৫ আগস্ট ঘিরে শঙ্কা, সতর্ক অবস্থানে পুলিশ ও দলগুলো
Published: 2nd, August 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের বার্ষিকী আগামী ৫ আগস্ট। এই দিনটিকে সামনে রেখে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ রাজনৈতিক মহলে সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, ৫ আগস্টকে সামনে রেখে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পতিত আওয়ামী লীগ নানাভাবে তৎপর। গত মাসে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি কনভেনশন সেন্টারে কার্যক্রম নিষিদ্ধ এই দলটির কয়েক শ নেতা-কর্মী নিয়ে প্রশিক্ষণ, কর্মশালাসহ ঢাকায় একাধিক গোপন বৈঠকের খবর রয়েছে পুলিশের কাছে। ইতিমধ্যে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মেজর পদমর্যাদার একজন সেনা কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার কথাও জানা গেছে। তাঁকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁর জন্য তদন্ত আদালতও গঠন করেছে সেনাবাহিনী।
সরকারের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কিছু গোপন তৎপরতা ও পরিকল্পনার কথা গোয়েন্দাদের নজরে এসেছে। পাশাপাশি বসুন্ধরার ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও নাশকতার পরিকল্পনার আভাস পেয়েছে। ৩ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়টাকে বেশি আশঙ্কাজনক বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছর জুলাইয়ে টানা আন্দোলনের একপর্যায়ে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শেখ হাসিনার পতনের এক দফা ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কারণে ৩ আগস্টকে গুরুত্বপূর্ণ দিবস মনে করা হচ্ছে।
আজ ৩ আগস্ট সেই শহীদ মিনারে সমাবেশ করতে যাচ্ছে সেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। একই দিন বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ করতে যাচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থান ঘিরে শেখ হাসিনা সরকারের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদরে জন্য শোক এবং বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষে এ কর্মসূচি পালন করবে ছাত্রদল।
৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালান। তাঁর সরকারের পতনের প্রথম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সরকারের বড় কর্মসূচি রয়েছে। এ কর্মসূচি ঘিরেও অঘটনে আশঙ্কা রয়েছে বলে সরকারি একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তির দিন পর্যন্ত সতর্কতার বিষয় রয়েছে। এ জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সরকার ও পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়সহ বিভিন্ন স্থানে ‘ব্লক রেইড’ বা বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। রাজধানী ১১টি প্রবেশমুখসহ নগরীর ভেতরে দুই শতাধিক তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। এ ছাড়া আবাসিক হোটেল ও মেসে অভিযান এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংস্থাগুলো।
পুলিশ সূত্র বলছে, আজ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলোও। এ সময়ে কোনো বিশৃঙ্খলা বা দলগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভক্তি থেকে আওয়ামী লীগ বড় ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা বিবেচনায় রেখেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে তিনটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা সতর্কতার পাশাপাশি যে কোনো ধরনের পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
দুই সমাবেশ ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তাএমন পরিস্থিতিতে আজ রাজধানীতে এনসিপি ও ছাত্রদলের সমাবেশ ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই দুটি সমাবেশে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা করতে না পারে, এ বিষয়ে দুই দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্ব স্ব দল থেকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র জানিয়েছে, এনসিপি ও ছাত্রদলের সমাবেশস্থলের মধ্যবর্তী স্থান টিএসসি এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হয়েছে। তল্লাশি চৌকি বসানোর পাশাপাশি আজ রোববার সকাল থেকে সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সমাবেশের ভেতরে ঢুকে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের অনুসারীদের কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি না করতে পারে, সে বিষয়ে কঠোর দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকধারী সদস্যদের সাধারণ পোশাকে সমাবেশস্থল ঘিরে অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের অনলাইনে উসকানিমূলক কার্যক্রমে নজরদারি এবং সন্দেহজনক স্থানে অভিযান বৃদ্ধির বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশনস) মো.
পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পতিত শেখ হাসিনা সরকারের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেয়াল লেখন ও পোস্টার টানানোর ঘোষণা দেন। এ সব ঘোষণার পর পুলিশ অভিযান জোরদার করেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র বলছে, ৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট হুমকি নেই। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সভা-মিছিল করার চেষ্টা করছেন। কয়েকটি জেলায় দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা গুজব ছড়াচ্ছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের যেসব স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গ্রেপ্তার হননি, তাঁরা নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন বলে তথ্য রয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিবেদনটি পুলিশের সব বিভাগকে পাঠিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে এসবি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সময়কাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির কর্মসূচিতে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।
নজরদারি বৃদ্ধি ১৩ জেলায়সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রাজধানী ও এর আশপাশের জেলাকে লক্ষ্যবস্তু করে নাশকতার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর আশপাশের ১৩টি জেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা করে অস্থিতিশীল করতে না পারে সে জন্য অভিযান চলছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকার আশপাশের জেলার নিরাপত্তা জোরদার প্রসঙ্গে ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল করিম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্টকে সামনে রেখে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দলটির নেতা-কর্মীরা যাতে সংগঠিত হতে না পারে, সে জন্য তাঁর আওতাধীন ১৩ জেলায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন৫ আগস্ট সামনে রেখে সারা দেশে পুলিশি অভিযান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি২ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত রক ষ ক র ছ ত রদল আশপ শ র ৩ আগস ট সরক র র ৫ আগস ট নজরদ র দ র কর এল ক য় আওয় ম সতর ক প রথম এনস প ন শকত
এছাড়াও পড়ুন:
সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে: আইএসপিআর
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠা সেনা কর্মকর্তাকে রাজধানীর উত্তরা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। গত ১৭ জুলাই তাঁকে আটক করা হয় বলে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর এ খবর জানিয়েছে। আইএসপিআর বলেছে, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জনৈক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা–সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে।
প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। এ ব্যাপারে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ চলছে।
ওই সেনা কর্মকর্তার কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত থাকা–সংক্রান্ত ব্যত্যয়ের বিষয়ে আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতের সুপারিশ ও সেনা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ২২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই বৈঠকে মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ ওঠে। গতকাল বৃহস্পতিবার সেনা সদরের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। আজ এ নিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত জানাল আইএসপিআর।
আরও পড়ুননিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে এক মেজর১৫ ঘণ্টা আগেএ ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। তাতে বলা হয়েছে, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কেবি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন। তাঁরা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তাঁরা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন। তাঁরা সেখানে এসব ষড়যন্ত্র করেছিলেন।