চায়ের দোকান থেকে বলিউডে, ওম পুরির গল্পটা সিনেমার মতোই
Published: 18th, October 2025 GMT
শৈশবে চায়ের দোকানে থালাবাসন ধুতেন, স্বপ্ন ছিল ট্রেনচালক হওয়ার। কিন্তু ভাগ্য লিখে রেখেছিল অন্য গল্প—একদিন তিনি হয়ে উঠবেন ভারতের অন্যতম অভিনেতা, যিনি বলিউড ও হলিউড দুই জায়গাতেই সমান সাফল্য পাবেন। তিনি ওম পুরি। আজ ১৮ অক্টোবর তাঁর জন্মদিন। ওম পুরির জীবনসংগ্রাম, অধ্যবসায় আর সাফল্যের প্রেরণামূলক কাহিনি আজও মানুষকে নাড়া দেয়।
আমার জন্য প্রকৃত শক্তিশালী সিনেমা ছিল ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে, যখন শ্যাম বেনেগাল, গোবিন্দ নিহালানি, বাসু চ্যাটার্জি, মৃণাল সেন ও গুলজার অসাধারণ সিনেমা করেছেন।ওম পুরিশৈশবের দারিদ্র্য ও কঠিন দিনগুলো
১৯৫০ সালের ১৮ অক্টোবর পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় জন্ম ওম পুরির। তবে তাঁর পরিবার সঠিক জন্মতারিখ জানত না। মা বলতেন, তিনি জন্মেছিলেন দশেরা উৎসবের দিনে। তাই ওম পুরি নিজেই ঠিক করেন, ১৮ অক্টোবরই হবে তাঁর জন্মদিন। ছয় বছর বয়সে পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচাতে শুরু করেন কাজ। চায়ের দোকানে থালা ধোয়া থেকে শুরু করে নানা ছোটখাটো কাজ করতেন তিনি। এমনকি তাঁর বাবা একসময় চুরির অভিযোগে জেলে যান, তখন সংসারের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায় ছোট্ট ওমের কাঁধে।
ট্রেনচালকের স্বপ্ন থেকে অভিনেতা হওয়ার যাত্রা
শৈশবে ওম পুরির ভীষণ পছন্দ ছিল ট্রেন। কখনো কখনো ট্রেনের ভেতরেই রাত কাটাতেন তিনি। বড় হয়ে ট্রেনচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু ভাগ্য তাঁকে নিয়ে যায় অভিনয়ের জগতে। নিজেকে গড়ার লক্ষ্যে ভর্তি হন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি)-তে। সেখানেই তৈরি হয় তাঁর অভিনয়ের ভিত। পরবর্তী সময়ে তিনি ভারত ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক দর্শকদের মন জয় করেন অসাধারণ অভিনয়ে।
যদি ওম পুরির দুটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র নির্বাচন করতে হয়, তাহলে হয়তো ‘আক্রোশ’ এবং ‘অর্ধ সত্য’-এর কথা আসবে। এই দুটি সিনেমায় তাঁর অভিনয়ের বিশাল পরিসর তাঁকে শুধুমাত্র হিন্দি চলচ্চিত্রের অভিনেতা হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেনি, ভারতীয় সিনেমার নবতরঙ্গ ধারাকেও দৃঢ় করেছে।
‘আক্রোশ’ দিয়ে পরিচিতি, সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে
ওম পুরির চলচ্চিত্রজীবন শুরু হয় মারাঠি ছবি ‘ঘাসিরাম কোটওয়াল’ দিয়ে। তবে বলিউডে তাঁর বড় সাফল্য আসে ১৯৮০ সালের ‘আক্রোশ’ ছবিতে। সমাজের বাস্তবতাকে নতুনভাবে দেখানো এই ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের সমানভাবে মুগ্ধ করে। ছবির জন্য তিনি পান ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্র অভিনেতার পুরস্কার। এরপর তিনি উপহার দেন একের পর এক স্মরণীয় ছবি—‘আরোহণ’, ‘অর্ধ সত্য’, ‘জানে ভি দো ইয়ারোঁ’, ‘চাচি ৪২০’, ‘হেরা ফেরি’, ‘মালামাল উইকলি’—প্রতিটি চরিত্রেই যেন নতুনভাবে জন্ম নেন তিনি।
হলিউডে ওম পুরির জয়যাত্রা
ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে ওম পুরি নিজের প্রতিভার ছাপ রাখেন হলিউডেও। অভিনয় করেন ‘সিটি অব জয়’, ‘উলফ’, ‘দ্য ঘোস্ট অ্যান্ড দ্য ডার্কনেস’-এর মতো ছবিতে। চরিত্র বড় হোক বা ছোট, তাঁর উপস্থিতি সব সময়ই ছিল তীক্ষ্ণ, জীবন্ত। তাঁর অভিনয়ের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল চরিত্রকে বাস্তবের মতো করে তুলে ধরা।
জীবন দর্শন
মৃত্যুর কিছুদিন আগে ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার একজন অভিনেতা হিসেবে অবদান তখনই স্পষ্ট হবে যখন আমি এই পৃথিবী ছেড়ে যাব এবং বিশেষত চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীরা আমার সিনেমা দেখবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র স ফল য চর ত র
এছাড়াও পড়ুন:
চায়ের দোকান থেকে বলিউডে, ওম পুরির গল্পটা সিনেমার মতোই
শৈশবে চায়ের দোকানে থালাবাসন ধুতেন, স্বপ্ন ছিল ট্রেনচালক হওয়ার। কিন্তু ভাগ্য লিখে রেখেছিল অন্য গল্প—একদিন তিনি হয়ে উঠবেন ভারতের অন্যতম অভিনেতা, যিনি বলিউড ও হলিউড দুই জায়গাতেই সমান সাফল্য পাবেন। তিনি ওম পুরি। আজ ১৮ অক্টোবর তাঁর জন্মদিন। ওম পুরির জীবনসংগ্রাম, অধ্যবসায় আর সাফল্যের প্রেরণামূলক কাহিনি আজও মানুষকে নাড়া দেয়।
আমার জন্য প্রকৃত শক্তিশালী সিনেমা ছিল ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে, যখন শ্যাম বেনেগাল, গোবিন্দ নিহালানি, বাসু চ্যাটার্জি, মৃণাল সেন ও গুলজার অসাধারণ সিনেমা করেছেন।ওম পুরিশৈশবের দারিদ্র্য ও কঠিন দিনগুলো
১৯৫০ সালের ১৮ অক্টোবর পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় জন্ম ওম পুরির। তবে তাঁর পরিবার সঠিক জন্মতারিখ জানত না। মা বলতেন, তিনি জন্মেছিলেন দশেরা উৎসবের দিনে। তাই ওম পুরি নিজেই ঠিক করেন, ১৮ অক্টোবরই হবে তাঁর জন্মদিন। ছয় বছর বয়সে পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচাতে শুরু করেন কাজ। চায়ের দোকানে থালা ধোয়া থেকে শুরু করে নানা ছোটখাটো কাজ করতেন তিনি। এমনকি তাঁর বাবা একসময় চুরির অভিযোগে জেলে যান, তখন সংসারের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায় ছোট্ট ওমের কাঁধে।
ট্রেনচালকের স্বপ্ন থেকে অভিনেতা হওয়ার যাত্রা
শৈশবে ওম পুরির ভীষণ পছন্দ ছিল ট্রেন। কখনো কখনো ট্রেনের ভেতরেই রাত কাটাতেন তিনি। বড় হয়ে ট্রেনচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু ভাগ্য তাঁকে নিয়ে যায় অভিনয়ের জগতে। নিজেকে গড়ার লক্ষ্যে ভর্তি হন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি)-তে। সেখানেই তৈরি হয় তাঁর অভিনয়ের ভিত। পরবর্তী সময়ে তিনি ভারত ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক দর্শকদের মন জয় করেন অসাধারণ অভিনয়ে।
যদি ওম পুরির দুটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র নির্বাচন করতে হয়, তাহলে হয়তো ‘আক্রোশ’ এবং ‘অর্ধ সত্য’-এর কথা আসবে। এই দুটি সিনেমায় তাঁর অভিনয়ের বিশাল পরিসর তাঁকে শুধুমাত্র হিন্দি চলচ্চিত্রের অভিনেতা হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেনি, ভারতীয় সিনেমার নবতরঙ্গ ধারাকেও দৃঢ় করেছে।
‘আক্রোশ’ দিয়ে পরিচিতি, সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে
ওম পুরির চলচ্চিত্রজীবন শুরু হয় মারাঠি ছবি ‘ঘাসিরাম কোটওয়াল’ দিয়ে। তবে বলিউডে তাঁর বড় সাফল্য আসে ১৯৮০ সালের ‘আক্রোশ’ ছবিতে। সমাজের বাস্তবতাকে নতুনভাবে দেখানো এই ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের সমানভাবে মুগ্ধ করে। ছবির জন্য তিনি পান ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্র অভিনেতার পুরস্কার। এরপর তিনি উপহার দেন একের পর এক স্মরণীয় ছবি—‘আরোহণ’, ‘অর্ধ সত্য’, ‘জানে ভি দো ইয়ারোঁ’, ‘চাচি ৪২০’, ‘হেরা ফেরি’, ‘মালামাল উইকলি’—প্রতিটি চরিত্রেই যেন নতুনভাবে জন্ম নেন তিনি।
হলিউডে ওম পুরির জয়যাত্রা
ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে ওম পুরি নিজের প্রতিভার ছাপ রাখেন হলিউডেও। অভিনয় করেন ‘সিটি অব জয়’, ‘উলফ’, ‘দ্য ঘোস্ট অ্যান্ড দ্য ডার্কনেস’-এর মতো ছবিতে। চরিত্র বড় হোক বা ছোট, তাঁর উপস্থিতি সব সময়ই ছিল তীক্ষ্ণ, জীবন্ত। তাঁর অভিনয়ের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল চরিত্রকে বাস্তবের মতো করে তুলে ধরা।
জীবন দর্শন
মৃত্যুর কিছুদিন আগে ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার একজন অভিনেতা হিসেবে অবদান তখনই স্পষ্ট হবে যখন আমি এই পৃথিবী ছেড়ে যাব এবং বিশেষত চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীরা আমার সিনেমা দেখবে।’