পরিবেশ সংকটের কারণ কি আধ্যাত্মিক সমস্যা
Published: 19th, August 2025 GMT
পরিবেশ সংকট আজ বিশ্বের সামনে একটি জটিল এবং জরুরি সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, পানি ও বায়ু দূষণের মতো সমস্যাগুলো আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করছে। আমরা প্রায়ই এই সংকটকে কেবল প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখি, যার সমাধান হিসেবে কার্বন নিঃসরণ কমানো, পানি সংরক্ষণ, বা বর্জ্য হ্রাসের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
কিন্তু এই সংকটের মূলে রয়েছে একটি গভীর আধ্যাত্মিক সমস্যাও রয়েছে। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশকে দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে, প্রকৃতি কেবল সম্পদ নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত ব্যবস্থা, যার প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে।
সলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশকে দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে, প্রকৃতি কেবল সম্পদ নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত ব্যবস্থা, যার প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে।আধ্যাত্মিক বিচ্ছিন্নতাপরিবেশ সংকটকে অনেকে শিল্প-বিপ্লবের ফল হিসেবে দেখেন, যখন মানুষ প্রকৃতি থেকে ব্যাপকভাবে সম্পদ আহরণ শুরু করে। কিন্তু এই সংকটের শিকড় আরও গভীরে। এটি শুরু হয়েছিল যখন মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করতে শুরু করে। প্রকৃতিকে একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য সত্তা হিসেবে দেখা হয়েছে, যা মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণের জন্য ব্যবহার করা যায়।
এই দৃষ্টিভঙ্গি বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং প্রকৌশলের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। বিজ্ঞান প্রকৃতিকে বিশ্লেষণ করতে শুরু করে, অর্থনীতি প্রকৃতি থেকে লাভের উপায় খুঁজতে থাকে, এবং প্রকৌশল প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার দিকে মনোযোগ দেয়। ফলস্বরূপ, প্রকৃতির এই বিপর্যয় এখন।
কোরআন আমাদের শেখায় যে, প্রকৃতি কেবল সম্পদ নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত ব্যবস্থা, যা আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁর মহিমার প্রকাশ। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না করলে কোনো প্রযুক্তিগত সমাধানই স্থায়ী হবে না। তাই পরিবেশ সংকট একটি আধ্যাত্মিক সমস্যাও বটে, যার সমাধান আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের মাধ্যমে সম্ভব।
আরও পড়ুনপরিবেশ–সচেতন করে তুলতে শিশুকে ইসলামি শিক্ষা০৪ আগস্ট ২০২৫প্রকৃতির প্রতি আধ্যাত্মিক দায়িত্বকোরআন প্রকৃতিকে একটি জীবন্ত, আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে উপস্থাপন করে, যা আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত এবং আমাদের দায়িত্বের অংশ। কোরআনের কয়েকটি আয়াতের আলোকে এই দৃষ্টিকোণ বোঝা যায়:
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল সকল প্রাণী এবং আকাশে উড়ন্ত পাখিরা তোমাদের মতোই সম্প্রদায়।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ৩৮)
এই আয়াত মানুষের মতোই আল্লাহর সৃষ্টি প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্বশীলতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এই সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও যত্নশীল হওয়ার বিকল্প নেই।
পৃথিবীতে বিচরণশীল সকল প্রাণী এবং আকাশে উড়ন্ত পাখিরা তোমাদের মতোই সম্প্রদায়।সুরা আনআম, আয়াত: ৩৮কোরআন বলে, ‘আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা সাফ, আয়াত: ১)
অর্থ, প্রকৃতি কেবল একটি নিষ্ক্রিয় সম্পদ নয়, বরং এটি আল্লাহর সৃষ্টি, যা তাঁর মহিমা প্রকাশ করে। তাই প্রকৃতির প্রতি আমাদের আচরণে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি, রাত ও দিনের পরিবর্তন, বিভিন্ন প্রাণী, বাতাস ও মেঘের পরিবর্তনে.
প্রকৃতি আল্লাহর সৃষ্টির একটি প্রতিফলন, যা আমাদের তাঁর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। এই নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করা বা প্রকৃতির ক্ষতি করা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করে।
ইসলামি নীতিশাস্ত্রে কেবল মানুষেরই নয়, প্রকৃতিরও অধিকার রয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি আকাশকে উঁচু করেছেন এবং ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। যাতে তোমরা ভারসাম্য লঙ্ঘন না করো।’ (সুরা রাহমান, আয়াত: ৭-৮)
এই ভারসাম্য বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব। ইসলামি আইনে পশু, পানি, এবং গাছের প্রতি সদয় আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একটি গাছ রোপণ করে এবং তা থেকে মানুষ, পশু বা পাখি উপকৃত হয়, তা তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৫৫৩)
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি আকাশ, পৃথিবী ও পাহাড়ের কাছে আমানতের দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তারা তা বহন করতে অস্বীকার করেছিল এবং ভয় পেয়েছিল; কিন্তু মানুষ তা গ্রহণ করেছে।’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৭২)
এই আয়াতে মানুষকে পৃথিবীর খলিফা বা অভিভাবক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব হল এটিকে রক্ষা করা, ধ্বংস নয়।
আরও পড়ুনজলবায়ু সংকটে কেন মুসলমানদের কর্তব্য অনেক০৩ আগস্ট ২০২৫ইসলামি আচার এবং প্রকৃতির সম্পর্কইসলামি আচার-অনুষ্ঠান প্রকৃতির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পৃথিবীকে আমার জন্য মসজিদ ও পবিত্র করা হয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৩৮)
আিম আকাশ, পৃথিবী ও পাহাড়ের কাছে আমানতের দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তারা তা বহন করতে অস্বীকার করেছিল এবং ভয় পেয়েছিল; কিন্তু মানুষ তা গ্রহণ করেছে।সুরা আহযাব, আয়াত: ৭২এছাড়া, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় সূর্যের গতিবিধির ওপর নির্ভরশীল, ওজুর জন্য পানি ব্যবহার করা হয় এবং ইসলামি ক্যালেন্ডার নির্ধারিত হয় চাঁদের পর্যায়ের ওপর ভিত্তি করে। এই আচার-অনুষ্ঠানগুলো আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে শেখায়।
পরিবেশ সংকট সমাধানের জন্য আমাদের বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং প্রকৌশলের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত প্রকৃতির অংশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বোঝা, কেবল এটিকে বিশ্লেষণ করা নয়। অর্থনীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত সকলের চাহিদা পূরণ, কেবল লাভ বৃদ্ধি নয়। প্রকৌশলের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থা তৈরি করা। কোরআনের এই শিক্ষা আমাদের পথ দেখায়। যেমন, কোরআনে বলা হয়েছে, ‘সংশোধন করার পর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৫৬)
মুসলমানদের ভূমিকামুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল প্রকৃতির প্রতি ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করা। আমাদের নিজেদের এবং সমাজকে মনে করিয়ে দিতে হবে যে, প্রকৃতি কোনো যান্ত্রিক ব্যবস্থা নয় যা কেবল ঠিক করতে হবে। আমাদের জীবনধারা, ভোগবাদ এবং প্রকৃতির প্রতি আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কিয়ামতের সময় এসে যায় এবং তোমার হাতে একটি চারা থাকে, তবে তা রোপণ করো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১২,৯৮১)
মোট কথা, পরিবেশ সংকট কেবল প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি একটি আধ্যাত্মিক সমস্যাও, এটি মেনে নিতে হবে। কোরআন আমাদের শেখায় যে, প্রকৃতি একটি জীবন্ত সম্প্রদায়, যা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করে এবং আমাদের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব বহন করে। আমাদের জীবনধারা, বিজ্ঞান এবং অর্থনীতিকে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। ইসলামি আচার-অনুষ্ঠান এবং কোরআনের শিক্ষা আমাদের এই পথ দেখায়। আমরা যদি প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করি, তবে আমরা কেবল পরিবেশই রক্ষা করব না, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জন করব।
সূত্র: দি মুসলিম ভাইব ডট কম
আরও পড়ুনপরিবেশ নিয়ে নবীজি(সা.) এর ১০ শিক্ষা১৯ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র দ য প রক ত ক ব যবস থ র জন য প রক শ জ বন ত ক রআন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ইভ্যালির রাসেল ও তাঁর স্ত্রীর আরও এক মামলায় ৩ বছর কারাদণ্ড
প্রতারণার আরও একটি মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তাঁর স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। তাঁদের পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম এ রায় দেন। রায় ঘোষণার পর রাসেল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এ নিয়ে প্রতারণার পৃথক পাঁচটি মামলায় রাসেল ও শামীমা নাসরিনের ১২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
এর আগে সর্বশেষ গত ১৪ এপ্রিল প্রতারণার একটি মামলায় রাসেল ও তাঁর স্ত্রীর তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
আজ যে মামলায় রাসেল দম্পতির সাজা হয়েছে, সেই মামলায় প্রতারণার মাধ্যমে ২৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আবুল কালাম আজাদ নামের একজন গ্রাহক।
৬ এপ্রিল ঢাকার সিএমএম আদালত প্রতারণার আরেকটি মামলায় এই দম্পতিকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া গত ২৯ জানুয়ারি প্রতারণার অভিযোগে করা আরেকটি মামলায় তাঁদের দুই বছর কারাদণ্ড দেন আদালত।
গত বছরের ২ জুন চেক প্রত্যাখ্যানের মামলায় রাসেল ও তাঁর স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন চট্টগ্রামের আদালত।
২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে রাসেল ও শামীমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দুজন জামিনে মুক্ত হন।
আরও পড়ুনইভ্যালির রাসেল ও তাঁর স্ত্রীর আরও ৩ বছর কারাদণ্ড১৩ এপ্রিল ২০২৫