পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেছেন, আগামী পয়লা বৈশাখে স্থানীয় নামসহ নদ-নদীর একটি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

ঢাকায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) আয়োজিত 'নদ-নদী ও পানির ব্যবস্থাপনা' শীর্ষক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ১১০০ এর কিছু বেশি নদ-নদীর খসড়া তালিকা পেয়েছি। আরো যাচাই-বাছাই এর কার্যক্রম চলছে। আমরা ৬৪ জেলায় খাল, নদ-নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দেব, যাতে কেউ আগামীতে খাল, নদ-নদী আর দখল করতে না পারে।” 

অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, “যশোরের ভবদহের  সমস্যাটা খুবই জটিল হয়ে গেছে, এতটা বছর এটা কোনোভাবেই এড্রেস করা হয়নি। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ড সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা-৯টা  পর্যন্ত পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করছে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি সরাতে। ভবদহ এলাকায় স্লুইসগেটের ভেতরে উচ্চতা নিচু আবার স্লুইসগেটের বাইরে নদী ভরাট হয়ে গেছে অর্থাৎ উঁচু হয়ে গেছে। যার ফলে স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হলে পানি বের না হয়ে উল্টো ভেতরে ঢুকে পড়ে। ভবদহর সমস্যা সমাধান করতে হলে আমাদেরকে আমডাঙ্গা খাল আরো গভীর ও প্রশস্ত করে খনন করতে হবে।  সেখানে পুনর্বাসনের বিষয়ে আছে। কিছু মানুষকে অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে। এগুলো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।”

ভবদহের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে তিনি বলেন, “এবারের সমস্যা ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ৮০ ভাগ জায়গা থেকে আমরা পানি অপসারণ করতে সক্ষম হবো এবং এ ৮০ ভাগ জায়গায় মানুষ চাষাবাদ করতে পারবে।”

উপদেষ্টা আরও বলেন, “ঢাকার চার পাশের চারটি নদী এবং দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্তকরণের দিকে যাচ্ছে।”  

“করোতোয়া নদীর প্রভাবশালী দখলদার যিনি, তিনি নিজে এখন রাজি হয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে মিলে তিনি তার দখল সেখান থেকে তুলে নেবেন। এ কাজটা আমরা সহসাই করে ফেলতে পারবো” বলেন তিনি। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণে ফিজিবিলিটি স্টাডি এপ্রিলে শেষ হবে। বৃষ্টির সিজনের স্টাডি হয়েছে, এখন শীতের সিজনের স্টাডি শেষে অর্থের সংস্থান করে আশা করি এ কাজের উদ্বোধন করতে পারবো।”

তিনি বলেন, “নোয়াখালীতে মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় ওইখানে রাতারাতি চর জেগে ওঠে। ফলে নদী ভাঙ্গন হচ্ছিল। ১৫ দিনের মধ্যে ওখানে ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করে দেওয়ায় ওই এলাকায় মানুষের বাড়ি-ঘরগুলো ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে।”

নদ-নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিশেষ সম্মেলনে বাপা'র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড.

এম শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) এর বৈশ্বিক সমন্বকারী এবং বাপা'র সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সারা দেশে পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা/এএএম/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট পর ব শ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

এ যেন এক অন্তহীন দুর্ভোগ

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার বিষয়টি অনেক বছর ধরে প্রথম আলোর নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসছে। এ নিয়ে অনেকবার সম্পাদকীয়ও করা হয়েছে। রাষ্ট্র ও সরকারের নীতিনির্ধারণে পরিকল্পনাহীনতা ও সমন্বহীনতার অন্যতম দৃষ্টান্ত হতে পারে ভবদহের সংকট। টানা বৃষ্টির ফলে ভবদহের ৩০টি গ্রাম আবারও তলিয়ে গিয়ে চরম জলাবদ্ধতা তৈরি করেছে। দুর্ভোগ থেকে এ অঞ্চলের মানুষের কি মুক্তি মিলবে না কোনো দিন?

প্রতিবছর বর্ষা এলেই ভবদহ অঞ্চলের মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। আর এবার তো জুলাই মাসের ২৭ তারিখেই বৃষ্টির পরিমাণ ৫১৪ মিলিমিটারে পৌঁছেছে, যা গত জুনের গড় বৃষ্টিকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফলস্বরূপ, ৫২টি বিল প্লাবিত হয়ে সেই পানি উপচে পড়ছে আশপাশের গ্রামে। বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি ধর্মীয় স্থাপনাও রক্ষা পাচ্ছে না।

এ দুর্ভোগের মূল কারণ কী? ভবদহ অঞ্চলের পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা মূলত মুক্তেশ্বরী, টেকা, হরি ও শ্রী নদীর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বছরের পর বছর ধরে পলি জমে এ নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে পানি ধারণ ও নিষ্কাশনক্ষমতা কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালির অভিযোগ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটের মাত্র ছয়টি গেট খোলা রাখা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, টিআরএম (জোয়ারাধার) চালু না করলে এ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই।

তবে আশার আলো বলতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছে। আগামী আগস্ট মাস থেকে প্রায় ৮১ কিলোমিটার নদী খননের কাজ শুরু করবে সেনাবাহিনী। এ ছাড়া আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে ৪৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানিয়েছেন, জোয়ারের সময় স্লুইসগেটের বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে বের করা হচ্ছে এবং ভাটার সময় গেটগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে।

নদী খনন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। আমডাঙ্গা খালের সংস্কারকাজও দ্রুত শুরু হওয়া জরুরি। কিন্তু এ মুহূর্তে যে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন, তাঁদের তাৎক্ষণিক স্বস্তির জন্য কী করা হচ্ছে? ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটের সব গেট খুলে দেওয়ার দাবি কেন পূরণ হচ্ছে না? টিআরএম চালুর বিষয়টি কেন এখনো উপেক্ষিত?

ভবদহের এ সংকটের বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সবাই ভালোভাবেই অবগত। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সবাই সে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ অঞ্চল নিয়ে নানা সময়ে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই এ অঞ্চলের সংকট নিরসন হয় না। ভবদহের কান্না কবে ফুরাবে, এটিই শুধু আমাদের প্রশ্ন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চায়না ডেলিগেশন টিমের যশোরের ভবদহ পরিদর্শন
  • এ যেন এক অন্তহীন দুর্ভোগ