Prothomalo:
2025-10-03@07:08:16 GMT

অরুণ আলোয় শরৎ এল 

Published: 16th, August 2025 GMT

প্রকৃতির যাত্রা আটকে রাখা যায় না। সেই চিরন্তন নিয়মের পথ ধরে বাংলার ঋতুচক্রে আবার এল শরৎ। আজ ভাদ্রের প্রথম দিন। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি/ ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি।’ রূপের রানি শরতের আগমন মানেই আকাশে সাদা মেঘ আর স্তিমিত হয়ে আসা রোদের গল্প।

শরতের প্রকৃতি আসলে কেমন? অনেকেই আছেন, যাঁরা শরৎকে আলাদা করে খুঁজে পান না। তাঁদের কাছে শরৎ অদেখা ঋতু। অনুভূতিপ্রবণ প্রকৃতিসখা মানুষের কাছেও কি তাই! হয়তো নয়। আসলে বাংলার প্রকৃতি যেন নিজেই সাজিয়ে তোলে শরৎকালকে।

শরতের সকালগুলো আলাদা এক স্বাদ নিয়ে আসে—ভোরের শিশিরে ভেজা ঘাস, বাতাসে শিউলির টাটকা সুবাস আর ঘরের আঙিনায় পাতাঝরা নীরবতা। নুয়ে পড়া ধানের শিষ যেন কৃষকের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়।

শিউলি প্রধানত শরতের ফুল। পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক ত

এছাড়াও পড়ুন:

দশেরা ও বিজয়া দশমীর সৌন্দর্য ও আনন্দ

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একটা প্রবাদ আছে, ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’। এমন কিছু পার্বণ বা উৎসব আছে, যা সনাতন ধর্মাবলম্বী সব ভাষার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আবার কিছু পার্বণের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না, যেমন দুর্গাপূজা।

বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যেভাবে এই উৎসবে মেতে ওঠেন, সেখানে মারাঠি বা গুজরাটি কিংবা তামিল বা মালয়ালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কিন্তু দুর্গাপূজার ব‍্যাপারে কোনো রকম আগ্রহ দেখা যায় না।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজার শেষ দিনে বাঙালিদের মধ‍্যে বিজয়া দশমী যখন উদ্‌যাপন করা হয়, তখন বাঙালি ছাড়া অন‍্য সব ভাষার হিন্দুরা মহা ধুমধামে উদ্‌যাপন করেন দশেরা উৎসব।

রাবণের সীতাহরণের কারণে রামচন্দ্র শরৎকালে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কিন্তু লঙ্কাপতি রাবণ ছিলেন পরাক্রমশালী। তাঁকে সহজে পরাস্ত করা সম্ভব নয়, রামচন্দ্র জানতেন। তাহলে উপায়?

দশেরা বারো মাসের এমন একটি পার্বণ। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে জানা যায়, রাবণের সীতাহরণের কারণে রামচন্দ্র শরৎকালে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কিন্তু লঙ্কাপতি রাবণ ছিলেন পরাক্রমশালী। তাঁকে সহজে পরাস্ত করা সম্ভব নয়, রামচন্দ্র জানতেন। তাহলে উপায়?

যুদ্ধে লঙ্কেশ্বরকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে তিনি দেবী দুর্গাকে পূজার মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে সচেষ্ট হন। তারপর রাবণ বধের বর প্রার্থনা করেন। এই সময়ে পূজার উদ্দেশ্যে রামের আনা ১০৮টি নীলপদ্ম থেকে দুর্গা রামের ভক্তি পরীক্ষা করার জন‍্য একটি পদ্ম মায়াবলে সরিয়ে রাখেন।

রাম সেই একটি নীলপদ্মের পরিবর্তে নিজের চক্ষুকে অর্ঘ‍্য হিসেবে দুর্গাকে দান করতে ধনুকের তূণ থেকে তির তুলতে প্রস্তুত হলে দেবী যারপরনাই খুশি হয়ে রামকে চক্ষুদান থেকে বিরত করেন। রামচন্দ্রের পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে দুর্গা তাঁকে আশীর্বাদ করেন। শুধু আশীর্বাদ নয়, কৌশলও দান করেন।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা: কবে কোন পূজা০৮ অক্টোবর ২০২৪

আসলে রাবণের পরাক্রমের পেছনে দেবী দুর্গার বর ছিল। কারণ, বসন্তকালের চৈত্র মাসে রাবণ দুর্গাকে পূজা করে সন্তুষ্ট করেন এবং দেবী তাঁকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন, এবং একটি শর্ত আরোপ করেন, যদি শ্রীশ্রীচণ্ডীর পূজামন্ত্রে কোনো ত্রুটি রাবণ কখনো করেন তবে দেবী তাঁকে ত‍্যাগ করবেন।

ব্রহ্মা শর্তের এই সংবাদ জানতেন এবং রামকে রাবণ বধের জন‍্য দুর্গার আরাধনা করতে পরামর্শ দেন। চণ্ডীপাঠে রাবণের ভুল করার প্রয়োজন, তা না হলে তাঁকে বধ করা সম্ভবপর নয়। এদিকে রামের পূজার কথা জেনে রাবণ ভয় পান। তিনি চণ্ডীপাঠে বসেন।

শরৎকালের দুর্গাপূজার দশমী তিথিতে অশুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে দশ মাথার রাবণের বিশাল কুশপুত্তলিকা দাহ করার চল দেখা যায়। এই উৎসবের নাম দশেরা।

তখন রামের নির্দেশে হনুমান মাছির রূপ ধরে শ্রীশ্রীচণ্ডীর একটি অক্ষরের ওপর গিয়ে বসলে ঢাকা পড়ে একটি অক্ষর। ফলস্বরূপ মন্ত্র ভুল পড়েন রাবণ এবং তাতে চণ্ডী অশুদ্ধ হয়ে যায়। পরে দেবীপক্ষের দশমী তিথিতে রামচন্দ্র লঙ্কার রাজা রাবণকে বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন।

এই কারণে শরৎকালের দুর্গাপূজার দশমী তিথিতে অশুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে দশ মাথার রাবণের বিশাল কুশপুত্তলিকা দাহ করার চল দেখা যায়। এই উৎসবের নাম দশেরা। সমাজবিজ্ঞানীরা নারী হরণকারী রাবণকে দাহ করার মধ‍্যে দিয়ে নারীর প্রতি অপমানের শোধ তোলার এক প্রতীকী উৎসবরূপে দশেরাকে চিহ্নিত করে থাকেন।

আরও পড়ুনমহালয়া: পূর্বপুরুষদের স্মরণ ও শ্রদ্ধার তিথি২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এদিকে দশমী তিথিতে দুর্গা প্রতিমার বিসর্জনের মধ‍্যে দিয়ে বিজয়া দশমী উদ্‌যাপণ করা হয় বাংলায়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর লেখায় ‘বিজয়া দশমী’র কথা উল্লেখ আছে।

তিনি ১৩২৩ বঙ্গাব্দের জ‍্যৈষ্ঠ মাসের নারায়ণ পত্রিকায় লিখেছেন, ‘প্রতিমা দালান হইতে উঠানে নামিয়াছেন। আজ পুরোহিত নাই। পুরুষেরা উঠোন ঘিরিয়া দাঁড়াইয়া আছেন। গিন্নি নূতন কাপড় পরিয়া, বরণডালা মাথায় উপস্থিত হইলেন। সঙ্গে মেয়ে, বৌ, বাড়ির আর-আর মেয়েছেলে। সকলে আসিয়া মাকে নমস্কার করিলেন। অধিবাসের যত জিনিস ছিল, গিন্নি সবগুলোই এক-এক করিয়া মায়ের মাথায় ছোঁয়াইয়া বরণডালায় রাখিতেছেন, এক-একবার ছোঁয়াইতেছেন আর তাঁহার চোখ ফাটিয়া জল পড়িতেছে। ক্রমে সব মেয়েদেরই চোখে জল আসিল। পুরুষেরাও আর থাকিতে পারিলেন না, কাঁদিয়া ফেলিলেন।’

দেবী দুর্গার প্রতিমাকে মেয়েরা সাতবার প্রদক্ষিণ করেন। প্রণাম সেরে তাঁরা দেবীর মুখে ও হাতে মিষ্টান্ন দেন। গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিকসহ অসুরের মুখে মিষ্টি দেন।

সেকালের কোনো বনেদি বাড়ির ঠাকুর দালানের বিজয়া দশমীর নিপুণ ছবি উঠে এসেছে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর এই লেখায়। এরপর বরণ শুরু হয় মণ্ডপে মণ্ডপে। দেবী দুর্গার প্রতিমাকে মেয়েরা সাতবার প্রদক্ষিণ করেন। প্রণাম সেরে তাঁরা দেবীর মুখে ও হাতে মিষ্টান্ন দেন। গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিকসহ অসুরের মুখে মিষ্টি দেন। শুরু হয় বিসর্জনের বাজনা।

প্রতিমা বিসর্জনের পর কনিষ্ঠরা বয়োজ‍্যেষ্ঠদের প্রণাম করে থাকে। শুভ বিজয়া বলে একে অপরের মঙ্গল কামনা করে থাকে সবাই। এভাবে দুর্গাপূজার শেষ পর্বটি সম্পন্ন হয়।


দীপান্বিতা দে: শিশুতোষ গ্রন্থপ্রণেতা ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুনজীবের দুর্গতি নাশ করেন দুর্গা২৪ অক্টোবর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দশেরা ও বিজয়া দশমীর সৌন্দর্য ও আনন্দ