দেশের ভলিবল মানেই আশিকুর রহমান মিকু। ফেডারেশনের সভাপতি পরিবর্তন হলেও গত দুই যুগ সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারটি ঠিকই নিজের দখলে রেখেছিলেন তিনি। খেলোয়াড়দের জন্য বরাদ্দ অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, দলীয়করণ ও সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ আছে মিকুর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদ, যাকে অনেকে ফোরাম হিসেবে চেনেন, সেই ফোরামের নেতা থাকার সময় মিকুর বিরুদ্ধে ক্রীড়াঙ্গনে খবরদারিত্ব করার অভিযোগও ছিল। আলোচনা-সমালোচনা থাকা সেই মিকুর ভলিবলে ২৪ বছরের রাজত্বের অবসান ঘটেছে।
গতকাল আরও সাতটি ক্রীড়া ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সেখানে বেশ কিছু পুরোনো মুখের সঙ্গে আছে নতুনত্ব। তার মধ্যে ভলিবলে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মিকুকে সরিয়ে সেই চেয়ারে বসানো হয়েছে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বিমল ঘোষ ভুলুকে। প্রায় ১৩ বছর পর বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হয়ে ফিরেছেন মাহবুবুর রহমান শাহীন।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্যান্য বিভাগের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরিয়ে দেয় ৪২ ফেডারেশনের সভাপতিকে। ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের জন্য এর পর গঠন করা হয় সার্চ কমিটি। সেই কমিটির দেওয়া খসড়া তালিকা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে গত বছরের ১৪ নভেম্বর ৯টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সেই ফেডারেশনগুলোতে সংগঠক, সাবেক খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ছাত্র প্রতিনিধিও ছিলেন।
মঙ্গলবার ঘোষিত ভলিবল, ফেন্সিং, সুইমিং, শরীর গঠন, টেবিল টেনিস, কারাতে ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটিতে কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সার্চ কমিটির আহ্বায়ক জোবায়দুর রহমান রানা সমকালকে বলেন, ‘সার্চ কমিটি থেকে আমরা ছাত্র প্রতিনিধির নাম দিই না। মূলত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে ছাত্র প্রতিনিধির নাম দেওয়া হয়।’ নতুন করে যে সাতটি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ঘোষিত হয়েছে, সবাই কি আপনাদের দেওয়া নাম কিনা? এই প্রশ্নের উত্তরে রানা বলেন, ‘আমরা একটা খসড়া তালিকা করে তাদের কাছে পাঠাই। তাদের কাছেও কিছু নাম থাকে। পরিবর্তন তো হবেই।’
সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৬টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ঘোষিত হলো। জানা গেছে, এই ৭টির সঙ্গে আরও ১৩টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছে সার্চ কমিটি। বাকিগুলো কয়েক দিনের মধ্যে ঘোষিত হওয়ার কথা। আর সার্চ কমিটি চাচ্ছে আগামী সপ্তাহে সব ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির জন্য একটা খসড়া তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিতে। আরও অনেক প্রস্তাব আছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমাদের মধ্য থেকে শেষ করে দিতে চাচ্ছি।
এক নজরে সাত ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি
শরীর গঠন
সভাপতি : মো.
ভারোত্তোলন
সভাপতি: মহিউদ্দিন আহমেদ (অব.), সাধারণ সম্পাদক : লে. কর্নেল মো. শহিদুল আসলাম চৌধুরী
ভলিবল
সভাপতি : ফারুক হাসান, সাধারণ সম্পাদক : বিমল ঘোষ ভুলু
সুইমিং
সভাপতি: এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক : মো. মাহবুবুর রহমান শাহীন
ফেন্সিং
সভাপতি : কামরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক : বসুনিয়া এম আশিকুল ইসলাম
টেবিল টেনিস
সভাপতি : এম এইচ জামান, সাধারণ সম্পাদক : এ এম মাকসুদ আহমেদ (বিমান)
কারাতে
সভাপতি : সাহজাদা আলম, সাধারণ সম্পাদক : মোয়াজ্জেম হোসেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র চ কম ট র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।