বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে এসে ব্যস্ত ছিলেন দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটারদের বিদ্রোহ থেকে নিবৃত করতে। তিনি সাময়িকভাবে সফলও হয়েছেন। টাকা পাওয়ার আশ্বাসে গতকাল এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুশীলনও করেছেন ক্রিকেটাররা। যদিও তারা বুঝতে পারছিলেন, কোনো কিছুই প্রতিশ্রুতি মতো হওয়ার নয়। কারণ ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের এমডি শফিক রহমান লাপাত্তা ছিলেন। ক্রিকেটারদের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন তিনি। অথচ বুধবার সন্ধ্যার সভায় বিসিবি সভাপতি ফারুক রাজশাহীর ক্রিকেটারদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নগদ ২৫ শতাংশ টাকা দেওয়া হবে। চেক দেওয়া হবে আরও ২৫ শতাংশের। যে চেক ১৯ জানুয়ারি নগদায়ন করা যাবে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ২৫ শতাংশ নগদ অর্থ প্রদান করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। ফলে আজ ম্যাচ খেলতে নামছেন বিজয়রা। তবে খেলায় মন নেই কারোরই!
গতকাল দিনভর রাজশাহীর ক্রিকেটাররা শান্ত ছিলেন মূলত বিসিবি সভাপতি ফারুকের সম্মানে। কিন্তু বোর্ড সভাপতি সমাধান দিতে না পারলে ম্যাচ বয়কটের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশঙ্কা ছিল । এই সংকট থেকে পুরোপুরি উত্তরণ না হলে রাজশাহীর মালিকানা বিসিবি নিজেদের হাতে নিতে পারে বলে শোনা গেছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে মেসেজে জানতে চাওয়া হয়েছিল মালিকানা বিসিবি নিচ্ছে কিনা। তিনি উত্তরে লিখেছেন– ‘এখনও বলার সময় হয়নি।’ ফাহিমের কথায় একটা বার্তা রয়েছে, ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ এগিয়ে না এলে বিসিবি দেখবে। রাজশাহী দলের এমনটা হওয়ারই কথা ছিল। সপ্তম ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে তারা বিপিএলে এসেছে বিসিবি সভাপতির অনুরোধে। শেষমেশ খেলোয়াড়দের টাকা পরিশোধের দায়িত্ব বোর্ডকেই নিতে হতে পারে। যদিও রাত পৌনে ৯টায় দুর্বার রাজশাহীর মালিক শফিক রহমানকে টিম হোটেল রেডিসনে দেখা গেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী একজন।
শেষ পর্যন্ত টাকা পেলেও মন খুলে খেলতে পারবেন না রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। অধিনায়ক বিজয় বলেন, ‘এভাবে খেলা যায় না। টাকা কখন পাব, সে নিশ্চয়তা নেই। ধরে নিলাম আজ (গতকাল) ৫০ শতাংশ টাকা দেবে। বাকি ৫০ শতাংশের কী হবে? টাকার চিন্তা করব না খেলব, বুঝতে পারছি না। আমি তো সিলেট থেকে ঢাকা ফিরে গিয়েছিলাম। সভাপতি স্যার বলাতে এখানে এসেছি।’ বিপিএলের অর্ধেক ম্যাচ হয়ে গেলেও বেশির ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি ২৫ শতাংশের বেশি পরিশোধ করেনি। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঢাকা ক্যাপিটাল। টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, ৮ ম্যাচে একটি জিতলেও প্রথম কিস্তির ৫০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ম্যাচ জিততে না পারলেও টাকা পেয়ে খুশি ক্রিকেটাররা। ফরচুন বরিশাল ও রংপুর রাইডার্সের সম্মানী নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন না ক্রিকেটাররা। কারণ ফরচুন সুজ ও বসুন্ধরা গ্রুপের টাকা দেওয়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে। খুলনা টাইগার্সও ক্রিকেটারদের টাকা দেয়। তবে এবার এখন পর্যন্ত এই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোও ২৫ শতাংশে আটকে আছে। অথচ বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নিয়ে বলেছিলেন, তারুণ্যের উৎসব একাদশ বিপিএলকে ভিন্নভাবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা হবে। কে জানত, এই তুলে ধরা নেতিবাচক হবে! মূলত ব্যাংক গ্যারান্টি না থাকায় টাকা পাওয়া নিয়ে এত অনিশ্চয়তা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।