বগুড়া জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি সাত দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। 

রোববার রাতে বগুড়ার পর্যটন মোটেলে নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে বগুড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় কথা কাটাকাটি ও তুমুল হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। পরে কমিটি স্থগিতের সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বগুড়া জেলা শাখার ৩৩৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে চাঁদাবাজ, অছাত্র, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লেজুড়বৃত্তিতে জড়িত ব্যক্তিরা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। শনিবার তারা সংবাদ সম্মেলন করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই কমিটি বাতিলের সময় বেঁধে দেন।

এদিকে রোববার বগুড়া পর্যটন মোটেলে নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভায় কেন্দ্রীয় নেতা সাকিব মাহাদীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সেখানে যায়। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা গাজী সালাউদ্দীন তানভীর ও বগুড়া জেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরাও সেখানে যান। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে কমিটি বাতিল করার দাবি জানান এবং ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেন। এ সময় কথা কাটাকাটি ও তুমুল হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে হাসনাত আবদুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সদ্যঘোষিত বগুড়া জেলা কমিটি সাত দিনের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দেন। 

শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান সাহেদ বলেন, পর্যটন মোটেলে সন্ধ্যায় পূর্বনির্ধারিত নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভা ছিল। সেখানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিতর্কিত কমিটির সদস্যদের ডাকা হয়েছিল। প্রতিবাদে জুলাই আন্দোলনে যুক্ত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে বিতর্কিতদের নিয়ে সভা করার প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতারা সদ্যঘোষিত বগুড়া জেলা কমিটি সাত দিনের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দেন। তারা সংশোধিত কমিটি ঘোষণা করবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন।

তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি বগুড়া জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির কোনো সদস্য।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেলের অনুমোদন দেওয়া বগুড়া জেলা কমিটিতে সরকারি আজিজুল হক কলেজের মাহমুদুল হাসানকে আহ্বায়ক ও সরকারি শাহ সুলতান কলেজের সাকিব খানকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। গাবতলীর সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের আজিম উদ্দিনকে মুখ্য সংগঠক ও সরকারি আজিজুল হক কলেজের মো.

আইয়ুবকে মুখপাত্র পদ দেওয়া হয়। ছয় মাস মেয়াদি কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্যসচিব রাখা হয়েছে ২৬ জন করে। ২৫ জনকে সংগঠক ও ২৫৪ জনকে সদস্য করা হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক কম ট র কল জ র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গভীর রাতে থানায় গিয়ে স্বামীর আত্মসমর্পণ, পরে ভাড়া বাসা থেকে স্ত্রীর লাশ উদ্ধার
  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা