৪ ধরনের অপরাধ বেশি, চ্যালেঞ্জ ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ
Published: 16th, August 2025 GMT
খুন, ডাকাতি, অপহরণ এবং ধর্ষণ—গত এক বছরে এই চার ধরনের অপরাধের মামলা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। এর মধ্যে পুরোনো খুনের অনেকগুলো ঘটনায় গত ১২ মাসে মামলা হয়েছে। তবে গত এক বছরে ছিনতাই ও দস্যুতা, চুরি ও চোরাচালানের মামলা আগের বছরের তুলনায় কমেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের আট ধরনের অপরাধের ঘটনায় হওয়া মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জুলাইয়ের এই মামলাগুলো থেকে অপরাধ পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেকটা ধারণা পাওয়া যায়। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় গত বছরের শুরুর দিকে অনেক ঘটনায় মামলা হয়নি। তাই কোনো কোনো অপরাধের ঘটনা পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি হবে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকেরা।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে অপরাধের যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে, এর বাইরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হিসেবে সামনে এসেছে মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ) তৈরি করে সহিংসতা। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদের নামে মব তৈরি করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা, লুট, কাউকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি, মামলা ও গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের ঘটনাও ঘটেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর অপরাধভিত্তিক শ্রেণি আলাদা করে মামলার তথ্য সংরক্ষণ করে। তবে মব তৈরি করে অপরাধে জড়ানোর হিসাব আলাদাভাবে রাখে না পুলিশ। এ কারণে গত এক বছরে মব তৈরি করে কতসংখ্যক অপরাধ হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গত সাত মাসে মব-সহিংসতা ও গণপিটুনির অন্তত ১৭৩টি ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭৯ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১৫৮ জন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আইন হাতে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ আক্রমণ ও বিশৃঙ্খলার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছে, যা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। উপরন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও কখনো কখনো মবের শিকার হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে কখনো কখনো নিজেদের বাঁচাতে অপরাধ দমনের চেষ্টা না করে তাঁরাও ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন।
সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটেছে রংপুর জেলার তারাগঞ্জে। ৯ আগস্ট সেখানে ভ্যানচোর সন্দেহে দুই নিরপরাধ মানুষ—রূপলাল দাস (৪০) ও প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক প্রদীপ লালকে (৩৫) গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলেও ‘মবের ভয়ে’ তাঁদের উদ্ধার না করে ফিরে যায়। ঘণ্টাখানেক পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই একজন মারা যান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা পর অন্যজনও মারা যান।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক বছর পরও কেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলো না, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অপরাধে জড়িত ব্যক্তি বা তখনকার সুবিধাভোগীদের আইনের আওতায় আনতে বেশ কিছু সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ হয়েছে। তবে এই প্রতিবাদগুলো পরবর্তী সময়ে যখন সহিংস রূপ নিল, তখনো কেন থামানো গেল না—সেই আলোচনাও রয়েছে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্তমানে তারা মবের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ভূমিকায় আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, শুরুতে মব নিয়ন্ত্রণে বল প্রয়োগ করার মতো মনোবল পুলিশের ছিল না। একদল ছাত্র আসতে দেখলে পুলিশ পালিয়ে যেত। পরে অবশ্য বেশ কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ায় মব সৃষ্টি এখন কমে এসেছে।
খুন, ডাকাতি ও অপহরণপুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এক বছরে ঢাকাসহ সারা দেশে ৩ হাজার ৮৬৬টি খুনের মামলা হয়েছে। এর আগের বছর ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত খুনের ঘটনায় মামলা হয় ২ হাজার ৯৭৫টি।
তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক ঘটনায় ৬৩৭টি হত্যা মামলা হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর। এসব মামলা বাদ দিলে গত এক বছরে হত্যা মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ২২৯।
আইজিপি প্রথম আলোকে বলেন, খুন বেশি হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। তবে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ৮৩৪ জন শহীদ হয়েছেন। এসব ঘটনায় আগস্ট মাসে কোনো মামলা হয়নি। সেই শহীদদের মামলাগুলো এখন হচ্ছে। এ ছাড়া ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একশ্রেণির লোক থানায় অভিযোগে নিয়ে যেতে পারত না। অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে তাদের জামায়াত-বিএনপি বলে ধরে ফেলত। আগের ক্রসফায়ারের ঘটনায়ও এখন মামলা হচ্ছে। এ ছাড়া আগের সরকারের সময় অনেক মানুষ গুম হয়েছে। এখন সেসব ঘটনায় অপহরণের মামলা হচ্ছে। গুম কমিশন থেকে এ রকমের ১৬০টি ঘটনা পাঠানো হয়েছে। সেগুলো ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গত বছর র ত এক বছর র ঘটন য় অপর ধ র র অপর ধ বছর র জ হয় ছ ন সরক র আগস ট ক বছর
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।