রাকসু: সংগ্রামী শাহরিয়ার মোর্শেদ কাজ করতে চান সেশনজট নিয়ে
Published: 4th, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ব্যতিক্রমী প্রার্থী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মোর্শেদ খান। ৫১ বছর বয়সেও থেমে থাকেননি তিনি, উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখাপড়া। এবারের রাকসু নির্বাচনে তিনি লড়ছেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে।
রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আসন্ন রাকসু নির্বাচন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সংকট, নিজের অবস্থান ও ব্যক্তিগত লক্ষ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
আরো পড়ুন:
রাবি ছাত্রীদের নিয়ে ছাত্রদল নেতার কটূক্তির প্রতিবাদে ইবিতে মানববন
সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ হচ্ছে: রাবি উপাচার্য
রাইজিংবিডি: আপনি ৫১ বছর বয়সে রাবির শিক্ষার্থী—এটা কীভাবে সম্ভব হলো?
শাহরিয়ার: আমি ২০০২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেছিলাম। কিন্তু পারিবারিক কারণে শেষ বর্ষে গিয়ে আমাকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। এরপর প্রায় ১৮ বছর বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করেছি, চট্টগ্রাম ইপিজেডসহ নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি।
একসময় মনে হলো—স্বপ্ন তো থেমে থাকতে পারে না। তাই নতুন করে পড়াশোনা শুরু করি। ২০১৭ সালে এসএসসি, ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করি। তারপর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হই।
রাইজিংবিডি: অনেকেই ভাবেন, এত বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসা কঠিন। আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
শাহরিয়ার: সত্যি বলতে, সহজ ছিল না। তবে মানসিক শক্তি সবচেয়ে বড় বিষয়। আমি মনে করি, স্বপ্ন দেখার কোনো বয়স নেই। সহপাঠীরা আমাকে শুধু বন্ধু হিসেবেই নয়, অনুপ্রেরণা হিসেবেও দেখেন। এটা আমার জন্য বড় পাওয়া।
রাইজিংবিডি: এবার রাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?
শাহরিয়ার: আমার ব্যাক্তিগত পরিচয় ও অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে মনোনয়ন নিয়েছি। ক্যাম্পাসের মোটামুটি সবাই আমাকে চেনে। সবার পরিচিত মুখ আমি। আমার ছোটভাই, বড়ভাইসহ হলের অনেকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তাদের কথাগুলো আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
রাইজিংবিডি: পরিবারকে কি এই প্রার্থিতার কথা জানিয়েছেন?
শাহরিয়ার: না, এখনো জানাইনি। তবে সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে আজ হোক বা কাল, জেনে যাবে।
রাইজিংবিডি: আপনার চোখে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা গুলো কি কি?
শাহরিয়ার: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান যারা অধ্যয়নরত আছেন, তারা বেশিরভাগই গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা। এজন্য তারা চায়, সঠিক সময়ে পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি করতে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটের কারণে তো সেটা হয়ে ওঠে না। আমাদের এখানে ১৮ মাসে বছর হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে পড়ে। এছাড়া যদি ডাইনিং এর কথা বলি বিশ্ববিদ্যালয় খাবারের মান দিনদিন অবনতি হচ্ছে। অথচ খাবারের দাম ঊর্ধ্ব গতিতে। এছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীরা মেডিকেল থাকার পরও সেখান থেকে কোনো সুবিধা পায় না।
রাইজিংবিডি: নির্বাচন নিয়ে কতটা আশাবাদী?
শাহরিয়ার: নির্বাচনের তফসিল বারবার পরিবর্তন করার কারণে সবার মধ্যে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে, নির্বাচন হবে কি না। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন বিতরণ শেষ হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, নির্বাচন হবে বলে আমি আশাবাদী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বড় ভাই, ছোট ভাই সবাই আমাকে চেনে, আশা করি তারা আমাকে নির্বাচিত করবে।
রাইজিংবিডি: নির্বাচিত হলে কি কি কাজ করবেন?
শাহরিয়ার: আমি যদি নির্বাচিত হই, সবার প্রথমে আমি সেশনজট নিয়ে কাজ করব। এছাড়া আমাদের ডাইনিংয়ের খাবারের মান উন্নয়নের চেষ্টা করব। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের অবস্থা বেহাল। আমি চেষ্টা করব সর্বোচ্চটা দিয়ে এগুলো দ্রুত সমাধান করার। শিক্ষার্থীদের কোন কোন জায়গায় সমস্যা, সেটা উদঘাটন করে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব।
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক জ কর আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ
সম্পূরক বৃত্তি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে অনশনে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন তাঁরা।
এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়।
তিন দফা দাবির অন্যটি হলো ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি প্রদান ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু।
আজ বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে তিন দফা দাবিতে অনশন চালিয়ে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাঁদের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়।
অনশনে বসা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল মুরাদ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফেরদৌস শেখ, ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শাহীন মিয়া এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অপু মুন্সী।
অনশনকারীদের মধ্যে ফয়সাল মুরাদ ও এ কে এম রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের পেটে ব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অনশনকারী অপু মুন্সী বলেন, পারিবারিক কারণে তাঁকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। তাই গতকাল রাতে তিনি অবস্থান করতে পারেননি।
আজ অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে অনশনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
অনশনে অংশ নেওয়া শাহীন মিয়া বলেন, প্রশাসন আগের মতোই বাহানা করে যাচ্ছে। হচ্ছে, হবে এ বক্তব্য থেকে বের হতে পারেনি প্রশাসন। আর কোনো টালবাহানা তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের দাবি অবশ্যই মানতে হবে। তা না হলে প্রশাসনকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।
আরেক অনশনকারী ফয়সাল মুরাদ বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চলছে, কিন্তু প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইতিমধ্যে তিনিসহ আরও একজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অনশনকারী এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবস্থানসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু তাতে প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। তাই অনশনে যেতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এই নখদন্তহীন প্রশাসন হয়তো আমাদের দাবি মেনে নেবে, নয়তো তাদের নিজেদের রাস্তা মাপতে হবে।’
আরও পড়ুনসম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী১৯ ঘণ্টা আগেযতক্ষণ তিন দফা দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন চলবে জানিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যতক্ষণ শরীরে শেষ রক্তবিন্দু আছে ততক্ষণ তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন। ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে অনেকেই এসে সংহতি প্রকাশ করছেন। সকাল থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে গতকাল রাতে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম ডিসেম্বরের মধ্যে জকসু নির্বাচন আয়োজনের এবং জানুয়ারি মাস থেকে সম্পূরক বৃত্তি দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তবে সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া ও প্রশাসন থেকে লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে উপাচার্যকে জানিয়েছেন অনশনকারী শিক্ষার্থীরা।