছাই করা হতো না। এনএসসি তাই জানত না কিসের ভিত্তিতে একজন খেলোয়াড়কে দলে নির্বাচিত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে এনএসসিকে এসব দিতে হবে।
জিওর জন্য আবেদনকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগে বলে ১০ দিন আগে তালিকা চাওয়ার যুক্তি আছে। কিন্তু পারফরম্যান্স আর ফিটনেসের তথ্যপ্রমাণও পাঠানোর নিয়মটা একটু অভিনবই, যা নিয়ে অবশ্যই নানা রকম প্রশ্ন তোলা যায়। তবে জিওর জন্য ফ্লাইটের ১০ দিন আগে নাম চাওয়ার নিয়মটাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক অ্যাথলেট ফারহাদ জেসমিন লিটি বলেছেন, ‘অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।’
আরও পড়ুনবিশ্বকাপের আগে সৌদি লিগে খেলতে চেয়েছিলেন মেসি, সৌদি সরকারের ‘না’১১ ঘণ্টা আগেআদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।ক্রীড়াঙ্গনে স্বজনপ্রীতি ঠেকাতেও এ নিয়ম ভূমিকা রাখবে বলে ফারহাদ জেসমিনের আশা, ‘অনেক ফেডারেশন অনেক সময় যোগ্যতার বিচার না করে নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড় নিয়ে যায়। দেখে মনে হয়, বিদেশভ্রমণই মুখ্য, পারফরম্যান্স মুখ্য নয়।’ বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। কারণ, এনএসসির জানার অধিকার আছে, বিদেশে টুর্নামেন্টে আমরা কাদের নিয়ে যাচ্ছি।’ সম্প্রতি হকি তারকা রাসেল মাহমুদকে বয়সের অজুহাতে বাদ দেয় হকি ফেডারেশন। এ নিয়ে সমালোচনা হলে এনএসসিকে বিষয়টি তদন্তও করতে হয়।
এনএসসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট-ফুটবলসহ সব খেলাতেই বিদেশে দল পাঠানোর জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। কিন্তু আদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।
আরও পড়ুনআগে চা পরে লাঞ্চ—বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের শতবর্ষ পুরোনো এক রীতি১৫ ঘণ্টা আগেএনএসসির পরিচালক আমিনুল এহসান অবশ্য তা মনে করেন না, ‘প্রায় প্রতিদিনই এনএসসির কাছে অনেক খেলোয়াড় অভিযোগ করেন, কোনো না কোনো কর্মকর্তার অপছন্দের কারণে নাকি তিনি দল থেকে বাদ পড়েছেন। এ কারণেই খেলোয়াড় নির্বাচনের তথ্যগুলো এনএসসির জানা থাকলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে একটা উত্তর দেওয়া যায়। এটা ফেডারেশনের কাজে হস্তক্ষেপ নয়। স্বচ্ছতার স্বার্থে এনএসসি তা জানতে চাইতে পারে।’