আক্কেলপুরের তিলকপুরে মেয়েদের এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে দুই জেলার ক্রিকেট দলের খেলার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়। এতে বাদ সাধেন স্থানীয় কিছু লোক। মাঠে ভাঙচুর চালালে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠলে ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান হামলাকারীরা। পরে একই উপজেলার আরেক মাঠে হয়ে গেল মেয়েদের ব্যাট-বলের জমজমাট লড়াই।
উপজেলায় তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে নারী (প্রমীলা) ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল রোববার এ আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মূল উদ্দেশ্য নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নারীদের এগিয়ে নেওয়া। সরকারি ফজর উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনূর্ধ্ব-১৭ বালিকা গ্রুপের এ খেলায় অংশ নেয় দুই দল।
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ভানুরকান্দা উচ্চ বিদ্যালয় ও পৌরসভার আক্কেলপুর সরকারি ফজর উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় দলের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৯ উইকেটে ৯ বল হাতে রেখে ভানুরকান্দা উচ্চ বিদ্যালয় দল চাম্পিয়ন হয়েছে। তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে নারীদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা গত ৩০ নভেম্বর শুরু হয়েছে, চলবে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
সরকারি ফজর উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রিমা তাসনিম মহিনীর ভাষ্য, ‘আমরা ক্রিকেট দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই, আরও বড় পর্যায়ে খেলতে। নারীরা পেছনে থাকবে না, নারীরাও এগিয়ে যাবে।’ একই বিদ্যালয়ের জান্নাতুন ফেরদৌস বলছিল, ‘আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর রহমানের মেয়ে প্রমীলা ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, খেলায় মেয়েরা আন্তর্জাতিকভাবে সাফল্য অর্জন করছে। স্থানীয়ভাবে প্রশাসনের সহযোগিতায় খেলাধুলা আয়োজনের কারণে তাদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।
জানা গেছে, গত ২৯ জানুয়ারি জয়পুরহাট ও রংপুর নারী দলের ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা ছিল। মাইকিং করে প্রচারও করেন আয়োজকরা। এতে স্থানীয় ‘আলেম সমাজ ও মুসল্লিরা’ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা আগের দিন ২৮ জানুয়ারি বিকেলে উপজেলার তিলকপুর রেলস্টেশনের সামনে স্বাধীনতা চত্বরে জড়ো হয়ে নারীদের খেলা নিয়ে আপত্তি তুলে বক্তব্য দেন। এর পর সেখান থেকে গিয়ে খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে সরকার এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত দল গঠন করা হয়। এ নিয়ে গণশুনানি হলে অনুতপ্ত হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন তিলকপুরের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, স্থানীয় বাচ্চাহাজি মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকসহ স্থানীয় আলেমরা।
গোপীনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সদস্য আব্দুল বাছেদ বলেন, মেয়েরা খেলাধুলায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মান বয়ে আনছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা শরীর ও মন ভালো রাখে।
ইউএনও মনজুরুল আলম বলেন, উপজেলার নারী খেলোয়াড়রা বাধাহীনভাবে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখবে। তিলকপুরে খেলার মাঠে নিছক ভুল বোঝাবুঝি থেকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। তারা ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাওয়ায় সেটি ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত লকপ র উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।